ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমরা সৃষ্টি করছি, আর উনি সব কিছু ধ্বংস করে যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৯ মার্চ ২০১৫

আমরা সৃষ্টি করছি, আর উনি সব কিছু ধ্বংস করে যাচ্ছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা-ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এবং জঙ্গীবাদবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টি করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা সৃষ্টি করছি, আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ধ্বংস করছেন। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছি, আর উনি জঙ্গী ও সন্ত্রাসের নেত্রী হয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন আর সবকিছু ধ্বংস করে দিতে চাইছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গীবাদী ও সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। যারা এ সব নাশকতা-সহিংসতা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের কাউকেই ক্ষমা করা হবে না। সারাবিশ্বে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের যেমন বিচার হয়, বাংলাদেশেও তেমনিভাবেই বিচার করা হবে। কাউকেই রেহাই দেয়া হবে না। তিনি পুনর্বার নাশকতা-সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের ধরে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে দল (বিএনপি-জামায়াত) মানুষ পুড়িয়ে মারে, দেশকে ধ্বংস করেÑ সেই দলকে দেশের মানুষ কেন সমর্থন করবে? ওই দলকে কীভাবে মানুষ ভোট দেবে? শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নে বিশ্বাসী কোন মানুষই ওই দলকে সমর্থন বা ভোট দিতে পারে না। তাই এ অপশক্তি সম্পর্কে সবাইকে সজাগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান সিরাজ ও আমিনুল ইসলাম আমিন। ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিলের পরিচালনায় সভার শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরাবতা পালন করা হয়। দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গীবাদের স্থান হতে পারে না। এজন্য দরকার জনমত সৃষ্টি করা। দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের এ সব নাশকতা-সহিংসতা ও জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এজন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী মহিলা লীগসহ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীদের জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে হবে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। এক্ষেত্রে যারা বোমা মারবে, আগুন দেবে, তাদের পুলিশে ধরিয়ে দিন। আইন প্রয়োগকারীদের হাতে সোপর্দ করুন। কেউ দেশের ক্ষতি করলে তার কোন ক্ষমা নাই। জঙ্গীবাদের শাস্তি অবশ্যই হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া জ্বালাও-পোড়াও করে নিজের দুর্নীতি মামলা থেকে রেহাই পেতে চান, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চান। কিন্তু এ সব করে কোন লাভ হবে না। এভাবে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে আপনার শেষ রক্ষা হবে না। বাংলাদেশে নৈরাজ্য-জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না এমন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আসলে বাংলাদেশের উন্নয়ন তার সহ্য হয় না। তার দিলেতো আছে পেয়ারে পাকিস্তান। তার দেহ এদেশে থাকলেও হৃদয় তো ওই দেশে! এ কারণেই বাংলাদেশের উন্নয়ন ঠেকাতে তিনি জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসের রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একটানা তিনি কার্যালয়ে বসে থেকে এ সব করছেন। কে আছে যে নিজের বাড়ি-ঘর রেখে অফিসে বসে থাকেন এতোদিন? আর ওই অফিসে বসে তিনি মানুষ হত্যার হুকুম দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, যিনি এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, তার (খালেদা জিয়া) কী অধিকার আছে এ দেশে রাজনীতি করার? প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি আইন আদালত, সংবিধান কিছুই মানেন না। আদালত তো তাকে ফেরার ঘোষণা করেছে। আদালত ও সংবিধানের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে উনি আত্মসমর্পণ করতেন। ক্ষমতায় থাকতে এতিমের টাকা মেরে খাবেন, আর এখন দুর্নীতির মামলায় আদালতে যাবেন না কেন? আদালতে যেতে ভয় পান বলেই জ্বালাও-পোড়াও করে উনি মানুষ মারছেন। কিন্তু এ সব করে পার পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, যে নেত্রীর নিজের ছেলের প্রতি এতটুকু দয়া মায়া নেই, উনি দেশের মানুষকে কী দেবেন? দেশের মানুষের প্রতি তার কোন দয়া-মায়া থাকবে না এটাই তো স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের কায়দায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও জঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া দেশে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনের নামে একের পর এক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে যাচ্ছেন। আন্দোলন-অবরোধের নামে তারা এ সব সন্ত্রাসী কর্মকা-ে দেশের মানুষ এমনই ত্যক্ত-বিরক্ত যে, তারা খালেদার এ সব ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি তার দলের নেতাকর্মীরাও হরতাল-অবরোধ মানে না। এ সব দেখেও কী খালেদা জিয়ার বোধদয় হবে না? তিনি কী বাড়ি ছেড়ে অফিসে বসে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার হুকুম দিয়েই যাবেন? এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে যখন দেশের ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিতে শুরু করবে, তখন থেকেই তিনি (খালেদা জিয়া) হরতাল ডাকা শুরু করলেন। যেন পরীক্ষায় বাধা দেয়াই তার কাজ। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন জাতির পিতার আদর্শে দেশ গঠন করে যাচ্ছি, দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি, তখন তার কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছে যেন এ উন্নয়ন এবং এ দেশ গঠনে বাধা দেয়া খালেদা জিয়ার কাজ। বঙ্গবন্ধু জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে হলে শিক্ষিত জাতি দরকার। সেই আদর্শে আমরা শিক্ষার হার বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সে সব ভ-ুল করে দেন। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেন। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, পড়াশোনা যেন খালেদা জিয়ার মোটেই পছন্দ নয়। আমরা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিই। খালেদা জিয়া সেই বই পুড়িয়ে ফেলেন। তিনি কেবল বই পোড়ান না, পেট্রোলবোমা-ককটেল মেরে নিষ্পাপ শিশুদেরও পুড়িয়ে মারেন। এ সব ঘটনা দেখলে কোন বাবা-মা চাইবেন তার ছেলেমেয়েকে স্কুলে দিতে? সেখানেই যেন খালেদার সফলতা! আমরা সাধারণ মানুষের জন্য রেলওয়ের উন্নয়ন করলাম, তিনি এ রেলওয়ের ওপরও অন্তত ৩৬ বার আক্রমণ করেছেন। যারা বাস-ট্রাকের ব্যবসা করে এমনকি ড্রাইভার-হেলপার তাদেরও পুড়িয়ে মারছেন তিনি। কোন মানুষ যেন শান্তিতে না থাকতে পারে সেটা নিশ্চিত করাই যেন তার কাজ। আমরা চাই মানুষকে শান্তিতে রাখতে, কিন্তু সেটা তার সহ্য হয় না। কী ক্ষোভ তার মানুষের ওপর? উনি মনে হয় পুরো দেশের মানুষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন!
×