ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পেট্রোলবোমা হামলা অপারেশনের এরাই কমান্ডার ;###;এ যাবত গ্রেফতারকৃত সাড়ে ৩শ’ শিবির নেতাকর্মীর মধ্যে একজনও নেই ‘সাথী’

শিবিরের হাজারেরও বেশি ‘সাথী’ হঠাৎ করে অদৃশ্য!

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৯ মার্চ ২০১৫

শিবিরের হাজারেরও বেশি ‘সাথী’ হঠাৎ করে অদৃশ্য!

শংকর কুমার দে ॥ হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে গেছে জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্র শিবিরের সহস্রাধিক ভয়ঙ্কর ‘সাথী’ ক্যাডার। ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা। কোথায় উধাও হয়েছে তারা, পুলিশের অজানা। তারা গা- ঢাকা দেয়ায় থেমে গেছে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাস। বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল শিবিরের সহস্্রাধিক সাথী ক্যাডার। এই খবর দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, আত্মগোপনে থেকে চোরাগুপ্তা হামলা করে সারাদেশে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও নাশকতামূলক কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিচ্ছিল সাথী ক্যাডাররা। আধুনিক পোশাক পরে বেশভূষা পাল্টে ফেলায় পারদর্শী তারা। ফলে তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাথীরা দলীয় কর্মকা-ের আলোচনার জন্য মোবাইল ফোনও ব্যবহার করেন না। সদস্য, কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করে নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা করছে তারা। গত আড়াই মাসে রাজধানীতে শিবিরের সাড়ে ৩শ’ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এদের মধ্যে একজন সাথীও গ্রেফতার হয়নি। তাহলে তারা উধাও হয়েছে কোথায়? এই প্রশ্ন গোয়েন্দা সংস্থার। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চোরাগুপ্তা হামলা হোক আর প্রকাশ্যেই হোক, যারাই সন্ত্রাস ও নাশকতা কর্মকা-ে জড়িত তাদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত। শিবিরের সন্ত্রাসীরা এখন ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত। বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার মতো ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকা- চালানোর পর এখন গা-ঢাকা দিয়েছে শিবিরের সন্ত্রাসীরা। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করা অব্যাহত আছে গোয়েন্দা সংস্থার। এই পর্যন্ত যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে রয়েছে শিবিরের সহস্রাধিক সাথীর নাম। কিন্তু যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে, শিবিরের সাথী পরিচয় দেয়নি তারা। সংগঠনের পরিচয় লুকিয়ে ব্যক্তিগত পরিচয় দিয়ে নিজেদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে এসব সাথী ক্যাডার। তবে তদন্তে তাদের প্রকৃত পরিচয় উদঘাটন হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা চালানোর সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া শিবির কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে হলে প্রথমে তাকে হতে হবে ‘দাওয়াত প্রাপ্তি’। ছাত্রশিবিরের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। দাওয়াত প্রাপ্তির কাজে সন্তুষ্ট হওয়ার পর ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর তার কাজের ওপর ভিত্তি করে হন ‘কর্মী’ পদধারী। দুই থেকে তিন বছর কর্মী থাকার পর পরীক্ষার ভিত্তিতে তাকে ‘সাথী’ পদে নিযুক্ত করা হয়। শিবিরের একটি ইউনিটে থাকে শতাধিক কর্মী ও দাওয়াত প্রাপ্তি। একজন সাথীর অধীনে থাকেন তারা। সাথীরা সংগঠনে অপারেশন কমান্ডার হিসেবে কাজ করেন। একজন শিবির কর্মী ‘সাথী’ পদে নিযুক্ত হওয়ার পর তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় অজ্ঞাত স্থানে। ঐ প্রশিক্ষণে শিবিরের একাধিক সাথী অংশ নেয়। বিপরীত সংগঠনকে দমন করতে প্রতিশোধমূলক কর্মকা- পরিচালনা করার কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় প্রশিক্ষণ শিবিরে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার কৌশল সম্পর্কে দলীয় কর্মী ও দাওয়াত প্রাপ্তিদের শিখিয়ে দেয় শিবিরের সাথীরা। রাজপথে শিবিরের ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকা- পরিচালনা করার সময় একজন নেতা কর্মীদের চাঞ্চল্য রাখতে বিভিন্ন সেøাগান দেন। সেøাগান দেয়া ঐ ব্যক্তিরাই সাধারণত হয় সাথী। পুলিশ সূত্র জানিয়েছেন, গত ২২ জানুয়ারি মহাখালীর একটি মেস থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় শিবিরের চার নেতা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩০টি ককটেল, দুই লিটার পেট্রোল, বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত ১০ কেজি পাথরের গুঁড়া, ১ কেজি গানপাউডার ও তিন কেজি ধারালো চারকোণবিশিষ্ট প্যারেক। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-শিবিরের বনানী থানার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (২৩), কর্মী জয়নাল আবেদিন (২০), আরিফুজ্জামান আরিফ (১৮), আতিয়ার রহমান (২২) ও খালিদ সাইফুল্লাহ (১৯)। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সন্ত্রাস ও নাশকতার জন্য ধ্বংসাত্মকমূলক কর্মকা- পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ‘সাথী’ পদধারী একজন নেতা। পুলিশ অভিযান চালানোর আগেই তাদের নেতৃত্বদানকারী সাথী নেতা মেস থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ভাষানটেকের একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় শিবিরের ১২ নেতাকর্মীকে। পুলিশ উদ্ধার করে ১টি পেট্রোলবোমা, ২ টি ককটেল, পেট্রোলভর্তি প্লাস্টিক বোতল ২টি, স্পিরিট জাতীয় তরল পদার্থ ভর্তি ছোট বোতল ১টি, জামায়াত-শিবিরের ইসলামী সংগঠনের বই ৬০ টিসহ শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকা-ের গোপন তথ্য ফাইল। ঘটনাস্থল থেকে শিবিরের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের মধ্যে কেউই ‘সাথী’ পদধারী নেতা নেই। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর এ্যাকশনের মুখে উধাও হয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে এবং জনরোষে গণপিটুনির ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্যাডাররা। আত্মগোপনে চলে গেছে সঙ্গে শিবিরের সাথীরাও। তবে শিবিরের সাথী-সহ সন্ত্রাসীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক তাদের খুঁজে বের করে আনার অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে সহিংস সন্ত্রাস কঠোর হস্তে দমন করা হয়েছে। চলতি মার্চ মাসে গত ১৫ দিনের মধ্যে দেশের কোথাও বড় ধরনের পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটতে দেয়া হয়নি। সারাদেশে জঙ্গী কায়দায় যেসব যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শিবিরের ক্যাডারের মধ্যে যারা তালিকাভুক্ত আসামি এবং সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর অভিযোগে মামলা দায়ের করার পর আসামি হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনাসহ পেট্রোলবোমা, বোমা, ককটেল, বোমা তৈরির বিস্ফোরক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারাভিযান চালানো হচ্ছে। এ কারণে অবরোধ-হরতালের নামে যারা নাশকতা ও সন্ত্রাস করেছে তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। এই জন্যই উধাও হয়ে গেছে শিবিরের ভয়ঙ্কর সাথীরাও।
×