ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আগরতলা থেকে আসা বিষাক্ত পানি ॥ সীমান্তের ১৫ গ্রাম দূষিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৯ মার্চ ২০১৫

আগরতলা থেকে আসা বিষাক্ত পানি ॥ সীমান্তের ১৫ গ্রাম দূষিত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ বিষাক্ত পানি। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামবাসী। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কয়েক দশক ধরে নামছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে। আগরতলা শহরের বিষাক্ত পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী ১৫টি গ্রামের বাসিন্দার স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে চর্মরোগ। আখাউড়ার সিএ্যান্ডবি খাল আর জাজি নদী দিয়ে আসছে বিষাক্ত এ পানি। কুচকুচে কালো আর উৎকট গন্ধে জনজীবন দুর্বিষহ। এ পানি দিয়েই অন্তত ১৫ শ’ হেক্টর জমির ধান চাষ হচ্ছে। এতে জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। বিষাক্ত পানি নদীতে মিশে যাওয়ায় পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে আগরতলা শহরের পয়ঃপ্রণালী ও স্থানীয় শিল্প কারখানার বর্জ্যই মূলত এখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তুলনা মূলকভাবে উঁচু স্থান হওয়ায় সহজে বাংলাদেশের খাল দিয়ে নামছে এ পানি। প্রশাসন বলছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই ভারত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তখন এ সমস্যা কেটে যাবে। স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে সিএ্যান্ডবি খাল দিয়ে নামছে এ পানি। সীমান্তের কালিকাপুর গ্রামের জাজি নদী দিয়েও আসছে বিষাক্ত পানি। এ পানি দিয়ে উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়ন, মোগড়া ইউনিয়ন ও আখাউড়া পৌরসভারও কিছু জমিতে ধান চাষ হচ্ছে। গ্রামবাসী জানিয়েছে পানির উৎকট গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ। বিজিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জওয়ানরা বলেন, তাদের ক্যাম্পে ডিউটি করতে মারাত্মক অসুবিধা হয়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষাক্ত পানির প্রভাবে শ্বাসকষ্ট আর চুলকানির প্রকোপ বাড়ছে। এ পানি মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা আর নয়াদিল দিয়ে আসার পাশাপাশি পৌরশহরের তারাগন হয়ে দেবগ্রাম দিয়ে এবং শহরের প্রধান সড়কের পাশ ধরে নেমে এসে মিশে যাচ্ছে তিতাস নদীতে। এতে নদীর মাছ ও জলজ প্রাণি, বিস্তীর্ণ এলাকার ধানি জমি ও প্রাকৃতিক ও জলজ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ খাল প্রায় ৭ কিলোমিটার লম্বা। জিরো পয়েন্ট থেকে কয়েকটি গ্রাম পার হয়ে তিতাস নদীতে খালটি পড়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ডক্টর মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমাদের উদ্বিগ্নের কথা ভারতকে জানিয়েছি। ভারত আশ্বস্ত করেছে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করবে। তারা ইটিপি প্লান্ট স্থাপন করবে। তখন আর বিষাক্ত বর্জ্য বাংলাদেশে আসবে না। আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আহসান হাবীব বলেন, কৃষি, বন ও পরিবেশ এবং মৎস্য বিভাগ প্রাথমিক কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাতে ভারতের এ পানিতে আখাউড়ার সীমান্তবর্তী দুইটি ইউনিয়ন আর পৌরসভার একটি অংশে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আখাউড়া কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্রায় ১৫শ‘ হেক্টর জমিতে এই কালো পানি দিয়ে ধান চাষ হয়। উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের ধানি জমি বেশি। মোগড়া ইউনিয়ন ও আখাউড়া পৌরসভারও কিছু জমি আছে। নদী ও খাল থেকে মেশিনে জমিতে পানি দেওয়ার সময় মাথা সমান উচুঁ ফেনা হয়। ওই ফেনা আর কালো পানি ধানগাছের পাতায় লাগলে গাছ লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। সেচের পানি যেখানে প্রথম পড়ছে সেখানকার ধানগাছ পুড়ে গেছে।
×