ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডের ১১ লাখ পিস ভেজাল বিদেশী কসমেটিক্স উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১৯ মার্চ ২০১৫

বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডের ১১ লাখ পিস ভেজাল বিদেশী কসমেটিক্স উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোবরা, হগো, ফগ, ব্রুট, ম্যাক্স, একুয়াজিস,ব্লু লেডি ও বস। এগুলো বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স। বিদেশী পণ্য। এদেশে বৈধভাবে আমদানি করা হয় না। দেশের অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে যেগুলো মেলে, তাও অবৈধ। প্রতারক ও ভেজালকারীরা ঠিক এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে। এসব বিদেশী পণ্য ভাল না মন্দ, নকল না আসল, যাচাই-বাছাই করার কোন উপায় থাকে না। তারপরও শুল্ক গোয়েন্দা অন্য একটি চোরাইপণ্যের গুদামে হানা দিয়ে পেয়ে যায় এসব পণ্যের মজুদ; যা অনেকটা ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বেরিয়ে আসার মতো ঘটনা। সিদ্ধিরগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠানে শুল্ক গোয়েন্দা ও র‌্যাব হানা দিয়ে এ ধরনের প্রায় এক ডজন ব্র্যান্ডের ১১ লাখ পিস বিদেশী কসমেটিক্স উদ্ধার করে। যার বাজারমূল্য কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বেলায়েত হোসেন বেলাল নামের মালিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়। একমাত্র আসামি প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বেলাল। তার অন্য অফিসের ঠিকানা ৬ ডিআইটি এ্যাভিনিউ, দ্বিতীয় ফ্লোর, মতিঝিল, বাণিজ্যিক এলাকা। পুুলিশ জানায়, বাজারের বড় বড় বিপণিবিতানে কি পরিমাণে এ ধরনের পণ্য আছে সেটা এ থেকেই অনুমেয়। ইতোমধ্যে বাজারে ছাড়া হয়েছে আরও প্রায় লাখখানেক পণ্য। গত কয়েক বছর ধরে বেলাল এ ধরনের ভেজাল পণ্যের ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মগবাজারের শুল্ক গোয়েন্দা সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত ছিলেন মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান ও র‌্যাব ১০-এর এএসপি নাজমুল হাসান। এ সময় সাংবাদিকদের জানানো হয়, ঘটনাস্থল সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার মুনস্টার মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য মজুদ করা হয়। এ জন্য সেখানে তল্লাশি করে প্রতিষ্ঠানের সীমানার অভ্যন্তরে দুটি পণ্যাগার হতে বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কসমেটিক্সের খালি কন্টেনার এবং কসমেটিকস পাওয়া যায়। এসব খ্যাতিসম্পন্ন ব্র্যান্ডের কসমেটিক্সের গায়ে পণ্যের কান্ট্রি অব অরিজিন অর্থাৎ যে দেশে পণ্য তৈরি তার নাম মুদ্রিত। যেমন, কোবরার বডিতে মেড ইন ফ্রান্স লেখা । এই খালি কন্টেনারের বডিতে উৎপাদিত পণ্যের দেশ হিসেবে বিভিন্ন দেশ উল্লেখ আছে, যা বিভ্রান্তিকর ট্রেড হিসেবে বিবেচিত। এ সম্পর্কে ড. মইনুল খান বলেন, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কসমেটিক্সের খালি কন্টেনার চোরাইপথে আমদানি করার পর সেগুলো ওই প্রতিষ্ঠানে রিফিল করে দেশী বড় বড় শপে বাজারজাত করা হয়। বিলাসবহুল এই পণ্যের বডি দেখে কারো পক্ষে চেনা ও বোঝা দায়। চীন থেকে আমদানি করা খালি কন্টেনারে দেশীয় নিম্নমানের কসমেটিক্স ভর্তি (রিফিল) করে বিদেশী দামে বিক্রি করা হয়। আসলে এসব পণ্য যে কতট খারাপ ও ভয়ঙ্কর সেটা যারা ব্যবহার করে তারাই টের পায়। আসলে এসব পণ্য দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। বাছাইকৃত পণ্যসমূহের মধ্যে রয়েছে এক্স এবং ব্রুট; যার ট্রেড মার্কের স্বত্বাধিকারী হচ্ছে ইউনিলিভার। জানা যায়,গত ৪ মার্চ ওই গুদামে হানা দিয়ে ভেজাল কসমেটিক্স পণ্যের সন্ধান পেলেও তখন মাালিক বেলায়েত দাবি করেছিল, এসব পণ্যের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। সেজন্য শুল্ক গোয়েন্দা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তারপর ওই পণ্যের কেমিক্যাল টেস্ট করার পর ভেজাল প্রমাণিত হওয়ার পর সেখানে হানা দিয়ে সব পণ্য জব্দ করা হয়। তবে বেলায়েতকে আটক করা যায়নি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মইনুল খান বলেন, এ ধরনের আরও কারখানা সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। চীন থেকে এসব বিদেশী পণ্যের নামে খালি কন্টেনার কিভাবে-কোন্ পথে আনা হচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×