ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তৃণমূলে খেলাধুলা

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২০ মার্চ ২০১৫

তৃণমূলে খেলাধুলা

শরীর-মনের প্রফুল্লতার জন্য খেলাধুলার চেয়ে ভাল কিছু আর নেই- তবে প্রতিষ্ঠিত এ সত্যটি আজ যেন কেউ মনে রাখেন না। সবাই ছুটছে সোনার হরিণের পেছনে। নতুন প্রজন্ম কী শিখছে কিভাবে সময় পার করছে- এসব নিয়ে অভিভাবকদের তেমন একটা মাথা ঘামান না। তরুণ প্রজন্মের সামনে আদর্শ স্থাপনে ব্যর্থ হলে, তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকা- আর খেলাধুলায় যুক্ত না করা গেলে শেষ পর্যন্ত তা সমাজের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে, সেকথা আমরা দিব্যি ভুলে বসে আছি। হতাশার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ আশার আলো কাউকে না কাউকে জ্বালাতেই হয়। বছরের শুরু থেকেই দেশের খেলাধুলার ক্ষেত্রে আমরা সুসংবাদ পাচ্ছি। ফুটবলামোদী মানুষের জন্য আশা ও আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে এসেছিল দেড় দশক পরে আবার শুরু হওয়া বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। এ টুর্নামেন্ট সর্বশেষ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সেটি ছিল দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কাপ। আরও একটি সুখবর মিলল সম্প্রতি। তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের ৪৮৭ উপজেলার প্রত্যেকটিতেই কমপক্ষে একটি করে খেলার মাঠে স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে। স্টেডিয়াম মানেই হলো ক্রীড়াকে উৎসবে পরিণত করার জমজমাট আনুষ্ঠানিকতা। বহু ক্রীড়ামোদী মানুষের একসঙ্গে খেলা উপভোগের অতীব সুন্দর ব্যবস্থা। এর ফলে খেলাধুলার চর্চা ও অনুশীলন সাধারণভাবে বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করতে পারি উপেক্ষিত বিভিন্ন ধরনের খেলা পুনরায় ফিরে পাবে তার যথাযথ আসন। বলাবাহুল্য ফুটবলই বাংলাদেশের মানুষের আসল খেলা। সেই সব অতীত দিনের কথা আজকাল যেন বিশ্বাসই হতে চায় না। গ্রামবাংলার এমন কোন পল্লী অঞ্চল খুঁজে পাওয়া যেত না যেখানে বছরে অন্তত একবার ফুটবলকেন্দ্রিক কোন বিশেষ প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো না। এক গ্রামের সঙ্গে ভিন্ন গ্রাম, গ্রামের একটি হাই স্কুলের সঙ্গে পাশের গ্রামের কোন হাই স্কুলের ছেলেদের জমজমাট ফুটবল খেলা হতো। সে এক হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। উৎসাহ, উদ্যম, উদ্দীপনায় ভরপুর এক লড়াই। খেলা সে তো খেলা নয়, রীতিমতো যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ভেতর কী বিপুল আনন্দ আর বিনোদন পোরা থাকত, হাসি থাকত রাশি রাশি। ছিল বড় বড় খেলার মাঠ। এখন কী শহর, কী গ্রাম সর্বত্রই খেলার মাঠের সংখ্যা শোচনীয়ভাবে কমে এসেছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিআইএস (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্যই ছিল সারাদেশ থেকে প্রতিশ্রুতিশীল ক্রীড়া প্রতিভা খুঁজে বের করা এবং তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ক্রীড়াবিষয়ক শিক্ষাদান ও ডিগ্রী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা প্রদানের সুব্যবস্থা করা। পঁচাত্তরের পর প্রতিষ্ঠানটি ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিকেএসপি’ নাম ধারণ করে। যদিও তা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে পারেনি। লাখো নবীন খেলোয়াড়ের জন্য একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান কাক্সিক্ষত সুফল অর্জনে কখনই সহায়ক হতে পারে না। প্রয়োজন তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করে তরুণদের উৎসাহিত ও সংযুক্ত করা। তবে আশার কথা দেরিতে হলেও সে লক্ষ্যেই সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা আশা করতে পারি এর মাধ্যমে আগামীতে সেই আগের মতোই গোটা দেশ থেকে নবীন-তরুণ কৃতী খেলোয়াড়দের জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনা সম্ভব হবে। আর এটা বাস্তবায়িত হলে ক্রীড়ার নানা ক্ষেত্রে আমরাও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম অর্জন করতে পারি।
×