ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চরম অযতœ ও অবহেলার ছাপ

সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি বনাঞ্চল ॥ বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২০ মার্চ ২০১৫

সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি বনাঞ্চল ॥ বিপন্ন জীববৈচিত্র্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, ১৯ মার্চ ॥ বরগুনার তালতলী উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিশানবাড়িয়া ও নিদ্রাছকিনা নৈসর্গিক প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য। বন বিভাগের চরম অযতœ আর অবহেলায় সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ইকোট্রারিজম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। পটুয়াখালী বন উপ-বিভাগীয় তালতলী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির ওপর এ উপকূলীয় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এ বনে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, বাবুল, মেহগনী, তুলা, গোল, রেনন্ট্রি, আকাশমনি ও বটসহ হরেক প্রজাতির গাছ রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ লীলাভূমি এ বনাঞ্চল। এ বনাঞ্চলে রয়েছে সোনকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইকোট্রারিজম। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বঙ্গোপসাগরে কোল ঘেঁষা এ বনাঞ্চলের বৈশিষ্ট হচ্ছে দক্ষিণে সাগর, পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদী, উত্তরে তালতলী ও আমতলী উপজেলা। বনাঞ্চলের ভেতরে ৯টি খাল রয়েছে। শীত মৌসুমে নৌ-ভ্রমণে শত শত পর্যটকরা এখানে আসে। বসে পিকনিকের উৎসব। নিদ্রাছকিনা টেংরাগিরি বিটে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং আমতলী উপজেলা পরিষদ ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছে সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইকোট্রারিজম। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইকোট্রারিজমটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বর্তমানে ইকোট্রারিজমটিতে রয়েছে ২টি কুমীর, ৯টি হরিণ, ২৬টি শুকর ও ১টি মেছোবাঘ। সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইকোট্রারিজমটির বন্যপ্রাণির জীবন বিপন্ন প্রায়। অভিযোগ রয়েছে ২০১২-১৩ সালে আমতলী উপজেলা পরিষদ ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সোনাকাটা ট্যাংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ইকোট্রারিজমের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ নিম্নমানের হয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, প্রাণীদের খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠার ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রাণীদের নিয়মিত খাবার দিচ্ছে না। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অবকাঠামো নির্মাণ নিম্নমানের হওয়াতে বাউন্ডারি প্রাচীর ধসে পড়ছে। লোহার খাঁচাগুলোতে মরচে ধরেছে। পার্কের ভিতরে সুপীয় পানির জন্য টিউবওয়েল বসানো থাকলেও তাতে কোন পানি ওঠে না। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও তা পরিষ্কার পরিছন্নতার অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পর্যটকদের জন্য বসার জায়গা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যে কয়টি রয়েছে তা অপরিছন্ন। বণ্যপ্রাণীদের জন্য নেই কোন ছাউনি। রুগ্ণ হয়ে পড়েছে প্রাণীকুল। এ ইকোপার্কটির দেখাশুনার কাজে নিয়োজিত ৯ জন বন বিভাগের কর্মী আছে। ইকোপার্ক ভ্রমণের জন্য জনপ্রতি ১১ টাকা ৫০ পয়সা ভ্রমণ কর আদায় করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পর্যটক আবুল হোসেন জানান, দু’দিন ইকোপার্ক ঘুরে কোন হরিণের দেখা পাইনি। পর্যটক আবদুর রব বলেন, পার্কের ভিতরের করুন দৃশ্য দেখে মনে হয় এটা কোন অরক্ষিত বনাঞ্চল। পাথরঘাটা থেকে আসা পর্যটক মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, পার্কের মধ্যে কোন সুপীয় পানির ব্যবস্থা নেই। ইকোপার্কে ভ্রমণ কর আদায়কারী ইউনুচ আলী বন্যপ্রাণীদের খাবার সরবরাহের অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদার বিট কর্মকর্তার কাছে প্রাণীগুলোর মাসিক খাবারের টাকা দিয়ে যায়। স্থানীয় বাজার থেকে খাবার ক্রয় করে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পার্কের রাস্তাঘাট, খাবার পানি ও টয়লেটের সমস্যা আছে। নিন্দ্রাসকিনা বিট কর্মকর্তা সজীব কুমার মজুমদার জানান, আমি সদ্য যোগদান করেছি। অনিয়মগুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও জানান, প্রাণীদের খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারের সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। তবে তাড়াতাড়ি দেখা হবে।
×