ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২০ মার্চ ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় খোলাই ছিল। অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। এর পরও বৃহস্পতিবার অঘোষিত ছুটির দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। একই চিত্র ছিল রাজধানী ঢাকায়। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ক্রিকেট, শুধু ক্রিকেট নিয়ে মেতেছিল। হ্যাঁ, এদিন বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে লড়েছে বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ টেলিভিশন সেটের সামনে বসে দেখেছে শহরবাসী। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া খেলা চলেছে বিকেল পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে টিভি সেটের সামনে থেকে খুব কম লোকই সরেছেন। প্রায় প্রতিটি বাসা থেকে বাংলাদেশের পক্ষে স্লোগান হয়েছে। চিৎকার হুল্লোড় লেগেই ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল পরিণত হয়েছিল মিনি স্টেডিয়ামে। এফ রহমান হলের টিভিরুমে গিয়ে দেখা যায়, পুরোটা কানায় কানায় পূর্ণ। বুদ্ধিমানরা খেলা শুরুর অনেক আগেই চেয়ার দখলে নিয়েছিলেন। বাকিরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলা দেখেছেন দাঁড়িয়ে। তাতে কী, উৎসাহে ভাটা পড়েনি এতটুকুও। দলের সমর্থনে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন তাঁরা। নিজ দেশের বোলারদের ব্যাটসম্যানদের সামান্য ভালটুকুও বড় করে বিশাল করে উদ্যাপন করেছেন। যাঁরা চেয়ারে বসেছিলেন তাঁরাও কিছু সময় পর পর লাফিয়ে উঠেছেন। এই আবেগ উচ্ছ্বাসের সত্যি কোন তুলনা হয় না। ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত মানুষ এদিন রাস্তায় তেমন নামেননি। সকলেই টিভি সেটের সামনে বসেছিলেন। ফলে রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ির কোন চাপ ছিল না। ফার্মগেট মোড়ে বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে দেখা যায়, কোথাও যানজট নেই। অলস সময় কাটাচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশরা। এখানেই শেষ নয়, এদিন শেয়ারবাজারেও লেনদেন হয়েছে সবচেয়ে কম। সিরিয়াস বিনিয়োগকারীরাও মেতেছিলেন ক্রিকেট নিয়ে। আর যাঁদের বাইরে না বের হলেই নয়, তাঁরা খেলার ধারাভাষ্য শুনেছেন রেডিওতে। হকার নির্মাণ শ্রমিকসহ অনেকেই নিজেদের মতো করে কাজ করে গেছেন। দেখে মনে হয়েছে এঁরা খেলায় নেই। কিন্তু পরক্ষণেই চিৎকারÑ ‘আউট’। এভাবে ভারতের উইকেট পতনে, বাংলাদেশের চার ছয়ের মারের সময় গোটা শহর আনন্দে ভেসেছে। উত্তেজনায় কেঁপেছে পুরো দেশ। তবে শেষ ভাল হয়নি। ম্যাচ জিতে নিয়েছে ভারত। প্রত্যাশা অনুযায়ী এদিন খেলতে পারেনি বাংলাদেশের ছেলেরা। অভিজ্ঞ ভারতের বিরুদ্ধে তাদের লড়তে হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষ হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলেছেন দুই আম্পায়ার! একজন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের কাছে পরাজিত দেশ পাকিস্তানের নাগরিক আলিম দার। অন্যজন মাত্র কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়া ইংল্যান্ডের বুড়ো ইয়ান গোল্ড। দু’জনই যেন ভারতের অতিরিক্ত খেলোয়াড় হয়ে মাঠে ভূমিকা রাখছিলেন। বিশেষ করে পাকিস্তানের আম্পায়ার আলিম দার ভুল করেছেন নাকি স্বভাব অনুযায়ীই দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধেÑ সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আলিম দারের প্ররোচনায় রুবেলের ফুলটস বলকে ‘নো’ ডেকে বসেন ইয়ান গোল্ড। রুবেল হোসেনের বলে রোহিত শর্মা তাঁর ব্যক্তিগত ৯০ রানে ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান। ফলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রেকথ্রোর আশা ভঙ্গ হয়। এর আগে, মাশরাফির বলে সুরেশ রায়নার এলবিডব্লিউর একটি সিদ্ধান্তও নাকচ করে দেন ইয়ান গোল্ড। একইভাবে ওড়িয়ে মারা একটি বল বাউন্ডারি লাইনে পা ছোঁয়া অবস্থায় তালুবন্দীর চেষ্টা ও পরে তালুবন্দী করেন ধাওয়ান। এ সিদ্ধান্তটিও মারাত্মক বিতর্কিত হয়। সব মিলিয়ে যারপরনাই বাজে আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট। সঙ্গত কারণেই ম্যাচ চলাকালীন শুরু হয়ে যায় প্রতিবাদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলোধুনো করা হয় দায়িত্বজ্ঞানহীন আম্পায়ারদের। আর তারপর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বের করা হয় প্রতিবাদ মিছিল। আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান টাইগার ভক্তরা। এখানেই শেষ নয়, আম্পায়ারদের কুশপুতুলও পোড়ানো হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, কোয়ার্টার ফাইনাল বলে কথা। ডু অর ডাই একটা ম্যাচ ছিল। আমরা যথেষ্ট এগিয়েও ছিলাম। কিন্তু আম্পায়ারদের বাজে ও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আমাদের ক্রিকেটারদের হতাশ করেছে। মনোবলে চিড় ধরিয়েছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, একদিনের একটি ম্যাচে এত ভুল সিদ্ধান্ত কী করে আসে? মেয়েরাও লাল-সবুজে সেজে অংশ নিয়েছিল প্রতিবাদী মিছিলে। তাঁদের একজন নুসরাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খেলে হারলে দুঃখ পেতাম না। আমাদের তো হারিয়ে দেয়া হলো। কুশপুতুল পোড়ানোর মাধ্যমে আইসিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
×