ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ মার্চ ২০১৫

রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ষীয়ান রাজনীতিক, ভাষাসৈনিক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৩ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানতম সহকর্মী হয়ে যে ক’জন কীর্তিমান পুরুষ স্বাধিকার, ভাষার সংগ্রাম, স্বাধীনতা আর সুমহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রভাগ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে জিল্লুর রহমান অন্যতম। একজন স্বেচ্ছাসেবক হয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে দীর্ঘ ৬২ বছরের রাজনৈতিক পথচলায় দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন জিল্লুর রহমান। জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জš§ গ্রহণ করেন। তার বাবা মেহের আলী মিঞা ছিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী এবং তৎকালীন ময়মনসিংহ লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জেলা বোর্ডের সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ এম এ এবং এলএলবি ডিগ্রীধারী জিল্লুর রহমান বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণআন্দোলনে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হন। ১৯৫৬ সালে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও ষাটের দশকে ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক, ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে সংবিধান প্রণয়নে অংশ নেন। একই বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বাকশালের প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। ওই বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর চার বছর কারাবন্দী ছিলেন। আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের পর ১৯৮৪ সালে তিনি আবারও দলের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের কাউন্সিলেও পর পর দুই বার দলের সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০২ সালের কাউন্সিলে সভাপতিম-লীর সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। জিল্লুর রহমান ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ছিলেন তিনি। পাশাপাশি সংসদ উপনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী বিশিষ্ট নারীনেত্রী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বেগম আইভি রহমান ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে তিন দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। পারিবারিক জীবনে জিল্লুর রহমান এক ছেলে এবং দুই মেয়ের পিতা। জিল্লুর রহমানের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বনানী কবরস্থানে সকাল ৯টায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। এছাড়াও জিল্লুর রহমানের পরিবার, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। জিল্লুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ও জনতার প্রত্যাশার যৌথ উদ্যোগে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জিল্লুর রহমানের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্থাপিত জিল্লুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং ভৈরতের বিভিন্ন স্থানে কোরানখানি, মিলাদ, কাঙ্গালীভোজ, তবারক বিতরণ ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
×