ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২১ মার্চ ২০১৫

ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ ভিয়েতনামের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে নতুন করে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা হবে। এই চুক্তির আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হবে ভিয়েতনামে। এছাড়া দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা যাচাই এবং নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান তুলনামূলক সুবিধা ব্যবহারে কার্যকর সরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ জন্য দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা সভা করা হয়েছে। চুক্তি সংক্রান্ত কার্যপত্র তৈরির আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও পর্যালোচনা সভা করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে আগামী জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করবে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, শিল্প খাতের উন্নয়নে পারস্পরিক সহায়তা ও বিনিয়োগের বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। এখন থেকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় জাহাজ নির্মাণ, সিমেন্ট, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ওষুধ, সিরামিক ও চামড়া শিল্প খাতে ভিয়েতনামের উদ্যোক্তারা যৌথ বিনিয়োগ করতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের চমৎকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দ্বিপাক্ষিক পুঁজি বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ চুক্তি, দ্বৈতকর পরিহার চুক্তিসহ অন্যান্য কাঠামোগত সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিল্প, কৃষি, পর্যটন, তথ্য-প্রযুক্তি, শিক্ষা, বিজ্ঞান, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে। এজন্য চুক্তি করা প্রয়োজন। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ-ভিয়েতনামের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি করা হতে পারে। জানা গেছে, ভিয়েতনামের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১২ সালে দেশটি সফর করেছিলেন। ওই সময় বাণিজ্য সংক্রান্ত চারটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ভিয়েতনামের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এছাড়া দুই দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য যাতে বাড়তে পারে সেলক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মূলত এরপর থেকেই দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ছে। জানা গেছে, ১৯৫৪ সালের দেশ বিভাগের পর উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার নিজ নিজ অর্থনীতি বিকাশে আলাদাভাবে মনোযোগ দেয়। ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হওয়ার পর উত্তর ভিয়েতনাম ধীরে ধীরে তার পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গোটা ভিয়েতনামের ওপর প্রয়োগ করে। ১৯৮৬ সালে অবশ্য ভিয়েতনাম সরকার একটি সংস্কার প্রকল্প হাতে নেয়, যার ফলে দেশটি একটি মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে ভিয়েতনামে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। ১৯৯০-এর দশকে ভিয়েতনামের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়। অব্যাহত প্রবৃদ্ধির ফলে ২০০৮ সাল নাগাদ ভিয়েতনামের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দাঁড়ায় ৭০ বিলিয়ন ডলার। এখন মাথাপিছু আয় ৩৫০০ ডলারের মতো। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার ভিয়েতনামের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গেছে, ভিয়েতনাম থেকে প্রধানত আতপ চাল, জ্বালানি তেল, সিদ্ধ চালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে মাছ, পাটজাতপণ্য, পোশাক সামগ্রী, সিমেন্ট, ওষুধ রফতানি করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় জাহাজ নির্মাণ, সিমেন্ট, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিকপণ্য, ওষুধ, সিরামিক ও চামড়া শিল্প খাতে ভিয়েতনামের উদ্যোক্তারা যৌথ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারেন।
×