ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে আ জ ম নাছিরই পেলেন আওয়ামী লীগের সমর্থন

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২১ মার্চ ২০১৫

চট্টগ্রামে আ জ ম নাছিরই পেলেন আওয়ামী লীগের সমর্থন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে দলের চূড়ান্ত সমর্থন পেলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। মনোনয়নবঞ্চিত সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ চট্টগ্রামের নেতারা দলের ঘোষিত প্রার্থী আ জ ম নাছিরের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। প্রকাশ্য ঘোষণা না দিলেও বিএনপি যে আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, এটি নিশ্চিত হয়েই ভোটযুদ্ধের ছক চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। আর সেই ছকের অংশ হিসেবে এবং কোন ধরনের ঝুঁকি না নিতেই আ জ ম নাছিরকে দলের মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে গণভবনে চট্টগ্রামের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে এ প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। আলোচনার পর আ জ ম নাছিরের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে মেয়র প্রার্থী ছাড়াও তিন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলের পদে দলের একক প্রার্থী নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য রাজধানীর ১৫ সংসদীয় এলাকায় ১৫ কমিটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের সকল সংসদীয় এলাকায় একই ভাবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এসব কমিটির নেতৃত্বেই তিন সিটির নির্বাচনী প্রচার কর্মকা- পরিচালিত হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এ কার্যক্রম মনিটর করবেন। বৈঠক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মেয়র প্রার্থী নিয়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দিন ও আবদুচ ছালামের নাম আলোচিত হয়। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আবদুচ ছালামের মধ্যে প্রকাশ্য কোন্দল থাকায় দু’জনের বাইরে কাউকে প্রার্থী করার বিষয়েই মত দেন দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতারা। বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং সর্বোপরি কোন্দল-দ্বন্দ্বের কথা বিবেচনা করেই মেয়র প্রার্থী হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দিনকে বেছে নেয়া হয় বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া আ জ ম নাছির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাতে ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রার্থী নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের নেতাদের মতামত জানতে চান। শেখ হাসিনা বলেন, গত সিটি নির্বাচনের সময় আমরা এভাবে বসে সবার মতামত নিয়ে প্রার্থী দিলে পরাজয় হতো না। পর পর তিনবার মেয়র থাকার পরে আবারও প্রার্থী হওয়ায় মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হয়তো নগরবাসী ভোট দেননি। তবে নতুনদেরও আনতে হবে, অন্তত একটি নতুন চারা বপন করতে হবে। এ ব্যাপারে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতামত জানতে চাইলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তাই আমি নির্বাচন করব না। আর প্রার্থিতা নিয়ে আপনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আপনি যাঁকে মনোনয়ন দেবেন তাঁর পক্ষেই আমরা সবাই একাট্টা হয়ে কাজ করব।’ অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেন। অন্য নেতারাও একই কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বলেন, দলে আপনার অবদান অনেক। কিন্তু আপনার বয়স হয়েছে। এখন একটু নতুনদের সুযোগ দিই। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যে সমর্থন জানান মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপর প্রধানমন্ত্রী মেয়র প্রার্থী হিসেবে আ জ ম নাছিরের নাম ঘোষণা করেন। চট্টগ্রামের নেতাদের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্ব-বিবাদ থাকলেও বৈঠকে তা প্রতিফলিত হয়নি। বরং সব নেতাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনের অঙ্গীকার করেন। মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের প্রতিটি ওয়ার্ডে দল সমর্থিত একক কাউন্সিলর প্রার্থী নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেন নগর ও জেলা নেতাদের। এদিকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনায় ঢাকার ১৫ নির্বাচনী এলাকার জন্য ১৫টি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে তা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক ও একেএম রহমতউল্লাহ। প্রতিটি কমিটিতে একজন করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, তিনের অধিক কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের রাখা হয়েছে। দেশে ফিরলে নগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে বৈঠক করে গঠিত কমিটিতে নগরের নেতা এবং সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই কমিটিই উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘ ত্যাগের কথা প্রধানমন্ত্রীসহ সব নেতাই একবাক্যে স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে এই প্রবীণ নেতাকে মূল্যায়নের কথাও বলেন কেউ কেউ। বৈঠকে কিছু বলা না হলেও উপস্থিত আওয়ামী লীগের বেশ ক’জন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইঙ্গিত দেন, দলের ত্যাগী নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মূল্যায়নে মন্ত্রী পদমর্যাদার কোন পদ দেয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, একেএম রহমতউল্লাহ, আমিনুল ইসলাম আমিন এবং চট্টগ্রাম নেতাদের মধ্যে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দিন, ডা. আফছারুল আমিন এমপি, এম আবদুল লতিফ এমপি, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, আবদুচ ছালাম, নুরুল আলম, আবদুস সালাম, মোসলেম উদ্দিন, মফিজুর রহমান, খোরশেদ আলম সুজন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেই চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আ জ ম নাছিরের দলীয় সমর্থনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দলের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নাম বিবেচনায় থাকলেও বয়স এবং শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করেই তাঁর বিকল্প হিসেবে আ জ ম নাছিরের নামটি প্রথম পর্যায়ে রাখা হয়। শুক্রবার চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করে মেয়র পদে আ জ ম নাছিরের নাম ঘোষণা করেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মান-অভিমান, দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে দল সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, শুধু মেয়রই নয়, প্রতিটি ওয়ার্ডে জনপ্রিয় নেতাদের কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দিতে হবে এবং একক প্রার্থী নিশ্চিত করা হবে। কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তা বরদাশত করা হবে না। জানা গেছে, বৈঠকে মেয়র পদে আ জ ম নাছিরের নাম ঘোষণার পর চট্টগ্রামের নেতাদের কাছ থেকে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে একসঙ্গে কাজ করবেন বলে ওয়াদাও নেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ, উত্তর ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী সমর্থন দেবে আওয়ামী লীগ। দল যাকে সমর্থন করবে তিনি ছাড়া অন্য কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারবেন না। জানা গেছে, বৈঠকে চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে কাউন্সিলর পদের মনোনয়ন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সিদ্ধান্ত হয়, স্থানীয় এমপির পরামর্শ নিয়ে নগর নেতারা ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাছাই করবেন। এরপর মাঠ জরিপ করে দল সমর্থিত প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। কোন মন্ত্রীই নির্বাচনী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। বৈঠকে চট্টগ্রামের এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকা- ভোটারদের মধ্যে তুলে ধরার পরামর্শও দেয়া হয়।
×