ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বামপন্থী শিক্ষকদের সহায়তায় অস্ত্রের মজুদ গড়েছে শিবির ॥ ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২১ মার্চ ২০১৫

বামপন্থী শিক্ষকদের সহায়তায় অস্ত্রের মজুদ গড়েছে শিবির ॥ ছাত্রলীগ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ ও মহসীন কলেজের বামপন্থী অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের সহায়তায় অস্ত্রের মজুদ গড়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে শিক্ষাঙ্গনে শিবিরের শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। এ সময় সোহাগ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ভা-ার থাকার খবর সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আঁতকে ওঠার মতো তথ্য। আইএস’র বাংলাদেশী এজেন্ট হওয়ার জন্য ছাত্রশিবির এই অস্ত্রের মজুদ গড়েছিল এ কথা আজ কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বলা যায়। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন আরও অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন চাইলে আমরা তাদের সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা দিয়ে সহায়তা করতে পারি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, হাসানুজ্জামান তারেক, দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল, ক্রীড়া সম্পাদক আবিদ আল হাসান, মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অহিদুর রহমান জয়, ঢাবি শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে ক্যাম্পাস দুটোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং শিবির নিষিদ্ধ করাসহ সাত দফা দাবি পেশ করা হয়। সোহাগ আরও বলেন, চট্টগ্রামের এই দুটি কলেজের হোস্টেলে পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও শিবিরের মূল ক্যাডাররা নিরাপদে পালিয়ে যায়। গত ২৭ নবেম্বর পুলিশী অভিযানে চট্টগ্রামের এ দুটি কলেজের হোস্টেলগুলোতে বিশাল অস্ত্র ভা-ারের সন্ধান পায়। কিন্তু কলেজ দুটির অধ্যক্ষ ও প্রতিটি বিভাগীয় প্রধান বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী। কলেজ দুটিতে জামায়াত শিবিরের ক্যাডারদের এই অস্ত্র মজুদের আস্তানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ সকল শিক্ষকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ সময় তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে কলেজ দুটির শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করে ও মেধারভিত্তিতে কলেজ হোস্টেলে আসন বণ্টন করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার অনুরোধ করেন। অন্যথায় এসব সন্ত্রাসীদের অস্ত্রে যে কোন মূহুর্তে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি চট্টগ্রামের দুটি কলেজে অভিযান চালিয়ে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে ছিল একটি একে-২২ রাইফেল, একটি থ্রি নট থ্রি, তিনটি পিস্তল, তিনটি সিঙ্গেল ব্যারেল বন্দুক, একটি দোনালা বন্দুক, পাঁচটি রকেট ফ্লেয়ার, ৬১টি কার্তুজ ও ২৭টি গুলি। শিবিরের ঘাঁটি চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, চট্টগ্রামের দুটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন জোট সরকারের আমল পার হয়েছে, কিন্তু শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজে অন্য কোন মতের রাজনীতি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ত্রিশ বছরের রাজনীতির অন্তরালে শিবির শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই ছাড়াও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। এ দুটি কলেজের নবীণবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে শিবির নেতাকর্মীরা। ফলে বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্য বজায় নেই, রয়েছে শুধু ইসলামের নামে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শিবিরের পতাকা তলে আসার অনুপ্রেরণা। শুধু ছাত্ররাই নয়, ছাত্রীরাও এ দুটি কলেজে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না শিবিরের নেপথ্য নিয়ন্ত্রণের কারণে। শুধু তাই নয়, শিবির অধ্যুষিত হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের ছাত্রাবাস প্রায় ৩২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সাল থেকেই শিবিরের নিয়ন্ত্রণে ছিল চট্টগ্রামের একমাত্র সরকারী বাণিজ্য কলেজ (চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ)। ১৯৯৬ সালের পর আবারও এ কলেজের রাজনীতি ও সংসদ ফিরে আসে ছাত্রলীগের দখলে। তবে যৌথভাবে শিবির ও ছাত্রদল ’৯১ সাল থেকে ’৯৫ সাল পর্যন্ত কর্তৃত্ব বজায় রাখে। উল্লেখ্য, শিবির নিয়ন্ত্রিত এ দুটি কলেজ ছাড়াও ’৯০-এর দশকে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কেও নিজেদের দখলে নিয়ে গুপ্ত আস্তানা তৈরি ও আগ্নেয়াস্ত্র সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত করা হয়েছে। যদিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত ছাত্রশিবির, বিএনপি আর ছাত্রলীগের পৃথক রাজনৈতিক কর্মকা- চলমান রয়েছে। ফলে সময় সময় ত্রিমুখী রাজনীতির এ প্রতিষ্ঠানটিতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য এ দুটি কলেজে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা নেই। শিক্ষার্থীরা শিবিরের কোপানলে পড়ে নিজেদের সচেতনতার যেমন বহির্প্রকাশ ঘটাতে পারে না, তেমনি নিজেদের মতামত বলি দিতে হয় শিবিরের রাজনীতির কাছে।
×