ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিলক রাবার ড্যাম অকার্যকর ॥ মাঠ ফেটে চৌচির

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২১ মার্চ ২০১৫

শিলক রাবার ড্যাম অকার্যকর ॥ মাঠ ফেটে চৌচির

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া, ২০ মার্চ ॥ চাষাবাদের সুবিধার্থে নির্মিত চট্টগ্রামের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়াবাসীর বহু কাক্সিক্ষত শিলক রাবার ড্যাম অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কর্ণফুলীর শাখা শিলক খালের ওপর অর্ধ শতাধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন বালি উত্তোলন করায় পানির স্তর নিচে নেমে আসায় ১২শ’ একর জমিতে সেচ দেয়া যাচ্ছে না। এছাড়াও শিলক নদীর ওপর অপরিকল্পিতভাবে আরও দুটি রাবার ড্যাম স্থাপিত হওয়ায় নদীর পানির স্তর একেবারেই তলানিতে নেমে গেছে। শিলক খাল রাবার ড্যামের সম্মুখে জমিতে পানি দেয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে শিলক রাজা পাড়া তৈলা ভাঙ্গা নারিশ্চাসহ কয়েকটি গ্রামে ১২শ’ একর জমির চাষাবাদকৃত ফসল এবার ঘরে তুলতে না পারার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ৫০টি ড্রেজার মেশিন রাতদিন চলার কারণে বালি পানি শোষণ করে নিচ্ছে। আর এ সব ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন ও বিক্রি করছে একাধিক সিন্ডিকেটের অর্ধ শতাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মী। স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা এ সব সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে বালি উত্তোলন করে বাণিজ্যিকভাবে পাচার করে মোটা অঙ্কের টাকার মালিক হচ্ছে। শত শত কৃষক বেসরকারী সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছে। পানি না পাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তার মাঝে কৃষক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকরা জানায়, এবারের ইরি মৌসুমে শত শত কৃষক চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে ১ একর থেকে ২০ একর পর্যন্ত কেউ কেউ ইরি চাষাবাদ করে। এ সব জমিতে শুরু থেকেই পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছিল। চাষাবাদকৃত অনেকের জমি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সমস্ত জমি শুকনো জমিতে পরিণত হবে। শিলক রাবার ড্যামের পাশে ১০ একর জমিতে ইরি চাষ করেছেন বৃদ্ধ শামসুল আলম। তিনি জানান, রাবার ড্যামের পানি দিয়ে গত মৌসুমে বোরো আবাদ করে আশানরূপ ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এবার ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করাতে শিলক খালের পানি একেবারেই শুকিয়ে গেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জমিতে পানি দেয়া সম্ভব না হলে জমি মরুভূমিতে পরিণত হবে। এরপরও আমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষার দিন গুণছি। যথাসময়ে বৃষ্টির পানি পাওয়া না গেলে এবারের ইরি চাষাবাদ সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। শিলক ইউনিয়নের রাজা পাড়া ইউনিয়নের কৃষক ওসমান সিকদার আবাদ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থানীয় কতিপয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা সিন্ডিকেট করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালি উত্তোলন করায় খালের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। জমিতে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন মিটাতে আর কোন উপায়ান্তর দেখছি না। এবারে আবাদের ধান মাঠেই থেকে যাবে বলে তিনি জানান। পানি সঙ্কটে ইরি চাষাবাদে ৫শ’ একর জমিতে চাষাবাদ হয়নি। এলাকার করিম, আজিম, আবু বক্কর সিদ্দিক, আলম, মোঃ বেলাল এরা প্রত্যেকেই রাবার ড্যামের সেচের পানির ওপর নির্ভরশীল। এ সব কৃষকরা জানালেন, ২০০৪ সালে রাবার নির্মিত হওয়ার পর থেকে অনেকেই আশায় বুক বেঁধে চাষাবাদ শুরু করেছিল। সে সময় বালি সিন্ডিকেটরা নদী থেকে বালি উত্তোলন না করায় কৃষকরা আশানরূপ চাষাবাদ করতে সক্ষম হয়েছে। এবার বালি সিন্ডিকেটের আগ্রাসনে পুরো চাষাবাবাদ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
×