ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতির দায়ে ফেঁসে যাচ্ছে গফরগাঁওয়ের পিআইও

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২২ মার্চ ২০১৫

দুর্নীতির দায়ে ফেঁসে যাচ্ছে গফরগাঁওয়ের পিআইও

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ২১ মার্চ ॥ গফরগাঁওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় উপজেলায় শুরু হয়েছে তোলপাড়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইউএনও রেজাউল বারী এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত চেয়ে পাঠান। কিন্তু দীর্ঘ চার মাসেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে ইতোমধ্যে ইউএনও রেজাউল বারী গফরগাঁও থেকে বদলি হয়ে গেছেন। ফলে পরিবর্তী পরিস্থিতিতে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার তৎপরতা চলছে বলে সূত্র জানায়। তবে সূত্র দাবি করেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফেঁসে যাচ্ছেন বিতর্কিত পিআইও রেজাউল করিম। রেজাউল করিম গফরগাঁওয়ে যোগদান করেন ২০১৪ সালের ১২ ফ্রেব্রুয়ারি। সাত মাসের মধ্যে ইউএনও এবং পিআইও দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। পিআইওর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন পাঠানোর আগে ২৬ জুন ইউএনও কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠালে রেজাউল করিম তার জবাব দেননি। এরপর ৭ আগস্ট ফের শোকজ করার এক মাস পর পিআইও যে জবাব দেন, ইউএনও তাকে অশালীন ও অপ্রাসঙ্গিক বলে বর্ণনা করেন। এ ঘটনায় পরে জেলা পর্যায় থেকে তদন্ত হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেরে মাহবুব মুরাদের তদন্তে পিআইও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়। জানা যায়, পিআইও রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অস্তিত্বহীন কাবিখা কর্মসূচীর বিপরীতে খাদ্যশস্য বরাদ্দ, দায়িত্বে অবহেলা, সরকারী কাজে শৈথিল্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ সব অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পরও পিআইও বহাল তবিয়তে আছেন। পিআইও রেজাউল করিম এ ব্যাপারে উল্টো সাবেক ইউএনও রেজাউল বারীর বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনেন। তিনি জানান, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তিনি গুরুত্ব দেননি। বরং নিজের দায় অন্যের ওপর চাপাতে পিআইওকে দোষী করেছেন। রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেন, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে তখন তা দেখব। এ সব নিয়ে আমি চিন্তা করি না। আপনারা যা খুশি লেখেন, আমার কাজের গতি ভাল দেখে কর্তৃপক্ষ ১০ দিনের জন্য আমাকে ভারতে প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছিল। আমি ভারতের সাতটি রাজ্য ঘুরে দেখেছি। আমার মুখ দেখে আমাকে পাঠানো হয়নি। ভোলাহাটে টিআর ও কাবিখার চাল হরিলুট স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ভোলাহাটে গ্রামীণ অবকাঠামো, বিশেষ করে রাস্তাঘাট ও প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়নে বরাদ্দকৃত চাল হরিলুট হয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ সব চাল বিক্রি করা অর্থ উন্নয়নের কাজে ব্যবহার না হয়ে ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পকেটে চলে গেছে। নিয়ম রয়েছে যেখানেই প্রকল্প সেখানেই সাইনবোর্ড দিয়ে তার খুঁটিনাটি উল্লেখ করা। কিন্তু পুরো উপজেলার কোথাও এ ধরনের কোন কাজের চিহ্ন নেই। অথচও কাগজে কলমে প্রকল্প এলাকা ও বরাদ্দের পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। ভোলাহাট উপজেলায় সাধারণ কাবিখার ছয়টি প্রকল্পে ৭০.৪৩০ টন চাল ও নির্ধারণ করা এলাকাভিত্তিক আরও পাঁচটি প্রকল্পে ৫০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। একটি প্রকল্পেও এ চাল ব্যবহার করা হয়নি বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। অপরদিকে টিআর প্রকল্পের ৩৩টিতে ৬৩ টন ও এলাকাভিত্তিক ২৩ প্রকল্পে ৭০ টন চাল বরাদ্দ ছিল। মোট ৫৬ প্রকল্পের মাত্র একটি প্রকল্পে চাল ব্যবহার ছাড়া অন্য ৫৫ প্রকল্পের কোন হদিস নইে সরেজমিনে। কোথাও কোথাও কর্ম সৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যবহার করে প্রচার করা হয়েছে টিআর প্রকল্প বাস্তবায়নের। প্রকল্পাধীন ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিআর প্রকল্পের বরাদ্দ সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবার ডাকে উঠিয়েছিল। যারা প্রকল্প নিয়েছে তাদের প্রতিটনে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা গুণে দিতে হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই প্রকল্প গ্রহণকারীরা এ চাল বিক্রি করে ঘুষের টাকা উঠিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প গ্রহণকারীরা বলেন, প্রতিটনে তিন হাজার এবং প্রকল্পের কাগজপত্র তৈরিসহ অন্যান্য খচর দিয়ে কাজ করার মতো টাকা থাকে না। তাই ভুয়া কাগজপত্র তৈরি ছাড়া বিকল্প নেই। ফলে কাগুজে প্রকল্প বাস্তবায়ন, বাস্তবে কাজ নেই। ভোলাহাট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে তিনি কোন ধরনের মন্তব্য না করে বলেন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের চাহিদা মেটাতে গিয়ে আদায় করা অর্থের এক পয়সাও হাতে থাকে না। সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।
×