ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের মৃত্যুর মিছিলে আরও ৪

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৩ মার্চ ২০১৫

পেট্রোলবোমায় দগ্ধদের মৃত্যুর মিছিলে আরও ৪

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ বিএনপি-জামায়াতের অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় দগ্ধ আরও চারজন মৃত্যুর মিছিলে যোগ হলো। এদের মধ্যে তিনজন মাগুরায় ট্রাকে ছোড়া অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়েছিল। অন্যজন চাঁদপুরে পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ ট্রাকের মালিক। হাসপাতালের বেডে দগ্ধ মাগুরার আরও ৬ শ্রমিক মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাগুরায় দগ্ধ শ্রমিক মতিন বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। এর সাড়ে চার ঘণ্টা আগে দুপুর বারোটার দিকে একই ঘটনায় দগ্ধ শ্রমিক শাকিল আহমেদ মোল্লা মারা যান। আর মাগুরা থেকে রাত আড়াইটায় ঢাকা মেডিক্যালে আনা হলে দগ্ধ শ্রমিক রওশন আলী বিশ্বাসকে (৩৫) মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে চাঁদপুরে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ ট্রাক মালিক খন্দকার শরিফুল ইসলাম (৩৫) মারা যান। নিহত ও আহতের স্বজনদের কষ্ট ও বেদনায় হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানান, অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় মতিনের শরীরের ৫৫ শতাংশ, শাকিলের ৬৫ শতাংশ ও রওশন আলী বিশ্বাসের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তিনি জানান, চাঁদপুরে পেট্রোলবোমায় ট্রাক মালিক খন্দকার শরিফুল ইসলামের ৮৮ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। পার্থ শংকর পাল জানান, টানা সহিংসতায় অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় দগ্ধ এ পর্যন্ত ২০ জন বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন আছেন আরও ৩২ জন। নিহত মতিন বিশ্বাসের বাবার নাম খোকন বিশ্বাস। গ্রামের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার মালিক গ্রামে। আর নিহত শাকিল মোল্লার বাবার নাম ইসলাম মোল্লা। গ্রামের বাড়ি মাগুরা সদর থানার একই গ্রামে। এ ঘটনায় আরেক নিহত রওশন আলী বিশ্বাস ও আহত সবার বাড়ি মাগুরা সদরের মালিগ্রামে। অবরোধকারীদের পেট্রোলবোমায় দগ্ধ নিহত মতিন বিশ্বাসের মৃত্যুতে স্ত্রী জাহিদা তাহরিমা বিলাপ করে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। শনিবার রাত আড়াইটায় তিনিই তাঁর স্বামী মতিন বিশ্বাসকে বার্ন ইউনিটে নিয়ে এসেছিলেন। হাসপাতালে জাহিদা জানান, পেট্রোলবোমা হামলায় নিহত রওশন আলী তাঁর চাচা শ্বশুর। এছাড়া তাঁর দুই দেবর ইলিয়াস বিশ্বাস ও আরব আলীর শরীরও ঝলসে গেছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ওর (মতিন বিশ্বাসের) মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার সংসার পুড়ে ছারখার হয়ে গেল। কে এখন তাদের সংসার চালাবে। জাহিনা ও তাহরিনা বিলাপ করে বলছিলেন, পরিবারের সবাই দিনমজুর। দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে যে আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলে। বাড়িতে সম্পদ বলতে কেবল কয়েকটি টিনশেড ঘরই। তিনি জানান, যখন যে কাজ পান, জীবিকার তাগিদে তাই করেন তাঁরা। হামলায় একই গ্রামের দগ্ধ ইয়াদুলের বোন জাকিয়া বেগম জানান, তাঁর ভাই ট্রাকচালকের সহকারী ও চালক ইমরান তাঁর ছোটবোনের স্বামী। তারা ট্রাক চালিয়ে সংসার চালায়। এদিকে এলাকার লোকজনের ঝলসে যাওয়ার খবর পেয়ে রবিবার ভোরে দগ্ধ ইয়াদুলের প্রতিবেশী মোঃ রাসেল বার্ন ইউনিটে ছুটে এসেছেন। তিনি রাজধানীতে একটি ফটোগ্রাফির দোকানে কাজ করেন। তিনি জানান, দিন আনি দিন খাই। পরিবারের লোকজন এরা। এ অবস্থার কারণে অনেকের পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হবে। বুধবার রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ও রাঘুনাথপুর এলাকায় অবরোধকারীরা পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ ট্রাক মালিক খন্দকার শরিফুল ইসলাম (৩৫) গুরুতর আহত হন। পরে তাকে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে রবিবার বিকেলে তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। একই দিন চাঁদপুর সদরের এই এলাকায় পণ্যবাহী আরেকটি ট্রাকে অবরোধকারীরা পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। এতে ট্রাকটি পুড়ে গেলে ঘটনাস্থলে ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর (৪০) নিহত হন। জাহাঙ্গীরের গ্রামে বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলায়। এ ঘটনায় মারাত্মক দগ্ধ হন খোরশেদ (৩০), রুবেল (৩৮) ও শরিফ (৩৫)। ওই রাতেই তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
×