ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চার মাসের শিশুকে হত্যার হুমকি দিয়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৩ মার্চ ২০১৫

চার মাসের শিশুকে হত্যার হুমকি দিয়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে চার মাসের শিশুকে হত্যার হুমকি দিয়ে দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শিশুটিকে হত্যার হুমকি দিয়ে চেকে স্বাক্ষর আদায় করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয় চক্রটি। রেজাউল করিম নামের এক ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে ব্যবসায়িক পার্টনার ও তার সঙ্গীরা এ কাজ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি রেজাউল। মামলা দায়েরের পর চক্রটি ফের বাদীকে আদালতপাড়ায় মারধরসহ হত্যার হুমকি দেয়ায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে। নয়টি চেকে স্বাক্ষর আদায়ের মাধ্যমে রেজাউলের মালিকানাধীন ফ্ল্যাট এবং জায়গা হাতিয়ে নিতে চক্রের স্বাক্ষর আদায় করে চক্রটি। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম আদালত সূত্রে জানা গেছে, দামপাড়ার নিজাম রোডের মেসার্স এমএ রহমান ডাইয়িং ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী মুহাম্মদ মোহসিন ও জাহাঙ্গীর। তাদের মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানের ৩০ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিনিময়ে পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডার করার জন্য আংশিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ বিষয়ে কয়েক দফায় বৈঠকও হয়েছে বিবাদীদের সঙ্গে। মামলার বাদী ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চান রেজাউল। কিন্তু মুহাম্মদ মোহসিন, ওই প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর ফাইন্যান্স মোঃ জাহাঙ্গীর, সাইট ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন ও বায়েজিদের মোঃ ইলিয়াছ নির্ধারণকৃত পাঁচ কোটি টাকা তাদের প্রতিষ্ঠানের এ্যাকাউন্টে জমা দিতে বলেন। এতে রেজাউল রাজি না হলে কৌশলে চুক্তির কথা বলে ডেকে আনা হয়। কিন্তু রেজাউলের ড্রাইভার মালেকের সহযোগিতায় গত ২১ ফেব্রুয়ারি রেজাউলকে কৌশলে উল্লিখিত চারজনের কাছে এনে অনেকটা অবরুদ্ধ করা হয়। তাদের আচরণ সন্দেহ হওয়ায় রেজাউল বাসায় আসতে চাইলে তাকে আটকে রাখা হয়। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী রহিমাকে খবর দেয়। রাহিমা তার চার মাসের সন্তানসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এক পর্যায়ে মোহসীন ও জাহাঙ্গীর টাকা চাইলে রেজাউল তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার স্ত্রীর কাছ থেকে গত ৮ মার্চ দুপুরে জোর করে বাসার চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। রেজাউলের আগ্রাবাদ রঙ্গীপাড়ার হাসেম ভ্যালিতে যায় খালেদ হোসেন ও ইলিয়াস। কিন্তু বাড়ির নিচে থাকা রিসিপশনের রেজিস্ট্রারে ইলিয়াস স্বাক্ষর করে। তারা বাসায় অনুপ্রবেশ করে আলমারির ড্রয়ারে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের তিনটি, ওয়ান ব্যাংক, ডাচবাংলা ব্যাংকসহ তিনটি ব্যাংকের পাঁচটি চেক বই, ফ্ল্যাট ও জায়গার দলিল, গাড়ির ডকুমেন্টস এবং ব্যবসায়িক কাগজপত্র নিয়ে যায়। এরপর আসামিরা তাদের ল্যাপটপ দ্বারা রেজাউলের ব্যাংক হিসেবের স্টেটমেন্ট অবৈধভাবে কালেকশন করে। রেজাউলের এবং যৌথ পরিচালনাধীন ব্যাংক হিসাবের নয়টি তারিখের বিভিন্ন অঙ্কের নয়টি চেকে মোট দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকার চেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে আসামি মোহসিনের হিসেবে নগদায়ন করে। এ বিষয়ে রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, চেকগুলোতে স্বাক্ষর না দিতে চাইলে তারা আমার চার মাসের কোলের শিশুটিকে এক হাত থেকে আরেক হাতে ছুড়ে মেরে অমানুষিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে আমার স্ত্রী রহিমার কাছ থেকে তারা ২০টি অলিখিত স্ট্যাম্প, অলিখিত হলুদ কার্টিজ পেপার এবং ১২টি চেকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। পরে গত ৮ মার্চ দুপুরে আসামিরা আমাকে সব কাগজপত্র ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আগ্রাবাদের ইর্স্টান ব্যাংকের সামনে আসতে বলে। কিন্তু এগুলো ফিরিয়ে না দেয়ায় গত ১০ মার্চ চট্টগ্রামের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী আদালতে (নং-৩) একটি মামলা দায়ের করা হয়। গত ১৫ মার্চ রবিবার এ মামলায় আদালতে উপস্থিত হলে আসামিরা তার ওপর পুনরায় হামলা চালায়। এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় ওই দিনই একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
×