ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দরে বীরদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা, ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড়

জাতির প্রত্যাশা পূরণ করেছি ॥ মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ মার্চ ২০১৫

জাতির প্রত্যাশা পূরণ করেছি ॥ মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে যেন প্রবেশ করাই কঠিন। এত জনতা! ক্রিকেট দলের প্রতি ভালবাসা থেকেই বিমানবন্দরে হাজির ক্রিকেটপ্রেমীরা। বিমানবন্দরে প্রবেশ থেকে ভিআইপি লাউঞ্জ পর্যন্ত সেই বিকেল থেকেই রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছে হাজারও হাজারও ভক্ত-সমর্থক। স্বপ্নময় বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে বীররা আসবেন। তাদের শুভেচ্ছা জানাবেন। বীরেরা আসলেন এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের শুভেচ্ছায় সিক্তও হলেন। ক্রিকেটারদের বরণ করেও নেয়া হলো। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা দেশে ফিরে জানিয়েও দিলেন, ‘আমি ক্রিকেটারদের ধন্যবাদ দেই। কোচকেও ধন্যবাদ জানাই। টিম ম্যানেজমেন্টকেও ধন্যবাদ জানাই। আমরা যে কষ্ট করেছি, তার ফল পেয়েছি। আমরা যত ভালই খেলে আসি না কেন, সবকিছুই এ দেশের মানুষের জন্য। অন্যরকমই লাগছে। আমরা কিছু করতে গিয়েছিলাম। করতে পেরেই আনন্দ লাগছে। আমরা হেরেছি-জিতেছি, সবসময় একসঙ্গে থেকেছি। পুরো দলের দারুণ নৈপুণ্য ছিল। সবার যে আশা ছিল, তা পূরণ করতে পেরেছি। আশা করছি এখন দল আরও এগিয়ে যাবে।’ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে রবিবার দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নকআউট পর্বে স্থান করে নেয় টাইগাররা। টাইগারদের বরণ করে নিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডসহ সমর্থকরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। মেলবোর্ন থেকে শনিবার দুপুরে রওনা হয়ে এমিরেটস এয়ারওয়েজের ইকে-৪৪১ ফ্লাইটে এ্যাডিলেট থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে শনিবার রাতে রওনা দিয়েছে বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে দুবাই হয়ে রবিবার রাত পৌনে আটটায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছেছে টাইগাররা। পৌঁছে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষে ভিআইপি লাউঞ্জে নেমে আসেন বীররা। শুরুতেই তামিম ইকবালকে দেখা যায়। এরপর এক এক করে সব ক্রিকেটার বের হন। শুরুতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) শুভেচ্ছা দেয়া। ফুলের দিয়ে মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ক্রিকেটারদের বরণ করে নেন। এরপর দীর্ঘ ভ্রমণক্লান্তি শেষে ক্রিকেটাররা গাড়িতে করে যার যার বাড়িতে চলে যান। যাওয়ার সময় সারি সারিভাবে দাঁড়ানো ভক্ত-সমর্থকরা ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছা জানান। ব্যানার-ফেস্টুন-প্লেকার্ডে ছেয়ে যায় বিমানবন্দর। ঢোল-বাদক নিয়ে হাজির হন ভক্তরা। তালে তালে, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। বাংলাদেশের লাল-সবুজ জাতীয় পতাকায় ছেয়ে যায় বিমানবন্দর। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে অবশ্য আসেননি ওপেনার এনামুল হক বিজয়। শনিবার সন্ধ্যাতেই দেশের মাটিতে পা রাখেন বিজয়। কাঁধের চিকিৎসা শেষে আগেই দেশে ফিরেন বিজয়। সাকিব আল হাসানও সস্ত্রীক দলের সঙ্গে ফিরেননি। দলের সঙ্গে বিদেশী কোচিং স্টাফদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় থেকে গেছেন কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে ও ট্রেনার মারিও ভিলাভারায়েন। দুবাই পর্যন্ত দলের সঙ্গে এসে ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল গেছেন লন্ডন, বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক বুলাওয়ে এবং সহকারী কোচ রুয়ান কালপাগে কলম্বো গেছেন। এছাড়া বাকি সবাই এসেছেন। এর আগে ১৯৯৭ সালের ১৪ এপ্রিল মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ দলকে শুভেচ্ছা জানাতে বাধভাঙ্গা ঢল নেমেছিল। সে সময় এক লাখেরও বেশি মানুষ দলকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ফেরার পর হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছিল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। দুইবারই টাইগারদের অভিনন্দন জানাতে ছুটে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারও জনতার ঢল নামে। তবে শুধু এদিন বিসিবির শুভেচ্ছাসহ ভক্ত-সমর্থকদের সমর্থন মিলেছে। পরে ক্রিকেটারদের রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা দেয়া হবে। বিসিবির পক্ষ থেকেও থাকবে বড় আয়োজন। এবার একটা ব্যতিক্রম দৃশ্যও দেখা গেল। সচরাচর দেখা যায় ভক্ত-সমর্থকরা সাকিব-তামিম বলতে থাকেন। এবার টানা দুই সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানো রুবেল হোসেনের নামই শোনা গেছে। শোনা গেছে মাঝে মাঝে মুশফিকুর রহীমের নামও। ‘মাশরাফি, মাশরাফি’ রবও উঠেছে। দল প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে তাতেই গর্ববোধ করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ক্রিকেটাররাই সেই গর্ব করার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন। গর্বিত ক্রিকেটাররাও।
×