ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাইয়ে পাঁচ মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিলেন প্রধানমন্ত্রী ;###;মেয়র পদে আনিসুল হক, কবরী, পিন্টুসহ ১৫ এবং কাউন্সিলর পদে দুই শতাধিক ব্যক্তির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হাজী সেলিমের পক্ষে একাধিক মন্ত্রীর তদবির

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৪ মার্চ ২০১৫

দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হাজী সেলিমের পক্ষে একাধিক মন্ত্রীর তদবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে হাজী সেলিমকে দলীয় মনোনয়ন দিতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদবির করেছেন একাধিক মন্ত্রী। তাঁরা বলেছেন, সাঈদ খোকনের চেয়ে প্রার্থী হিসেবে হাজী সেলিম মন্দ নয়। একই সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাউন্সিলর পদে বাছাই করার জন্য পাঁচ মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব মন্ত্রী হলেনÑ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এদিকে সোমবার মেয়র পদে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক, বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুসহ অনেকেই। তিনি সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এনডিএফ। এদিকে মেয়র পদে এ পর্যন্ত ১৫ জন ও কাউন্সিলর পদে দুই শতাধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সেলিমের পক্ষে তদবির ॥ সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় হাজী সেলিমের পক্ষে তদবির করার বিষয়ে কথা হয়েছে বলে বেশ কয়েকজন জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রীরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষ নির্বাচন চায় কিনা তা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখা যাবে। তবে বিএনপি তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য এ নির্বাচনে আসবে। সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার বৈঠকে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণের মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দেন একাধিক মন্ত্রী। তবে অধিকাংশ মন্ত্রী সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক হাজী সেলিমকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থী নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। হাজী সেলিমকে মনোনয়ন দিতে অনুরোধ করেন খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তাঁরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দক্ষিণ যাতে হাতছাড়া না হয় সেজন্য হাজী সেলিমকে মনোনয়ন দেয়ার অনুরোধ করেন। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোন সিদ্ধান্ত জানাননি বলে জানা গেছে। এদিকে, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, সব দল (বিএনপিসহ) আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে। এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য সাঈদ খোকন ও আনিসুল হককে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন রাতে সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে দেখা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়াই করার জন্য নির্দেশ দেন। এর পরই প্রচারে নেমে পড়েন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক। এদিকে, ঋণখেলাপী ইস্যুতে দলীয় সমর্থন হারাতে পারেন সাঈদ খোকন। গত ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে এরকম সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করে। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় সভানেত্রীর একান্ত ইচ্ছায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ইসির তফসিল ঘোষণার পর দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরোক্ষ সমর্থন ও বিভিন্ন কৌশল নিয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ২০ মার্চ এক বৈঠকে সাঈদ খোকনের ঋণখেলাপীর বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এতে দলীয় সভানেত্রী বলেন, ‘সে (সাঈদ খোকন) ঋণখেলাপী হলে সেটা তো দল দায়িত্ব নেবে না। এর মধ্যে সে যদি ঋণখেলাপীর বিষয়ে সমাধান করতে না পারে তাহলে দল বিকল্প সিদ্ধান্ত নেবে।’ গত ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তার এক সপ্তাহ আগে গত বৃহস্পতিবার সাঈদ খোকনের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকের নালিশ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আসে। ইসিতে পাঠানো চিঠিতে প্রিমিয়ার ব্যাংক অভিযোগ করে, সাঈদ খোকনের কাছে তাদের ১১৮ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। পিন্টুর মনোনয়ন সংগ্রহ ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনের জন্য ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু আইনজীবীর মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সোমবার তাঁর আইনজীবী রফিকুল হক ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় মহানগর নাট্যমঞ্চে এসে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং অফিসার মীর সারোয়ার মরশেদ এ মনোনয়নপত্র দেন। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আর তাঁর পক্ষে আইনজীবী ‘নাসির উদ্দিন আহমেদ’ নামে এ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এনডিএফের প্রার্থী ঘোষণা ॥ আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ঢাকা দক্ষিণে বাবুল সর্দার চাখারী, ঢাকা উত্তরে মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিম এবং চট্টগ্রামে আবুল মঞ্জুরকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে এনডিএফের পক্ষ থেকে নাম ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এনডিএফের চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু বলেন, গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে দেশে অশুভ ও অনাকাক্সিক্ষত শক্তির উদ্ভব ঘটবে। মনোনয়ন সংগ্রহ করলেন আনিসুল হক ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সোমবার রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে জেলা নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলমের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন- সংসদ সদস্য রহমত উল্লাহ, এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, আনিসুল হকের স্ত্রী, কন্যা ও পুত্র। ভোটারপিছু ব্যয় ॥ ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থীরা প্রচার বাবদ ভোটারপিছু ব্যয় করতে পারবেন সর্বোচ্চ দুই টাকার মতো। তবে নির্বাচনী ব্যয়সীমা অনুযায়ী কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ৬ টাকার মতো ব্যয় করতে পারবেন। ভোটার সংখ্যার অনুপাতে নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারিত হয় বলে তাঁদের ব্যয়সীমার এমন হিসাবই দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, ভোটার সংখ্যা অনুপাতে ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থীরা ৫০ লাখ টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রার্থীরা ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন। ঢাকা উত্তরে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন ভোটারের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের সীমা থাকায় ভোটারপ্রতি দুই টাকা ১৩ পয়সা করে খরচের সুযোগ থাকছে। আর ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ জন ভোটারের বিপরীতে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থীদের ভোটারপ্রতি এক টাকা ৬০ পয়সা এবং ১৮ লাখ ২২ হাজার ৮৯২ জন ভোটারের চট্টগ্রামে এক টাকা ৬৫ পয়সা করে ব্যয়ের সুযোগ থাকছে। কাউন্সিলর পদে ১৫ হাজার ভোটারের জন্য এক লাখ টাকা ও ৫০ হাজার ভোটারের ক্ষেত্রে ৬ লাখ টাকা ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে। প্রচার, পোস্টার ছাপানোসহ অন্যান্য ব্যয় এ খরচের মধ্যেই পড়বে। আচরণবিধি মেনে প্রচারণার নির্ধারিত সময়ে এই ব্যয় করা যাবে। নির্বাচনী আইনে বলা হয়েছে, প্রার্থীরা একাধিক রঙের কিংবা নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় পোস্টার ছাপাতে পারবেন না। এ কাজে আমদানি করা কাগজ ব্যবহার করা যাবে না। ৪০০ বর্গফুটের চেয়ে বড় আকারের প্যান্ডেল, গেট বা তোরণ নির্মাণ চলবে না। জনসভা ছাড়া একসঙ্গে তিনটির বেশি মাইক ব্যবহার করা যাবে না। ভোটারদের আপ্যায়ন কিংবা গাড়িভাড়া, মিছিলে কোন গাড়ি বা নৌযান ব্যবহার ও আলোকসজ্জা করা চলবে না। প্রার্থীকে সব অর্থ খরচ করতে হবে এজেন্টের মাধ্যমে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব কমিশনে দাখিল করতে হবে। কোন অনিয়ম ধরা পড়লে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
×