ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলা গানের সারথী শিল্পী জাকারিয়া সুমন

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৪ মার্চ ২০১৫

বাংলা গানের সারথী শিল্পী জাকারিয়া সুমন

সাজু আহমেদ ॥ সঙ্গীত হলো মনের ভাষা। সঙ্গীতের সুরের মূর্র্ছনায় মানবচিত্তের অন্তর্নিহিত ভাবগুলো যেভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় তা অন্য কোন মাধ্যমে ততটা সম্ভব নয়। শিল্প সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম সুর-রস-সুধা অবগাহন। এ সুধার সাগরে অবগাহন করার সৌভাগ্য সবার হয় না। যে মানুষ মৌলিক গানের সুর ধারায় অবগাহনে চেষ্টা করেন তারাই সৌভাগ্যবান। এমনি একজন শিল্পী জাকারিয়া সুমন। সম্প্রতি বাংলা গানের একনিষ্ঠ সাধক এ শিল্পীর নাম জাকারিয়া সুমন। জাকারিয়া সুমন মূলত মূলধারার গান, বিশেষ করে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত তথা রাগাশ্রয়ী গান গাইতে পছন্দ করেন। পাশাপাশি বাংলা গজলও ভাল গাইতে পারেন তিনি। ভাল এবং মৌলিক বাংলা গানের প্রসার এবং সমৃদ্ধির জন্য কাজ করলেও তার মধ্যে নিজের প্রচারের বিমুখতা বিশেষ লক্ষণীয়। অনেকটা নিভৃতে মৌলিক বাংলা গানের চর্চা করে যাচ্ছেন। তারপরেও সঠিক মানুষের মূল্যায়ন করে কেউ কেউ। কোটালীপাড়া সমাজকল্যাণ সমিতি এবং মিতালী ললিতকলা একাডেমি নামের দুটি সংগঠন ইতোমধ্যে শিল্পী জাকারিয়া সুমনকে বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। জাকারিয়া সুমন বলেন, একটি ভাল বাংলা গানের প্রধান উপাদান হলো ভাল কথা, ভাল সুর এবং গায়কী। এই তিনটির সুন্দর সমন্বয় হলে, তবেই একটি গান শ্রুতিমধুর হয় এবং তা শ্রোতারা গ্রহণ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সম্প্রতি অনেকেই আছেন যারা গানের কথার অন্তঃমিল বিষয়টি পর্যন্তও জানেন না। ভাল গান সৃষ্টির প্রতিবন্ধকতার জন্য ভাল লিরিক্স সঙ্কট অনেকটাই দায়ী বলে মনে করেন তিনি। প্রতিভাবান শিল্পী জাকারিয়া সুমন গতানুগতি ধারায় খ্যাতি অর্জনে বিশ্বাসী নন। তাইতো অন্যদের মতো মঞ্চ বা বিভিন্ন চ্যানেলে নিয়মিত ব্যস্ত না হলেও মাঝে মাঝেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এর মধ্যে একুশে টেলিভিশন থেকে বিশেষ সম্মাননা সনদও পেয়েছেন তিনি। ভাল কোন অনুষ্ঠান হলে বা ভাল মৌলিক গানের দর্শক সমাগম মঞ্চে তিনি প্রাণ খুলে গেয়ে থাকেন। শিল্পী জাকারিয়া সুমন প্রথম একক সঙ্গীতানুষ্ঠান হয় ২০০৯ সালে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীতশালা মিলনায়তনে তানপুরা শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে। অনুষ্ঠানে শিল্পীর গাওয়া গান উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। গত বছরের শেষের দিকে বিটিভির ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানের একটি পর্বে তিনি রাগাশ্রয়ী গান ও গজল পরিবেশন করে প্রশংসিত হন। বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী জাকারিয়া সুমন সম্প্রতি কোটালিপাড়া সমাজকল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সঙ্গীতানুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে সুধী মহলের প্রশংসা কুড়ান। রাজধানীর জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে সম্প্রতি একাধিক সঙ্গীতানুষ্ঠানে পারফর্ম করেন। শিল্পীর প্রথম এ্যালবাম ‘উষ্ণ চোখের জল’ ২০০৯ সালে প্রকাশ করে ক্রাউন মিউজিক। এ্যালবামের গানগুলো বোদ্ধা দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে শিল্পীর দ্বিতীয় এ্যালবামের গানের রেকর্ডিংয়ের কাজ চলছে। এ্যালবামের গানের সঙ্গীতায়োজন করছেন বাংলাদেশের সঙ্গীতজ্ঞ বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা ইকবাল খান। এ এ্যালবামে ইকবাল খানের লেখা গানের পাশাপাশি শিল্পী জাকারিয়া সুমনের নিজের লেখা গান থাকবে। এ্যালবামটি এ বছরের শেষে দুই বাংলায় রিলিজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এপার বাংলা এবং ওপার বাংলার শিল্পীদের সমন্বয়ে একটি মিক্সড এ্যালবামে সুমনের গাওয়া গান থাকছে। এ এ্যালবামের সঙ্গীতায়োজন করছেন বাংলাদেশের সন্তুরবাদক ওস্তাদ মোহাম্মদ নুরুল হক। জাকারিয়া সুমন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন মায়ের হাত ধরেই তার সঙ্গীত শিক্ষা শুরু। শিল্পীর মাও সঙ্গীতপিয়াসী একজন মানুষ ছিলেন। যার সঙ্গীতের প্রতি আবিষ্টতা তিনি তার কনিষ্ঠ পুত্রের মাধ্যমে পূরণের প্রচেষ্টা করেছিলেন। শিল্পীর নানা ছিলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের একজন বোদ্ধা ও সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি সরোদবাদন এবং কণ্ঠসঙ্গীতেও পারদর্শী ছিলেন। শিল্পীর পিতা একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। তিনিও সব সময়েই শিল্পীকে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে সমভাবে উৎসাহ এবং প্রেরণা দিয়ে এসেছেন। বিবাহিত জীবনে শিল্পীর সহধর্মিনীও একজন সঙ্গীতপিয়াসী এবং শিল্পীর সুরের পথের প্রেরণাদাত্রী। শিল্পী জাকারিয়া সুমন সঙ্গীতে আনুষ্ঠানিক দীক্ষা নিয়েছেন বরিশালে প্রয়াত প-িত নারায়ণ সাহার কাছে। পরবর্তীতে প্রয়াত প-িত মণি দাসের কাছেও সঙ্গীতে তালিম নেন তিনি। এছাড়া অনেক দিন থেকেই তিনি ওস্তাদ মোঃ ইসহাকের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নিচ্ছেন। তিনি সবসময়ই বিশ্বাস করেন, সঙ্গীত শিক্ষার কোন শেষ নেই। তার মতে আমাদের উপমহাদেশের সব গুণী শিল্পীই কোন না কোনভাবে তার শিক্ষক, কেননা, তাঁদের গান শুনে প্রতিনিয়তই তিনি সঙ্গীতের কিছু না কিছু নতুন রস আহরণ করে থাকেন। শিল্পী জাকারিয়া সুমন নিজের প্রতিভা প্রদর্শনে অনেকটাই কুণ্ঠাবোধ করেন। কারণ তিনি সুরের জগৎটিকে একান্তই নিজের মনের খোরাক মনে করেন। নিজের তৃপ্তির জন্য গান করেন। শিল্পী মনের এ তৃপ্তি অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তিনি। বাংলা গান তথা সঙ্গীত নিয়ে শিল্পীর সুন্দর ভাবনা এবং শিল্পের প্রতি তার উদার মানসিকতার জয় হোক, এই প্রত্যাশা।
×