ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ড শংকর কুমার দে ॥ সিটি কর্পে

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ২৪ মার্চ ২০১৫

সিটি নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হচ্ছে  আন্ডারওয়ার্ল্ড শংকর কুমার দে ॥ সিটি কর্পে

শংকর কুমার দে ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে আন্ডারওয়ার্ল্ড। দলীয় প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত ঘোষণা শেষে নির্বাচনী মাঠে প্রার্থীদের প্রচারের সঙ্গে সন্নিবেশ ঘটার আশঙ্কা সন্ত্রাসীদের। কিলার ও সন্ত্রাসী গ্রুপের কদর বেড়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। ঘটানো হতে পারে বোমাবাজি ও নাশকতা। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে যারা চোরাগোপ্তা হামলা করছে, তারা আবার নির্বাচনী প্রচারের মাঠে প্রকাশ্যে তাদের হামলার সুযোগ নেয়ার বিষয়টিও সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা-ভাবনায় নেয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ঘটনা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের নামে সহিংস সন্ত্রাসের পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তার প্রতিফলন ঘটতে পারে নির্বাচনী মাঠেও। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকা- একসঙ্গে চালাতে পারে বিএনপি-জামায়াত জোট। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে বলে প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যেই সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের বাইরে ও আত্মগোপনরত অবস্থায় আছে এমন সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছেÑ শীর্ষ সন্ত্রাসী খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়, জিসান, সুব্রত বাইন, হারেস, মানিক, শাহাদাত, রাজু, খোরশেদ, প্রকাশ কুমার, বিকাশ, আশিক, মহি আলম মহিদ, বুদ্দিন, মোবারক, নিজাম, লেংড়া শরিফ, গেদা সেলিম, মুকুল, বিষা, রানা, ইলিয়াস, নান্নু, কালু, আনোয়ার, ফারুক, শওকত, তপন, শাহাদাত, খোরশেদ, নাসির উদ্দিন ওরফে কানা নাসু, কামাল, আলমগীর, উজ্জ্বল, তুরান, সান্টু, রুবেল, সাগর, রানা, আলী রেজা খান, অয়ন, ইমরান, হৃদয়, মোঃ আলমগীর হোসেন, তাপু, ডাকাত সাগর, কালা মামুদ, প্রিন্স মোহাম্মদ, রাজু, সুন্দর শরিফসহ অনেকেই। এছাড়াও কারাগারে বন্দী জোসেফ, আরমান, সুইডেন, ইব্রাহিমসহ অনেকে ইতোমধ্যেই বন্দী থেকেও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচনী প্রচারের আড়ালে দলীয় ক্যাডার, সন্ত্রাসী, অপরাধীদের সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদেরও নির্বাচনী মাঠে নামানো হতে পারে। পলাতক সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। দেশের বাইরে অবস্থানরত সন্ত্রাসীরাও যোগাযোগ করছে। এমনকি কারাগারে আটক সন্ত্রাসীদের তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গীদের মাঠে নামিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে দেশ-বিদেশে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র করার ইঙ্গিত দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল হতে যাচ্ছে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। শুরু হয়ে গেছে মনোনয়নপত্র বিক্রি। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা চূড়ান্ত না হলেও মনোনয়নপত্র কিনেছেন একাধিক প্রার্থী। মেয়র প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত হওয়ার পরবর্তী ধাপে রয়ে গেছে কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়। কাউন্সিলর প্রার্থী দলীয়ভাবে চূড়ান্ত করা না হলে এলাকাভিত্তিক একাধিক প্রার্থীর নির্বাচনে বিজয় করতে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলতে পারে। সূত্র জানায়, মেয়র প্রার্থীদের বেলায় দলীয় প্রভাব থাকলেও কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার অনেকটা সহজ পথ হলো এলাকায় আধিপত্য। অতীতেও এ বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে, যার যে এলাকায় আধিপত্য বেশি সে সেই এলাকায় নির্বাচিত হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। এমনকি দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও আধিপত্য থাকায় অতীতে অনেকে নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থী এটা মেনে নিতে না পারার ঘটনায় খুনোখুনি ও রক্তারক্তির ঘটনাও ঘটেছে অতীতে। আর এসব ঘটনার জন্য ভাড়ায় আনা হয়েছে কিলার ও সন্ত্রাসী গ্রুপ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থীর সংখ্যাই এবার বেশি হবে। এমনকি কোন কোন ওয়ার্ডে তিন-চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট যদি অংশগ্রহণ করে তবে তাদের সঙ্গে যারা অবরোধ-হরতালের নামে সহিংস সন্ত্রাস করে যাচ্ছে তারাই নির্বাচনী মাঠে এসে সহিংস সন্ত্রাস করতে পারে। আন্দোলনের নামে যারা চোরাগোপ্তা সহিংস সন্ত্রাস করেছে তারাই নির্বাচনী মাঠে এসে প্রকাশ্যে সন্ত্রাস করার সুযোগ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যেই সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। নির্বাচন কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি ঘটতে না পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি আছে। তবে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সার্বিক বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
×