ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন

‘বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র’ একটি পর্যালোচনা

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৬ মার্চ ২০১৫

‘বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র’ একটি পর্যালোচনা

॥ প্রথম পর্ব ॥ ‘সমগ্র আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নামেই।’ দু’জন বরেণ্য মানুষ দুটো বই লিখেছেন। কাজী আরেফ আহমেদ লিখেছেন ‘বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র’ এবং মনিরুল ইসলাম লিখেছেন ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সমাজতন্ত্র।’ কাজী আরেফ আহমেদ এখন আর বেঁচে নেই। ঘাতকের হাতে জীবন দিয়েছেন ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে কালিদাশপুর বাজারের প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। তাঁর লেখা বইটি প্রকাশিত হয়েছে এ বছর ২০১৪ সালের জুলাই মাসে অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে। মনিরুল ইসলাম যাকে মুক্তিযুদ্ধের সাথিরা ‘মার্শাল মনি’ বলে সম্বোধন করেন, তিনি আমাদের মধ্যে আছেন। তাঁর বইটি প্রকাশিত হয়েছে আরও কিছু আগে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। জ্যা পাবলিকেশন্স তা প্রকাশ করেছে। এটা আপতিক নয় যে মনিরুল ইসলাম তাঁর বইটি উৎসর্গ করেছেন বন্ধু কাজী আরেফকে। উৎসর্গপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘এই লেখার বহু তথ্য অকথিত ইতিহাসেরই অংশ। যে অংশের অনেকস্থানেই আমার প্রবেশাধিকার না থাকলেও রাজনৈতিক অঙ্গনের সুদীর্ঘ দিনের বন্ধু কাজী আরেফ আহমেদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে জানার সুযোগ ঘটেছে। যা এ লেখার মূল বিষয়ের বিস্তৃতিতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে।’ দু’জনকে বরেণ্য মানুষ বলে সম্বোধন করেছি। দেশের রাজনীতি সচেতন মহলের বাইরে এ দু’জন বিশেষ করে মনিরুল ইসলাম খুব পরিচিত নন। তার কারণও আছে। দু’জনই কাজ করেছেন আড়াল থেকে। জাসদের একাংশের সভাপতি এবং পরে ঘাতক-দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার অন্যতম রূপকার হিসেবে কাজী আরেফ আহমেদ পাদপ্রদীপের আলোয় কিছুটা এলেও নিভৃতচারী মনিরুল ইসলাম রয়ে গেছেন আড়ালেই। সেজন্যই বরেণ্য বলার কার্যকারণটি পাঠকদের বলা প্রয়োজন বলে মনে করছি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারা জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় বটে, কিন্তু যারা স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেন, তা ফলবতী করতে পরিকল্পনা করেন, তা বাস্তবায়নে অগ্রসর হন নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং শেষ পর্যন্ত স্বপ্ন পূরণ করেন, তেমন মানুষদের মধ্যে একেবারে সামনের কাতারের ছিলেন এই দু’জন। তাই এঁদের বরেণ্য তো বলতেই হবে। কাজী আরেফ আহমেদের বইটি নিয়ে শুরুতে আরও একটু বলতে হবে। বইয়ের রচয়িতা হিসেবে আরও দু’জন বরেণ্য মানুষের নাম আছে। তাঁদের ব্যাপক পরিচিতিও আছে। এঁরা হলেন আবদুর রাজ্জাক এবং সিরাজুল আলম খান। বলা বাহুল্য, স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই দু’জন নেতৃত্বদানকারী ভূমিকাতে ছিলেন। আবদুর রাজ্জাককে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সিরাজুল আলম খান এখনও বেঁচে আছেন। ‘বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র’ পুস্তকটিতে একটি ছোট ভূমিকায় সিরাজুল আলম খান লিখেছেন, ‘কথা ছিলো আমরা তিনজনে মিলেই লিখবো।’ পরে লিখেছেন, ‘আমার মাঝে মধ্যে এখন ভাবতে অবাক লাগে যে, আমরা তিনজন (বয়স ১৯ থেকে ২১) কোন সাহসে বাঙালীর ইতিহাসকে তার সঠিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথমে ‘নিউক্লিয়াস’ এবং পরে ‘বিএলএফ’ ও ‘জয় বাংলা বাহিনী’ গঠনের মাধ্যমে গোটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি সফল আন্দোলন ও সংগ্রামের মন-মানসিকতা গড়ে তুললাম।’ সিরাজুল আলম খান তাঁর ভূমিকায় ইতি টেনেছেন এভাবে, ‘কাজী আরেফ আহমেদ আজ বেঁচে নেই। আবদুর রাজ্জাকও চলে গেছেন। আমরা তিনজন সর্ব বিষয়ে একমত পোষণ করতাম এবং একই পথে হাঁটতাম। ’৬২ থেকে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন বিষয়ে এক মুহূর্তের জন্যও আমাদের মত-পার্থক্য হয়নি। কাজী আরেফ আহমেদ ‘বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র’ শীর্ষক বইটিতে যা লিখেছেন তা আবদুর রাজ্জাকেরও কথা, আমারও কথা। তাই, এ বইয়ের মূল লেখক কাজী আরেফ আহমেদকে সামনে রেখেই আমরা দু’জন এ পর্যায়ে তার সহযোগী হিসেবে থাকব।’ বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র বইটির কথা এই কিস্তিতে বলব। স্বাধীনতার বেশ পূর্বেই গঠিত নিউক্লিয়াসের কথা সচেতনবোদ্ধারা শুনেছেন। কিন্তু তার গড়ে ওঠার ইতিহাস, লক্ষ্য, এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে নিউক্লিয়াসের সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে আমরা জানব কাজী আরেফের এই পুস্তকটিতে। এ জানা গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে একটি সচেতন পরিকল্পনা ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রধানত ওই সব সেনানায়ক যারা পাকিস্তান প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের একটি সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে স্বাধীনতাযুদ্ধকে একটি বিচ্ছিন্ন স্বতন্ত্র ঘটনা হিসেবে দেখা এবং এর পেছনে যে দীর্ঘ, ধারাবাহিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও সংগ্রাম জড়িয়ে আছে, তা হয় অস্বীকার করা অথবা তাকে গৌণও করে দেখানো। কাজী আরেফ আহমেদ তাঁর ‘বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র’ পুস্তকটি উৎসর্গ করেছেন ‘বাঙালীর মুক্তিসংগ্রামে যারা আড়ালে থেকে শুধু দিয়েই গেছেন, তাঁদের’। এই উৎসর্গ থেকে কাজী আরেফের ভাবমানসটি বোঝা যায়। শুরুতে বলেছি বাঙালীর মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পদযাত্রায় আড়ালে থেকেই কাজী আরেফ নিজেও কাজ করে গেছেন। পুস্তকের প্রথম পরিচ্ছদ ‘লেখকের কথা’। দু’পৃষ্ঠার এই ভূমিকাতেই কাজী আরেফ গোটা বইয়ের মূল কথাগুলো বলে দেন। ‘১৯৪৭ থেকে ’৭১ সালের মধ্যে বাঙালীর জাতীয় জীবনে দুটো বড় ঘটনা ঘটেছে, যা বাঙালীর ঐতিহ্যকে মহিমান্বিত করেছে। একটি ভাষা আন্দোলন, অপরটি ’৭১-এর সশস্ত্রযুদ্ধ।’ (পৃষ্ঠা, ১৭) ভূমিকার শুরুর এ বাক্যেই ‘বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র’ নামকরণটির ভিত্তি ও কার্যকারণ স্পষ্ট হয়ে যায়। ভাষাভিত্তিক বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ- যার মধ্য দিয়ে বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র অর্জন সম্ভব হলো- তার পথপরিক্রমায় যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, তার কথাও ভূমিকাতে বলেন তিনি। “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ। ‘জয় বাংলা’ ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। আমাদের লক্ষ্য ছিল, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। আর অগণতান্ত্রিক অবৈধ সামরিক একনায়কত্বের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে পাকিস্তানী রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে তাতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা। স্বাধীনতা আন্দোলনে বহু বাঙালী স্বনামধন্য ব্যক্তিরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সে মানুষদের নামের তালিকা দীর্ঘ। স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ ভাগের আন্দোলন ও সশস্ত্র লড়াইয়ে সেসব নেতার ভূমিকাই নিয়ামক ছিল। সমগ্র আন্দোলন ও সশস্ত্রযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নামেই।” ‘জয় বাংলা’র সঙ্গে ‘অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ও সমাজ’, ‘পাকিস্তানী রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে’- এসব শব্দের প্রয়োগ থেকে বোঝা যায় কাজী আরেফের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিটি সঙ্কীর্ণ ও সীমাবদ্ধ জাতীয়তাবাদের মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। অন্যদিকে সমগ্র আন্দোলনে বহু মানুষের সংগ্রামী ভূমিকার কথা স্বীকার করেও বঙ্গবন্ধুকেই কাজী আরেফ চিহ্নিত করেছেন সেই নেতা হিসেবে, যার নামেই ‘সমগ্র আন্দোলন ও সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল।’ ‘যে জাতি তার পূর্বপুরুষের বীরত্বগাথা এবং ত্যাগের কথা জানে না, সে জাতির জাতীয়তাবোধ এবং দেশাত্মবোধ অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। সে জাতি পৃথিবীতে কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।’ এ কথা বলে এবং তার জন্য নিরপেক্ষ ইতিহাস রচনায় ব্রতী হতে আহ্বান জানিয়ে কাজী আরেফ তাঁর ভূমিকা শেষ করেছেন। (পৃষ্ঠা, ১৮) এবারে মূল পুস্তকে আসি। ‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম’ এই অধ্যায়ে ‘প্রায় পাঁচ হাজার বছরের বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক অস্তিত্ব আর দু’হাজার বছরের বাঙালীর রাষ্ট্রীয়-রাজনীতি ও জাতিত্ববোধের স্পষ্ট ইঙ্গিত’ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করেছেন তিনি। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার জনগণের সংগ্রামী ইতিহাসের ধারা বর্ণনা আছে এই অধ্যায়ে। এ সংগ্রামে বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, প্রমথ মিত্র, রাসবিহারী বসু, সুভাষচন্দ্র বসু ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ভূমিকা ও অবদানের কথা আছে। (পৃষ্ঠা, ২০-২৩) ‘ধর্মরাষ্ট্র’ পাকিস্তানের ২৪ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনে সামন্ত জমিদার ও আমলাদের এক মিশ্র গোষ্ঠীর হাতে রাজনীতি কিভাবে নিপতিত হয় তার বর্ণনা আছে এ অধ্যায়ে। ‘মিস্টার জিন্নাহ ও ডাঃ খান সাহেব ছাড়া পাকিস্তানের রাজনৈতিক চক্রে আর কোন রাজনীতিক জায়গা পাননি।’ (পৃষ্ঠা, ২৩) ‘প্রস্তুতি পর্ব’ এই অধ্যায়টি পুস্তকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৪ সালে অবাঙালী মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যকার দাঙ্গা, ১৯৬৫ সালে আইয়ুবের ‘মৌলিক গণতন্ত্রের’ আওতায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, পাক-ভারত যুদ্ধ ও বাঙালীদের প্রতিক্রিয়া- এসব বিষয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব থেকে ছাত্র প্রতিরোধের মুখে গবর্নর মোনায়েম খানের পলায়ন, বাংলা প্রচলন সপ্তাহের তাৎপর্যপূর্ণ কর্মসূচীর পরিচয় পাওয়া যায়। প্রস্তুতি পর্বের এই সময়কালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা তুলে ধরেছেন কাজী আরেফ। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচীতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাবু ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত প্রতিবাদ করেছিলেন। কাজী আরেফ উল্লেখ করছেন, “সেদিনের পূর্ব পাকিস্তান থেকে ‘গণপরিষদ’ সদস্যের ৫৬% শতাংশ সদস্যের মধ্যে ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের প্রস্তাবকে মাত্র একজন সদস্য, অধ্যাপক রাজকুমার চক্রবর্তী সমর্থন করেছিলেন।” (পৃষ্ঠা, ২৬) ‘ভাষা আন্দোলন’ কিভাবে আন্দোলনের চরিত্রে পরিবর্তন ঘটাচ্ছিল, তারও বিবরণ পাওয়া যায়। “ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিল ধনীদের হাতে। পাকিস্তানী আন্দোলনের কাণ্ডারিরা ছিল মূলত অবাঙালী ও ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধি। একুশের ভাষা আন্দোলন ছিল সে পুরনো নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও অনাস্থা। মধ্যবিত্তের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ...একুশ ছিল পাকিস্তানী রাষ্ট্রব্যবস্থার সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ এবং ব্রিটিশের অনুসৃত পাকিস্তানী রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ। এছাড়াও একুশ হলো বাঙালীর তথাকথিত পাকিস্তানী জাতি সৃষ্টির স্বপ্নকে ভেঙ্গে দেয়ার অনুপ্রেরণা ও অহঙ্কার।’ (পৃষ্ঠা, ২৯-৩০) ছাত্র সমাজ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব দাঙ্গা প্রতিরোধে প্রত্যক্ষ অংশ নিয়েছিল, তার কথা বলতে গিয়ে কাজী আরেফ লেখেন, “পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শীর্ষক একটি লিফলেট সারাদেশে বিতরণ করা হয়। দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। এর সভাপতি ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।’ (পৃষ্ঠা, ৩১) ১৯৬৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আইয়ুবের প্রতিপক্ষ মিস ফাতেমা জিন্নাহর প্রতি পূর্ববাংলার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের কথা প্রসঙ্গে কাজী আরেফ বলেন, “আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে বাঙালীর ক্ষোভই মিস জিন্নাহর প্রতি সমর্থনের গণজোয়ার সৃষ্টি করেছিল এই বাংলায়। ছাত্র সমাজ বিশেষ করে ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজ ছেড়ে মিস জিন্নাহর নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে। ... পূর্ব বাংলায় আইয়ুব ভোট পান ২০,৭২০টি আর মিস জিন্নাহ ১৮০৮০টি। পাকিস্তানের অবাঙালী অংশে আইয়ুব ভোট পান ২৮,৯২৭টি আর মিস জিন্নাহ ১,০২,৮৬৩টি। এই নির্বাচনে ছাত্র যুবসমাজ পাকিস্তানের প্রতি হতাশ হলো। বাঙালীর মোহ ভঙ্গের পালা শুরু হলো। এমনকি যারা পাকিস্তানকে একটা ‘ফেডারেল রাষ্ট্রে’ পরিণত করলে বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত দাবি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করত, তারাও পাকিস্তানের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিল।’ (পৃষ্ঠা, ৩২) ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে ‘পাকিস্তানী শাসকরা বাংলার বিনিময়ে যে কাশ্মীর চেয়েছিল; বাংলার মানুষের মধ্যে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেঁথে যায়।’ এ কথা উল্লেখ করে কাজী আরেফ লেখেন, “বাংলার স্বাধীনতার প্রসঙ্গ তখন শুধুমাত্র আমাদের গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’র সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল না।... এ সময় বাংলার স্বাধিকারের কথা এবং স্লোগান প্রকাশ্যে দেয়া শুরু হয়। (চলবে) লেখক : শিক্ষাবিদ
×