জয় বাংলা! বাংলা মায়ের বীর সন্তান, জয়!
জয় জননী! যাঁর করুণায় মিলল বরাভয়!
দেখছ নাকি উছল প্রেমের অমল রাজ্য জাগে?
উল্লাসে গাও আকাশ বাতাস ছেয়ে দীপক রাগে।
আলোর মাদল রক্তে বাজে : গড়ব মা রাজধানী
‘ভাই ভাই’ এই মন্ত্রে বরি’ তোমার আশীর্বাণী।
চাই যে গানেই ঝলকে ওঠে স্বপ্নে হিরন্ময়!
জয় বাংলা! ফুলের উষায় আঁধার-কাঁটার লয়।
জলে স্থলে ঝংকারে ওই : নেই আর নেই ভয়
পরবাসী এলো ফিরে- বাংলা মায়ের জয়।
ঠাঁই ঠাঁই নয়’ সুরে তুমি যেই মা প্রাণে জাগো
ভাই ভাইকে বরণ করে তোমায় চিনে, মাগো!
তফাত তারা থাকবে কেন বাসল যারা ভালো?
আঁধার আড়াল ভাঙতেই যে ফোটে প্রেমের আলো।
মুক্তিপথের বীর সন্তান করে কি সঞ্চয়?
মা-র চরণে যা আছে দেয় আনন্দ তন্ময়।
[শ্রী দিলীপ কুমার রায় (১৮৯৬-১৯৮০) সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতালোচক, গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও সাহিত্যিক। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী দিলীপ কুমার বাংলাদেশের ন্যাশনাল সঙ তথা জাতীয় গীত ‘ধনধান্য পুষ্পভরার’ রচয়িতা ও সুরকার এবং নাট্যকার ডিএল রায়ের পুত্র। দিলীপ কুমার স্বকণ্ঠে গেয়ে ডিএল রায়, অতুলপ্রসাদ, নজরুল, হিমাংশু দত্ত প্রমুখের গান জনপ্রিয় করে তোলেন। নজরুলের ঘনিষ্ঠ সহচর দিলীপ ঢাকায়ও এসেছেন। প্রতিভা বসুকে গানও শিখিয়েছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতের সুরে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করলেও শান্তি নিকেতন আপত্তি তোলে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সঙ্গীত নিয়ে তাঁর পত্রলাপ রয়েছে। সঙ্গীতবিষয়ক গ্রন্থও রচনা করেন। বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থসংখ্যা ৮০টি। একাত্তর সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে তিনি কয়েকটি গান লিখে সুরও দেন। আকাশবাণীর এলাহাবাদ কেন্দ্র থেকে গানগুলো প্রচার হয়। গানের স্বরলিপি এলাহাবাদ আশ্রমে রয়েছে। স্বাধীনতার পরপরই ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করে গানের রেকর্ডও প্রদান করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে উচ্চশিক্ষাধারী দিলীপ রায় শেষ জীবনে আশ্রমে অতিবাহিত করেন। ১৯৮০ সালে তিনি পরলোকগমন করেন। বিদ্যমান গানটি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।]