ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৭ মার্চ ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ স্বাধীনতা ঘোষণার দিন। বিশেষ দিবস। উজ্জীবিত বাঙালী। সারাদেশের মতোই উৎসবমুখর রাজধানী ঢাকা। পরম প্রাপ্তির দিনে বৃহস্পতিবার লাল-সবুজে সেজেছিল বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শহর। পোশাকে ছিল লাল-সবুজ। গাড়িতে, বাড়ির ছাদে উড়েছে জাতীয় পতাকা। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে। দিনের শুরুতে সাভার স্মৃতিসৌধের দিকে অগ্রসর হয়েছে জনস্রোত। এরপর বেলা যত বেড়েছে, দৃশ্যমান হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের উৎসব অনুষ্ঠান। সকল মঞ্চ থেকে এদিন শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি জানানো হয় বিনম্র শ্রদ্ধা। সেই সঙ্গে জোর দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলা হয়, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের কোন ছাড় নয়। বিচারে আর কোন বিলম্ব নয়। যত দ্রুত সম্ভব শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে যা হচ্ছে তারও সমালোচনা করা হয় বিভিন্ন মঞ্চ থেকে। বক্তাদের বলতে শোনা যায়, নানা অজুহাতে ফাঁসি বিলম্বিত করা হচ্ছে। চূড়ান্ত বিচারে এগুলো অজুহাত ছাড়া কিছু নয়। এভাবে চলতে থাকলে বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন ও রায় কার্যকর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন কোন কোন বক্তা। যেহেতু স্বাধীনতা দিবস, সেহেতু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দৃশ্যটাই আগে বর্ণনা করা যাক। এদিন ঐতিহাসিক উদ্যান উৎসব অনুষ্ঠানের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক এ উদ্যানেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান নেতা বাঙালীকে সবরকমের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। নয় মাস যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী বাহিনী যে জায়গায় আত্মসমর্পণ করে, সে জায়গাটিই আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এখানে এখন সুউচ্চ স্বাধীনতা স্তম্ভ। বাঙালীর অহঙ্কারের প্রতীক ঘিরে ছিলেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। দিনভর আনন্দে উৎসবে মেতেছিলেন তাঁরা। তবে বিশেষ ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘরে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এদিন থেকে খুলে দেয়া হয়েছে ভূগর্ভস্থ জাদুঘরটি। প্রথম দিন কোন প্রবেশমূল্য ধরা হয়নি। এ কারণে একেবারে সাধারণ দর্শনার্থীরাও দেখার সুযোগ পেয়েছে। ভেতরের পরিবেশটা সত্যি ব্যতিক্রম। বাাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিক ইতিহাসটিও খুব সহজে জানা হয়ে যায়। জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ-ই স্বাধীনতা জাদুঘর পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নূরে নাসরীন জানান, স্বাধীনতা জাদুঘর এখন থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শীতকালীন সময় অনুযায়ী, শনিবার থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সুযোগ থাকবে পরিদর্শনের। শুক্রবার উন্মুক্ত থাকবে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। গ্রীষ্মকালে শনিবার থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে জাদুঘর। শুক্রবার উন্মুক্ত থাকবে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার ও অন্যান্য সরকারী ছুটির দিন গ্যালারি বন্ধ থাকবে। আজ শুক্রবার থেকে গ্যালারি পরিদর্শনের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের ৫ টাকা ও ১২ বছর পর্যন্ত শিশুদের প্রবেশের জন্য ২ টাকার টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। স্বাধীনতা দিবসে শাহবাগেও ছিল উৎসবের আমেজ। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এখানে শুরু হওয়া তারুণ্যের আন্দোলন আর নেই। তবে উত্তাপ বুকে নিয়ে জেগে আছে শাহবাগ। বিজয় দিবসে গণজাগরণ মঞ্চের টুকরো অংশগুলো এখানে সমবেত হয়েছিল। আয়োজন করা হয়েছিল ওপেন এয়ার কনসার্টের। যেহেতু শাহবাগ, সেহেতু বার বার ঘুরেফিরে আসে যুদ্ধারাধীদের বিচার প্রসঙ্গ। গানে-কথায় একাত্তরের খুনী, ধর্ষক ও লুণ্ঠনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। স্বাধীনতা দিবসে শিশু-কিশোররাও অংশ নেয় বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার সকালে সেগুনবাগিচায় কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেলার পরিচালক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক হায়াৎ মামুদ। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয় শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। গৌরব ৭১ নামের একটি সংগঠন এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতার শুরুতে শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এএফ শাহীন। এখানে ছবি আঁকতে আসে বিভিন্ন স্কুলের বাচ্চারা। সকলেই নিজেদের মতো করে আঁকে মুক্তিযুদ্ধকে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে চমৎকার এঁকে দেখায় তারা। পরে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
×