ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে আসামির ছড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৭ মার্চ ২০১৫

ঢাকা সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে আসামির ছড়াছড়ি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি মামলার আসামির ছড়াছড়ি। শতাধিক প্রার্থী আছেন নিরাপত্তার ঝুঁকিতে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে নাশকতার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। ফৌজদারি মামলার আসামিদের অনেকেই আদালত থেকে জামিন পাওয়ার আশায় হচ্ছেন নির্বাচনের প্রার্থী। জামিন ছাড়া কোন আসামি প্রার্থী হলে আইনানুগভাবে গ্রেফতারসহ জিরো টলারেন্স দেখাবে আইনশৃংখলা বাহিনী। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ-দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে আছেন এমন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য চার শতাধিক প্রার্থীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্র জানান, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার দু’টি সিটি কর্পোরেশনের (উত্তর-দক্ষিণ) ৯২ ওয়ার্ডের ৪২ লাখ ভোটার ১ হাজার ৯৮১ ভোটকেন্দ্রে যাতে সন্ত্রাসক্ত, অবাধ ভয়-ভীতিহীন পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী কারা হচ্ছেন এবং কোন এলাকায় কারা সন্ত্রাসী তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সন্ত্রাসী-অপরাধীদের গ্রেফতার ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হবে। সূত্র জানান, নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রক্রিয়া জমে ওঠেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট দলীয়ভাবে অথবা নাগরিক সংগঠনের ব্যানারে তাদের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের মেয়র পদে একাধিক প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থী তো আছেনই, এমনকি মেয়র ও কাউন্সিলর পদেও বিদ্রোহী হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়াতে পারেন। অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণই করতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীরা নির্বাচিত তো হয়েছেনই, এমনকি সন্ত্রাসী প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের এক বছর না যেতেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থক নির্বাচিত কমিশনার সাইদুর রহমান নিউটন, বিনয় কৃষ্ণ সরকার, শাহাদাত হোসেন, হাজী আলী আহাম্মদ হোসেন-এই ৪ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর খুন হন। আবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই বছর আগে ’১৩ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দেখা দিলে সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা ঘোষণা দেয়ার পর প্রতিপক্ষের হাতে খুন হচ্ছেন নয়তো বা খুনের হুমকি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ দল ক্ষমতায় থাকায় বর্তমানে আওয়ামী লীগ দলীয় সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী খুন হয়েছেন ২ জন। অতীতের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে খুনোখুনি হয়েছে তার বিষয়টিও পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে এবং এই ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই ধরনের নিরাপত্তার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্র জানায়, পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একদিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা, অপরদিকে নির্বাচনে দলীয় ব্যানারের বাইরে নাগরিক সংগঠনের ব্যানারে অংশ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের দ্বিমুখী নীতির কারণে নির্বাচনের মাঠে সহিংস সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে কিনা কিংবা নিরাপত্তার বিষয়টি কিভাবে নেয়া হবে সেই বিষয়ে কৌশলী ভূমিকা নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এই কৌশলী ভূমিকার অংশ হিসাবেই জামিন ছাড়া কোন আসামি নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। যা বলেছেন ডিএমপি মুখপাত্র ॥ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, নাশকতা, সন্ত্রাসী বা অন্যান্য মামলার কোন আসামি জামিন ছাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে ফৌজদারি আইনে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে, অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচনী কাজে অংশ নিতে পারবেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেক প্রার্থীর পোস্টার আমরা দেখেছি, যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি কিংবা ভাড়াটে কিলার হিসেবে ব্যবহার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তারা আদালতের জামিন না নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারা যদি জামিন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন, তবুও তাদের ওপর আমাদের বাড়তি নজরদারি থাকবে। ফৌজদারি কার্যবিধি ও নির্বাচনী বিধি-বিধান অনুযায়ী কাজ করবেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক সন্ত্রাসী যারা জেলখানায় রয়েছে, বিদেশে অথবা দেশে পলাতক আছে আবার অনেকে জামিনে আছেন। তারা যদি এ নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের প্রভাব ও সন্ত্রাসী কর্মকা- চালান তহলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেউ যেন বৈধ কিংবা অবৈধ অস্ত্র বল প্রয়োগের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার না করতে পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সতর্ক নজরদারি রাখা হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ডিএমপির মুখপাত্র। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আমাদের চাকরি নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। তারা যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবে কাজ করব। তাদের বিধি ও আইনের সমন্বয়ে কাজ করা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবার আছে। তবে কে প্রার্থী হবেন, কে হবেন না সেটা নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন।
×