ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মনসুর হাদি এডেন থেকে জিবুতি পালিয়েছেন!

ইয়েমেনে সৌদি বিমান হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৭ মার্চ ২০১৫

ইয়েমেনে সৌদি বিমান হামলা

হুতি-শিয়া বিদ্রোহীদের অগ্রাভিযানের মুখে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদি তার এডেনের আশ্রয়স্থল থেকে পালিয়ে গেছেন। হুতিরা এডেনের বিমানবন্দর দখল করে নিয়েছে এবং হাদিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এর কয়েক ঘণ্টা পরে সৌদি আরব ঘোষণা করেছে যে, তারা হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে। সানায় রাত্রীকালীন বিমান হামলায় অন্তত ১৭ বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে জানা যায়। ইরান তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটা একটা বিপজ্জনক পদক্ষেপ, যা আন্তজার্তিক দায়দায়িত্ব ও জাতীয় সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারজিয়েহ আফখাম বলেন, সামরিক ব্যবস্থা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে, সঙ্কটের বিস্তার ঘটাবে এবং ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সুযোগ দূরীভূত করবে। খবর এএফপি ও ওয়েবসাইটের। প্রেসিডেন্ট হাদি এডেন থেকে নৌযানে জিবুতি পালিয়ে গেছেন বলে অসমর্থিত খবরে বলা হয়। জিবুতি এডেন উপসাগরের অপর পারে হর্ন অব আফ্রিকার একটি ছোট দেশ। হুতিরা হাদির জন্য ১ লাখ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে। হুতিরা রাজধানী সানাসহ উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা এবং কয়েকটি দক্ষণাঞ্চলীয় প্রদেশ দখল করে ফেলায় ইয়েমেন এখন খ-বিখ- হওয়ার পথে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তারা তায়েজ এবং সেই সঙ্গে লাহজ প্রবেশের প্রচুর এলাকা দখল করে নিয়েছে। উভয় অঞ্চলই এডেনের উত্তরে। লাহজে লড়াইয়ের সময় তারা হাদির প্রতিরক্ষমন্ত্রী মে. জেনারেল মাহমুদ আল সুবাইহিকে আটক করে এবং তারপর নিকটবর্ত আল-আন্নাদ ঘাঁটি দখল করে নেয়। মার্কিন সৈন্যরা সেখান থেকে আগেই চলে যায়। উল্লেখ্য, সাবেক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ হুতিদের সমর্থন দিচ্ছেন। সালেহ ইয়েমেনে তিন দশক শাসন করার পর ২০১১তে আরব বসন্ত অভ্যুত্থানে অপসারিত হন। ইয়েমেনের কিছু সাজসরঞ্জামে সুসজ্জিত এবং প্রতিষ্ঠিত সামরিক ও নিরাপত্তা ইউনিট সালেহর প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছে এবং তা হুতিদের দ্রুত অগ্রাভিযানে সাহায্য করেছে। সৌদি আরব বুধবার রাতে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান শুরুর কথা ঘোষণা করেছে। বিদ্রোহী বাহিনী দেশের বিস্তীর্ণ ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এই আক্রমণ শুরু করা হয়েছে বলে এক সৌদি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ সংঘাত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে একটি প্রক্সিযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করার লক্ষণ দেখা দেয়ার প্রেক্ষাপটে এই বিমান হামলা শুরু হয়েছে। ওয়াশিংটনে সৌদি রাজতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত আদেল আল-জুবায়ের এক বিরল সাংবাদিক সম্মেলনে এই সৌদি ঘোষণা তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্র কর্মকর্তারা বলেছেন, হোয়াইট হাউজের সঙ্গে পরামর্শ করে সৌদি হামলা শুরু করা হয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান ও এ্যারাবিয়া টিভির। জুবায়ের বলেন, সৌদি আরব শিয়া-হুতি বিদ্রোহীদের অগ্রাভিযান রুখে দিতে দৃঢ়সংকল্প প্রায় ১০ জাতির জোটের অংশ। হুতিরা ইয়েমেনের রাজধানী দখল করে মার্কিন সমর্থিত সরকারকে পুরোপুরি পশ্চাদপসারণে বাধ্য করেছে। জুবায়ের বলেন, ইয়েমেনের বৈধ সরকারকে রক্ষায় আমরা যা করা দরকার, তাই কবর। বিমান হামলা শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরে জুবায়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশের নাম উল্লেখ না করলেও আল-এ্যারাবিয়া টিভির খবরে বলা হয়েছে মিসর, মরক্কো, জর্দান, সুদান, কুয়েত, ইউএই, কাতার ও বাহরাইন বিমান হামলায় অংশ নিচ্ছে। খবরে বলা হয়, মিসর, পাকিস্তান, জর্দান ও সুদান স্থল অভিযানে অংশ নিতেও প্রস্তুত। সৌদি আরব সামরিক অভিযানে ১শ’ যুদ্ধ বিমান ও দেড় লাখ সৈন্য পাঠাচ্ছে। হুতি আন্দোলনের সঙ্গে মিত্রতায় আবদ্ধ যোদ্ধাবাহিনী ও সেনা ইউনিটগুলোর দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর এডেন দখলের হুমকির মুখে সৌদি নেতৃত্বাধীন অভিযান শুরু করা হয়েছে। অবরুদ্ধ প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদি এডেনে পালিয়ে যান। এদিকে, হোয়াইট হাউজ প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলায় রসদ ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করছে। ওই অঞ্চলজুড়ে বারাক ওবামার হস্তক্ষেপের ব্যাপকতর সুযোগ সৃষ্টির লক্ষণ হিসেবে ওয়াশিংটন কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হুতি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিমান হামলার সমন্বয় সাধনের জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে একটি যৌথ পরিকল্পনা সেল প্রতিষ্ঠা করছে।
×