ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যর্থ কোহলি, ব্যর্থ ভারত

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৭ মার্চ ২০১৫

ব্যর্থ কোহলি, ব্যর্থ ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সিডনিতে কি ঘটতে পারে তা আগে ভাগেই যেন বলে দেয়া যাচ্ছিল। কারণ এখানে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আগে ১৪ ম্যাচ খেলে মাত্র একবার জিততে পেরেছিল ভারতীয় দল। ২০০৮ সালের ঘটনা সেটি। এ কারণে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়বে ভারত তা কল্পনা করতে পারছিলেন না অনেকে। তবু বিরাট কোহলির দিকে তাকিয়ে একটা বাড়তি অনুপ্রেরণা পাচ্ছিল ভারতীয় শিবির। বিশ্বকাপের আগে অসিদের বিরুদ্ধে যখন সফররত ভারতীয় দল নাকানি-চুবানি খাচ্ছিল তখনই দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন সিডনিতে কোহলি। তাই বিশ্বকাপের সেমিতে তার ওপর বাড়তি ভরসা করাটাই স্বাভাবিক গতবারের চ্যাম্পিয়নদের। তাছাড়া বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১০৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দারুণ শুরু করেছিলেন তিনি। তবে এরপর আর কোহলির ব্যাট হাসেনি সেভাবে। যদিও দলগত নৈপুণ্যের কারণে সে সব ঢাকা পড়ে গেছে। কিন্তু সেমিফাইনালে বিদায় নিয়েছে দল, এবারও ব্যাট হাতে ব্যর্থ কোহলির নৈপুণ্যটা নজরে আসছে সবার। বিশ্বকাপের আগে খুব বাজে একটি সফর কেটেছে ভারতের। অস্ট্রেলিয়ায় টানা আড়াই মাস একেবারে জয় বঞ্চিত ছিল দলটি। এর পেছনে অবশ্য অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির অনুপস্থিতিকেও অনেকে বড় কারণ হিসেবে মনে করেন। ২৬ বছর বয়সী কোহলি সে সময় দলের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। দলকে দারুণ নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি কোহলি ব্যাট হাতেও দারুণভাবে জ্বলে উঠেছিলেন। সিডনি টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৪৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ রান করে তিনি দলকে ড্র উপহার দেন। সিরিজ শেষে অবশ্য কোহলিকে ওই রূপে দেখা যায়নি। ইংল্যান্ডকে নিয়ে হওয়া ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে চরমভাবে ব্যর্থ ছিলেন কোহলি। তিনি চার ম্যাচে করেন ৯, ৪, ৩ ও ৮ রান। ফাইনালে ওঠা দূরে থাক কোন ম্যাচই জিততে পারেনি ভারত। বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের সাফল্য পাওয়া নিয়ে ছিল শঙ্কা। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৭৬ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম জয়ের মুখ দেখে ধোনির দল। আর এ জয়েরও রূপকার ছিলেন কোহলি নিজেই। ক্যারিয়ারের ২২তম শতক হাঁকান তিনি। পরের ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৪৬ করার পরের ইনিংসগুলো ছিল ৩৩*, ৩৩, ৪৪*, ৩৮ ও ৩। মোটামুটি রানের মধ্যেই আছেন ভারতের এ নির্ভরতা। কিন্তু তিনি যে পর্যায়ের ব্যাটসম্যান এত ছোট ইনিংসগুলো যেন তার নামের সঙ্গেই বেমানান। মাত্র ১৪৩ ইনিংসে ২২ শতক হাঁকিয়েছেন। এর চেয়ে দ্রুত আর কেউ ২২ সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি। ধোনিও সেমিতে নামার আগে তাই বলছিলেন, ‘বড় ম্যাচের খেলোয়াড় কোহলি। অবশ্যই দারুণ কিছু করবেন সেমিতে।’ তাছাড়া সিডনির মাঠ। কিন্তু কোনটাই পারলেন না তিনি। চলতি বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম ১ রানেই ফিরে যান সাজঘরে।’ কোহলি প্যাভিলিয়নে, ভারতীয় দলের ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকরাও যেন তখন নিশ্চিত হয়ে গেলেন দলও ফিরে যাবে দেশে। কোহলি দলের অনুপ্রেরণা, উজ্জীবনী শক্তি ব্যাটিংয়ে। আর প্রতিপক্ষ দলের বিশাল সংগ্রহ যখন তাড়া করতে হয় সে সময় কোহলির মতো ব্যাটসম্যানের ১ রানে ফেরাটা অনেক বড় চাপ ব্যাটিং লাইনআপের জন্য। সেটাই হয়েছে। কোহলির পর শেষ দিকে লড়াই করে কিছুটা ব্যবধান কমাতে পেরেছেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়ে অবনত মস্তকেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে ভারতীয় দলকে। ব্যর্থ কোহলি, ব্যর্থ ভারতও।
×