ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঙ্কট কেটে যাচ্ছে ॥ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে নিশা দেশাই

নিজ মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৮ মার্চ ২০১৫

নিজ মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে বলে মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি তুলে ধরে প্রশংসা করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র আরও মনে করে, নিজেদের মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এমনই অভিমত প্রকাশ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশের আর্থ-সামজিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে এদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এছাড়া নিজেদের মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলছে বলে মনে করেন তিনি। আর ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেন, চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজেনাও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রশংসা করে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলতে অন্যের ওপর নির্ভরতার প্রয়োজন পড়বে না। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন অনেক গভীর বলে মন্তব্য করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মার্কিন কূটনীতিক। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বিস্তৃতি বোঝাতে নিশা দেশাই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সফরে এসে প্রয়াত সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বটগাছের চারা লাগানোর প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, ৪৪ বছরে ওই চারা গাছটি এখন পরিপূর্ণ একটি বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ডালপালা বিস্তৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেকড়ও অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে। বৃক্ষটি এখন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জীবন্ত উদাহরণে পরিণত হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে বলেও মন্তব্য করেন বিসওয়াল। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলায় প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ওই বটগাছ গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এসে ঐতিহাসিক ওই স্থানেই একটি বটগাছের চারা লাগান কেনেডি, মুক্তিযুদ্ধকালে মার্কিন নীতির তুমুল বিরোধিতা করে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন যিনি; তার লাগানো চারাগাছটিই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাঙালীর মুক্তির আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক হিসেবে। বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে এবং নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার বলেই তারা এগিয়ে চলেছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে যেতে আমরা বাংলাদেশের মানুষের পাশে ছিলাম এবং সব সময় থাকব। অনুষ্ঠানে ঢাকায় বর্তমান রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট, ড্যান মজেনাসহ পাঁচ সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কয়েক কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। বিসওয়াল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এতটা জোরালো ও গভীর বলেই আমরা অনেকে এসেছি স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, নতুন কর্মস্থল হিসেবে বাংলাদেশে আমি খুব এনজয় করছি। খুব ভাল লাগছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। ক্রমশ ভালর দিকে যাচ্ছে। সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেন, আমি নিজেকে বাংলাদেশী মনে করি। সেজন্য এখানে এসেছি সকলের সঙ্গে কথা বলতে। আই মিস বাংলাদেশ সো মাচ। অনুষ্ঠানে অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। তিনি বলেন, আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। সুশাসন ব্যতীত উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব নয় বলেই শেখ হাসিনার সরকার যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে কেক কাটেন জাতিসংঘের উপমহাসচিব জেন এলিয়াসন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন। অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতিসংঘের উপমহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘের মডেল সদস্য। গণতন্ত্রসহ সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে। জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, কূটনীতিক, জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, যুক্তরাষ্ট্র ও নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় বাঙালী কমিউনিটি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অতিথিদের বাঙালী খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গান ও নাচ পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
×