ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি নির্বাচন দিয়ে ফাঁদে পড়েছে সরকার ॥ খন্দকার মাহবুব

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৮ মার্চ ২০১৫

সিটি নির্বাচন দিয়ে ফাঁদে পড়েছে সরকার ॥ খন্দকার মাহবুব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাবে। তবে এ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অন্যদিকে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দিয়ে সরকার ফাঁদে পড়েছে। গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে ভোট থেকে বিরত রাখা যাবে না। মাহবুবুর রহমান বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির যারা প্রার্থী হবেন তারা কারাগারে অন্তরীণ। তারা মামলায় জর্জরিত। আবার অনেকে জীবন বাঁচানোর তাগিদে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল তফসিল ঘোষণার আগে সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসা। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা জাতীয় নির্বাচন আহ্বান করছি। কিন্তু তারা সংলাপের বিপরীতে সংঘাতের কথা বলছে। আমরা সংঘাত চাই না, সংলাপ চাই। বর্তমানে যে আন্দোলনে চলছে এতে ২০ দল, সুশীল সমাজ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ সবার সমর্থন আছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে আরেকটি নিবার্চন আদায় করতে হবে। মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে এখন অপশাসন চলছে। হত্যা-গুম চলছে। বিচার বিভাগ আইনের শাসন হুমকির মুখে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। দেশ গভীর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে, যা দেখা যাচ্ছে না। দেশের এ অবস্থা নিয়ে গোটা বিশ্ব এখন উদ্বিগ্ন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার হায়দার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া প্রমুখ। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, চলমান আন্দোলন থেকে দৃষ্টি ফেরাতে সরকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নতুন খেলা শুরু করেছে। তারা ভেবেছে, বিএনপি আন্দোলনে আছে, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাবে না। সরকারের পাতা ওই ফাঁদে বিএনপি পা দেবে না। যে মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেবে, জনগণ ঢাকা ও চট্টগ্রামের রাস্তায় নেমে আসবে। জেল-জুলুম-গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না, বিএনপির প্রার্থীদের পরাজিত করা যাবে না। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আজ যদি আমরা সিটি নির্বাচনে না যেতাম, তাহলে সরকার সবচেয়ে বেশি খুশি হতো। তারা বহির্বিশ্বের কাছে বলত বিএনপি নির্বাচনে বিশ্বাস করে না, তারা জঙ্গী সংগঠন হয়ে গেছে। মামলায় অভিযুক্ত প্রার্থীদের সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করেন তিনি বলেন, এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, সিটি নির্বাচনে কোন প্রার্থী মামলার আসামি হলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। এটা সঠিক নয়। যতক্ষণ সাজা না হবে, ততক্ষণ তাকে এভাবে কথা বলে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা যাবে না। নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, কমিশনের উচিত হবে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও যদি তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে, তাহলে জনগণ তাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেবে। আয়োজক সংগঠনের অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ। সঙ্কট নিরসনের দায়িত্ব সরকারের Ñবিএনপি জোট ॥ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনের দায়িত্ব সরকারের বলে মনে করে বিএনপি জোট। শুক্রবার বিকেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলুর নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক গায়েবি বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সবাই এই স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের সকলেরই দায়িত্ব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পর্বতসম যে কোন সমস্যা বা সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করা। আর এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের দায়িত্বই অগ্রগণ্য বলে দেশবাসী মনে করে। নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার অধীনে অবিলম্বে সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে একটি অর্থপূর্ণ সংলাপ আয়োজনে সরকার সচেষ্ট হবে বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা। প্রত্যাশা পূরণ না হলে ২০ দলীয় জোট জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে পিছপা হবে না। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের মানুষের প্রাণ স্বৈরতন্ত্রের পদতলে ওষ্ঠাগত। এই অবস্থায় দেশের মানুষ মুক্তির প্রতিক্ষায় ২০ দলীয় জোটের ডাকে সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। যে দেশে মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার নেই, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও চলাফেরার স্বাধীনতা নেই সেই দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কতটুকু স্বাধীন তা ভাববার সময় এসেছে। স্বাধীন দেশে আমরা যেন আরও বেশি মাত্রায় পরাধীন হয়ে আছি। কোকোর কবরের পাশে বিএনপি নেতাদের দোয়া ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া করেছেন বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। শুক্রবার দুপুরে বনানী কবরস্থানে গিয়ে তারা দোয়া করেন। এতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, দলের সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক শাহজাহান মিয়া সম্রাট, সদস্য সচিব শরীফ মোস্তফা জামান লিটু, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
×