ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্নানোৎসব সম্পন্ন ॥ তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন

সরু বেইলি ব্রিজ ও রাস্তা, পদদলিত হয়ে পুণ্যার্থী মৃত্যুর কারণ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৯ মার্চ ২০১৫

সরু বেইলি ব্রিজ ও রাস্তা, পদদলিত হয়ে পুণ্যার্থী মৃত্যুর কারণ

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী স্নানোৎসব সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৫টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে মহাষ্টমী স্নান উৎসবের লগ্ন শুরু হয়। শনিবার ভোর ৬টা ৫৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে লগ্ন শেষ হয়। লগ্ন শেষ হওয়ার পর পরই পুণ্যার্থীরা বাড়ি ফিরে গেছেন। পুণ্যার্থী ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, সরু বেইলি ব্রিজ ও রাস্তার কারণে মানুষের ভিড়ের কারণে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পকেটমার চক্র সেতু ভেঙ্গে পড়ার গুজব ছড়িয়ে আতঙ্কগ্রস্ত পুণ্যার্থীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার কারণেই লাঙ্গলবন্দের স্নানোৎসবে এই প্রথমবারের মতো পদদলিত হয়ে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে শনিবার ভোরে লগ্ন শেষ হলেও বিকেল পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। অন্যদিকে পদদলিত হয়ে নারীসহ ১০ পুণ্যার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোর্শেদ বাদী হয়ে বন্দর থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। এদিকে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে গাইবান্ধা জেলার চরবাটালিয়া এলাকার মালতী রাণী (৬০) নামের এক বৃদ্ধা নিখোঁজ রয়েছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে। পুলিশ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছে। অন্যদিকে ভোরে লগ্ন শেষ হলেও লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে তিন দিনব্যাপী ‘বাসন্তী’ মেলা চলছে। এদিকে পদদলিত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে ৭ সদস্যে উন্নীত করা হয়েছে। তাদের আজ রবিবার থেকে পরবর্তী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য তুমি আমার পাপ হরণ কর’-এ মন্ত্র উচ্চারণ করে দুর্বা, বেলপাতা, আম, ডাব ও ফুল দিয়ে পাপ মোচনের বাসনায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পুণ্যার্থীরা ব্রহ্মপুত্র নদে ব্রহ্মার কাছে কৃপা প্রার্থনা করেন স্নান সম্পন্ন করেন। পুণ্যার্থী ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, এবার লাঙ্গলবন্দ স্নানে প্রাণহানির ঘটনায় পুণ্যার্থী ও এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বছরের পর বছর এই স্নান উৎসবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হলেও পদদলিত হয়ে প্রাণহানির কোন ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনাই প্রমাণ করে আয়োজক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা। কারণ এমন একটি গুজব ছড়িয়ে যারা প্রাণহানির ঘটনা ঘটাল তাদের চিহ্নিত বা গ্রেফতার করতে পারেনি। যারা গুজব ছড়িয়ে পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াল এবং আতঙ্কে পুণ্যার্থীরা হুড়াহুড়া করে দৌড়াদৌড়ি করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বা পুণ্যার্থীদের শান্ত করতে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে মাইকে শৃঙ্খলার জন্য কোন ঘোষণা দিতে দেখা যায়নি। এছাড়া অন্য বছরগুলোতে বেইলি সেতু পার হওয়ার সময় ভলানটিয়ার দিয়ে হাতে হাত ধরে মানববর্ম তৈরি করত শৃঙ্খলা রক্ষায়। কিন্তু এবারের স্নান উৎসবের আয়োজনে এটি ছিল না। এই কারণে গুজব ছড়িয়ে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয় পকেটমার চক্রটি। কারণ মানুষ হুড়োহুড়িকালে তাদের সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে তারা নিতে পারে। স্নান উদযাপন কমিটির সদস্য এফবিসিসিআই পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা জানান, একই সঙ্গে বেশিসংখ্যক পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটায় এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা ঘটেছে। আগামী বছর পুণ্যস্নানের আগেই লাঙ্গলবন্দের রাস্তা প্রশস্ত করা, নদ যথাযথভাবে খনন করে কচুরি পানামুক্ত রাখা গেলে এই ধরনের অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। স্থানীয় এমপি, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন এই বিষয়গুলো কার্যকরী করা হবে। লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা জানান, দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো পুণ্যার্থীর পদচারণায় মুখরিত ছিল লাঙ্গলবন্দ এলাকা। এবারের স্নানোৎসবে অংশ নিতে দেশ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ থেকে পুণ্যার্থীরা অংশ নেয়। এ বছর ১৫ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে। স্নান শেষে লোকজন সড়ক ও নৌপথে বাড়ি ফিরছে। স্নান উৎসবের সকালে পদদলিত হয়ে ১০ পুণ্যার্থী মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক বলে অভিহিত করে বলেন, আমাদের ধারণা পকেটমারচক্র বেইলি সেতু ভেঙ্গে পড়ার গুজব ছড়ালে পদদলিত হয়ে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। স্নান উৎসবে পদদলিত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক মোর্শেদ বাদী হয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে বলে জানিয়েছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলাম।
×