ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ নিয়ে বিভ্রান্তি

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৯ মার্চ ২০১৫

আজ সারাদেশে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ নিয়ে বিভ্রান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে হরতালের মতো নেতিবাচক কর্মসূচী থেকে আপাতত পিছু হটেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। ৮২ দিনের টানা অবরোধের মধ্যে দফায় দফায় হরতাল দিয়েও কোন সফলতা না আসায় আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে এ কৌশল নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে শনিবার বিকেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলুর নামে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হরতাল-অবরোধ পালনের কথা উল্লেখ না করে বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে আজ রবিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু ঘণ্টা খানেক পর বুলুর নামে পাঠানো আরেকটি বিবৃতিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদসহ সারাদেশে গুম হওয়া নেতাকর্মীদের সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার দাবি এবং গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে দেশব্যাপী সকল জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও সকল মহানগরের থানায় থানায় চলমান অবরোধ কর্মসূচীর পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিল করা হবে বলে জানানো হয়। এভাবে এক ঘণ্টার ব্যবধানে ২ রকমের বিবৃতি দিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বিবৃতি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়। অবশ্য প্রথমবার দেয়া বিবৃতির পর হরতাল-অবরোধ ওঠে গেছে বলে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকলে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার টনক নড়ে এবং এক ঘণ্টা পর চলমান অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত রেখে আরেকটি বিবৃতি দেয়া হয়। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ করে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার কৌশল নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ জন্য প্রস্তুতি জোরদার করতে ৩ জানুয়ারি রাত থেকে বাসা ছেড়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন খালেদা জিয়া। পরদিন তার গুলশান কার্যালয়ের পাশে ব্যারিকেড দিয়ে র‌্যাব-পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ৫ জানুয়ারি দুপুরে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। ওইদিন বিকেলে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশ করার ইচ্ছা পোষণ করেন খালেদা জিয়া। এ জন্য তিনি তার গাড়িতে ওঠে বসলেও পুলিশ গেট খুলে দেয়নি। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে থাকা মহিলা দলের নেতাকর্মীরা চিৎকার চেচামেচি করে গেটে লাথি মেরে প্রতিবাদ জানাতে থাকলে পুলিশ তাদের ওপর পিপার স্প্রে মারে। পরে খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে তাকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হতে না দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে টানা অবরোধ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন। এর পর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ছুটির দিন বাধে প্রতিদিন হরতাল পালন করে আসছে বিএনপি জোট। প্রথম দফায় রবিবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা থেকে টানা ৭২ ঘণ্টা এবং দ্বিতীয় দফায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা এভাবেই বিবৃতি দিয়ে প্রতি সপ্তায় হরতালের ঘোষণা দেয়া হতো। তবে গত বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালন শেষে আর নতুন করে হরতাল ডাকেনি বিএনপি জোট। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হওয়ার পর ১০ মার্চ ১২ ঘণ্টার জন্য হরতাল শিথিল করা হয়েছিল। কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিল আজ রবিবার থেকে আবার হরতাল পালনের ঘোষণা দিতে পারে। কিন্তু শনিবারের বিবৃতিতে অবরোধ অব্যাহত রাখা হলেও হরতাল পালনের কোন ঘোষণা না দিয়ে আজ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেয়া হয়। সিটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে জনগণ মানবে না Ñএমাজউদ্দীন ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে জনগণ মানবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও শতনাগরিক কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ। শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা ও জিয়া শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এমাজউদ্দীন বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা নর্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার দাবি জানিয়েছি। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা না হলে এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে তাও জানিয়েছি। আর নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে মিছিল-মিটিং অপরিহার্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে নির্বাচন কমিশন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে ৪ কোটি ৮২ লাখ জনগণকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা হয়। বাকি আসনে ৬০ শতাংশ জনগণ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভোট দেয়া থেকে বিরত থেকেছে। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে যদি প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় তাহলে দেশের জনগণ তা সহ্য করবে না। জিয়াউর রহমানকে আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে এমাজউদ্দীন বলেন, বাকশাল গঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি সে সময় আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে সকল রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিল। সে সময় আওয়ামী লীগও রাজনৈতিক দল হিসেবে পুনর্জীবিত হয়েছিল। এ হিসেবে কেউ যদি বলে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা তাহলে মিথ্যা নয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের যদি প্রথম সৈনিক হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করা হয় তিনি জিয়াউর রহমান। কারণ সঙ্কটময় মুহূর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা না করলে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্ম প্রকাশ করত না। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম রানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদ আয়োজিত আরাফাত রহমান কোকোর স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে যোগ দেন প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ। সংগঠনের আহ্বায়ক শাহজাহান মিয়া সম্রাটের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজী, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ। গুম-খুন করে বিরোধী দল দমনের চেষ্টা চলছে- শওকত মাহমুদ ॥ গুম-খুন করে বিরোধী দল দমনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শওকত মাহমুদ। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গুম-খুণের প্রতিবাদে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ড্যাব সভাপতি ডা. এ কে এম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, ইঞ্জিনিয়ার হারুন অর রশিদ প্রমুখ।
×