ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদকে ‘না’ বলুন

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৯ মার্চ ২০১৫

জঙ্গীবাদকে ‘না’ বলুন

জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ এক ভয়াল আতঙ্কের নাম। জঙ্গীবাদের প্রধান কর্ম মানুষ হত্যা, সেই সঙ্গে প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করা। ধ্বংস করার ব্রতে তারা সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে আসছে। তারা ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, ভাষার নামে, গোত্রের নামে মানুষ হত্যা করছে অবলীলায়। এমনকি মানুষকে পুড়িয়ে মারা, শিরñেদ করা এবং তা ভিডিও আকারে নেটে ছড়িয়ে দেয়ার মতো কাজও অনায়াসে করে যাচ্ছে। তারা ভিন্নমতকে গ্রাহ্য করে না। নিজেদের বর্বর চিন্তা, নারকীয় ভাবনা, নৃশংস মতামতকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বজুড়ে জঙ্গীবাদ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এমনকি কোন কোন দেশের অস্তিত্বও বিপন্ন করে তুলছে। এদের অস্ত্রশস্ত্র ও রসদের কমতি নেই। বাংলাদেশও জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা শুরু হয়। আফগানিস্তানে প্রশিক্ষিত বাঙালী মুজাহিদদের হাত ধরে জঙ্গীদের আত্মপ্রকাশ ঘটে বঙ্গভূমিতে। ১৯৯২ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপির ছত্রছায়ায় জঙ্গীরা এদেশে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ শুরু করে। এমনকি ঘোষণা দেয়, ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান।’ ১৯৯৮ সালে দেশবরেণ্য কবি শামসুর রাহমানের ওপর হামলা চালায় তারা। এরপর থেকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা একের পর এক হত্যা করছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাগ্রসর এবং অগ্রসর চিন্তার লেখক ও গবেষকদের। তারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের পরিকল্পনায় শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর তারা একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা চালায়। এজলাসে কর্তব্যরত বিচারকদেরও হত্যা করে। তাদের হত্যার তালিকা দীর্ঘ। পূর্ব ঘোষণা দিয়েও তারা হত্যা করে আসছে শিক্ষিত জনদের। জঙ্গীরা শিক্ষা ব্যবস্থার বিরোধী। তাই পাকিস্তান, নাইজিরিয়াতে তারা স্কুলে হামলা চালায়। বাংলাদেশেও তারা ২০১৪ সালে পাঁচ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছে, পাঠ্যপুস্তকে অগ্নিসংযোগ করেছে। অরাজকতা, নাশকতা, সহিংসতা জঙ্গীদের মূলমন্ত্র। মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলাই তাদের লক্ষ্য। তারা আইন-কানুন, সংবিধান, আইনের শাসন, গণতন্ত্র এসব কিছুই গ্রাহ্য করে না। অন্ধকারের যাত্রী এই জঙ্গীদের সন্ত্রাস আর কালো ছায়ার বিস্তার ঘটেছে এই বাংলাদেশেও সাম্প্রতিককালে। দেশ যখন উন্নতির দিকে, শিক্ষার বিস্তার ঘটছে তৃণমূল পর্যায়ে, তখন ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা ও ভয়-ভীতির সংস্কৃতিকে পুঁজি করে তারা মাঠে নেমেছে সশস্ত্র পন্থায় ধ্বংস করতে দেশকে। বিএনপি ও জামায়াত জোট জঙ্গীবাদের কাঁধে সওয়ার হয়ে গত তিন মাস ধরে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা ছুড়ে বাসসহ বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারছে। তাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ নিরীহ সাধারণ মানুষ রেহাই পাচ্ছে না। তারা পরীক্ষা এবং স্কুল চালু রাখায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাহাড়-জঙ্গলে তারা অস্ত্রের মজুদ গড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জঙ্গীবাদ নির্মূলে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। জঙ্গীবাদ মাদকাসক্তি থেকেও ভয়াবহ। এই আসক্তিতে শিক্ষিত তরুণরাও জড়িয়ে পড়েছে। দেশ, জাতি ও বিশ্ববাসীর শত্রু এই জঙ্গীবাদ। তাদের নির্মূল করা মানুষের মৌলিক দায়িত্ব। আর সেই বোধ থেকে জঙ্গীবাদকে ‘না’ বলতেই হবে।
×