ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাঙ্গলবন্দে মর্মান্তিক মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৩০ মার্চ ২০১৫

লাঙ্গলবন্দে মর্মান্তিক মৃত্যু

পুণ্যস্নান করতে এসে নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে পদদলিত হয়ে দশজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাটি সারাদেশের মানুষকে শোকাভিভূত করেছে। একই সঙ্গে ধর্মীয় আচার-আচরণ ও অনুষ্ঠানাদিতে নেয়া ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার বিষয়টিকেও করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। শুক্রবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। প্রতিবছর চৈত্র মাসের শুক্ল তিথির অষ্টমীতে নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ, ব্রহ্মপুত্র নদে এই পুণ্যস্নান হয়। শুক্রবার ভোর ৫টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড থেকে তিথি শুরু হওয়ার পরেই ব্রহ্মপুত্র নদে হাজার হাজার হিন্দু পুণ্যার্থী স্নানে নেমে পড়েন। এখানকার ১৬টি ঘাটের মধ্যে পুণ্যস্নান হয়ে থাকে। তবে রাজঘাটে স্নান করা গেলে পাপমোচনসহ অধিক পুণ্য অর্জন হবে প্রচলিত এমন বিশ্বাস থেকে এ ঘাটে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। রাজঘাটে সকাল ৯টার দিকে একটি বেইলি ব্রিজের একপাশে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বসে পড়েন। এ সময় পেছন থেকে আসতে থাকা হাজার হাজার মানুষ একজন অন্যজনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে থাকেন। এ রকম পরিস্থিতিতে সেখানে ব্রিজ ভেঙ্গে গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে জনস্রোতের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। তখনই এই মর্মন্তুদ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই দশজন পদদলিত হয়ে মারা যান এবং অনেকে আহত হন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক পুণ্যার্থী পুণ্যস্নানে অংশ নেন। পুণ্যার্থীদের অভিযোগ, এ বছর আয়োজনস্থলে চরম অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা গেছে। স্নানঘাটগুলোতে কচুরিপানা পরিষ্কার না করায় তাদের দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন মর্মান্তিক এ মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নানের এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেই গণমাধ্যমকে বলেন, লাঙ্গলবন্দে প্রতিবছর লাখ লাখ পুণ্যার্থী আসে। সেখানকার রাস্তাগুলো তেমন প্রশস্ত নয়। প্রতিবছরই পুণ্যার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এতে সরু রাস্তা ও অপ্রশস্ত ব্রিজের জন্য চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ বছর যে জায়গায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটাও ছিল সরু রাস্তা। লাঙ্গলবন্দের এই মর্মান্তিক ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সড়ক পুনর্নির্মাণ, সেতু প্রশস্তকরণ, ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেউ প্রত্যাশা করে না।
×