ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানবসম্পদ ও স্বচ্ছ শাসন

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ৩০ মার্চ ২০১৫

মানবসম্পদ ও স্বচ্ছ শাসন

আছে বহুমুখী বাধা, আছে নানা বিঘ্ন; তবু এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। আছে শত্রুতা, আছে উল্টোগাড়ির অপচালক তবু সঠিক পথে অগ্রসরমান আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি। ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ কিংবা ‘বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের পরীক্ষাগার’- এ জাতীয় শ্লেষ ও বিদ্রূপ গায়ে না মেখে মানুষ আত্মশক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে বিশ্বমানচিত্রে মর্যাদার আসনে স্বদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সম্প্রতি প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির বিষয়টির স্বীকৃতি মিলেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশের কাছে বাংলাদেশ এখন অনুকরণীয়। শুধু অর্থনীতি ও মানব উন্নয়ন নয়; বাংলাদেশ এশিয়ার কোন কোন দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান মধ্যসারির দেশগুলোর তালিকায় আছে ১৫২ নম্বরে। সেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৭। গত বছর ইউএনডিপির সর্বশেষ বার্ষিক উন্নয়ন সূচকে দেখা গেছে, মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ আগের বছরের তুলনায় এক ধাপ এগিয়ে ১৪২তম অবস্থানে উঠেছিল। বিশেষত নারী-পুরুষ সমতা উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় ভাল। আর সার্বিকভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের অগ্রগতির ধারা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুততর। লক্ষণীয়, আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএফপিআরআই) বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বলা হয়, ২০১৪-তে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি সাধনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। ১৯৭২ সালের এক কোটি দশ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনের তুলনায় এখন উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন। জমি শতকরা ১৫ ভাগ কমলেও বেড়েছে উদ্যোগ, পরিশ্রম, প্রণোদনা এবং কৃষিজীবী ও জমির উৎপাদনশীলতা। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে আমাদের ক্রমোন্নতি বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচিত বিষয়। আমাদের সীমিত আয়তনের দেশটির বিশাল জনগোষ্ঠীর বিপরীতে সৃষ্টি করা যায়নি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ। তবু মানবগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিতে গতি এসেছে। সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। দেশে পেশাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা, কারিগরি ইত্যাদি জনসংখ্যা অনুপাতে বেশ কম। ফলে বেকারত্বের হার কমানোর ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি। স্মরণযোগ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান তার কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিশ্বঅর্থনীতিতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এখন চীন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরাশক্তি। তাদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল কারণ, সময়োপযোগী প্রযুক্তিকে বাহন করে নিজেদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগানো। উল্লেখ্য, স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা সূচক তথা ওপেন গবর্নমেন্ট ইনডেক্স ২০১৫-এ বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৭৩তম। একটি দেশে সরকার পরিচালনায় সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা ও ধারণার ওপর ভিত্তি করে ওপেন গবর্নমেন্ট সূচক তৈরি করা হয়ে থাকে। ওয়াশিংটনভিত্তিক স্বাধীন সংস্থা ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট ডব্লিউজেপি চারটি মানদ- ধরে এটি তৈরি করে থাকে, যা সরকারের স্বচ্ছতার মাত্রা প্রকাশ করে। বাংলাদেশের ক্রমোন্নয়নের পথে এগিয়ে চলার পেছনে রয়েছে এ দেশের সাধারণ মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, শত বাধাবিপত্তির মুখেও সামনে এগিয়ে চলার অদম্য উদ্দীপনা। রাষ্ট্র সকল সময়ে মানবের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি, এটা অনস্বীকার্য। তারপরও উন্নয়নের বর্তমান গতিধারা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। তবে এক্ষুনি আত্মসন্তুষ্টি নয়। আমাদের আরও দ্রুত উন্নতি করার সুযোগ অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।
×