ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থী কারাগারে

তিন সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩১ মার্চ ২০১৫

তিন সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী সাতজনের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন মামলার আসামি। কারাগারে আছেন অন্তত পাঁচজন। নির্বাচনী কাজে মাঠে নেই হেভিওয়েট প্রার্থীদের কেউ। সরকারবিরোধী প্রচারণা ও কৌশলী অবস্থান নিয়ে বিএনপি নির্বাচনের ফল নিজেদের ঘরে তুলতে চায়। এদিকে তিন সিটি নির্বাচনেই এবারের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা বেশ। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন থেকে সরানো না হলে জয় নিশ্চিত করা কঠিন হবে। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে হলে ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে দলীয় বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি তো রয়েছেই। অন্যথায় গাজীপুর, রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল, সিলেট ও খুলনার মতো সিটি কর্পোরেশনে হারতে পারেন ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা। এই ধারাবাহিকতায় পূর্বের সফলতা ধরে রাখার চেষ্টায় ২০ দল। সঙ্গত কারণেই এবারের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করা উভর জোটের জন্যই বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করছেন আনিসুল হক। সম্প্রতি তাঁকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। ব্যক্তিগত জীবনে সরাসরি রাজনীতিতে নেই তিনি। এক সময়ে আলোচিত টেলিভিশন উপস্থাপক ছিলেন এই শিল্পপতি। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই), সার্ক চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এসসিসিআই) সাবেক সভাপতি এবং মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে অর্নাস করেন। বোস্টন বেনটলি ইউনির্ভাসিটি থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন কারাবন্দী আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক। দেশের অন্যতম এই ব্যবসায়ী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তিনি ঢাকা উত্তরে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর ছেলে তাবিথ আউয়ালও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস দক্ষিণ সিটি মেয়র পদে বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন। নব্বইয়ের দশকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন এবং বিএনপি সরকারের আমলে তিনি মন্ত্রী হন। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। মির্জা আব্বাস বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। সাঈদ খোকন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বাবা ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি রাজনৈতিক মামলা ছিল। ওই সব মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। সম্প্রতি সাঈদ খোকনকে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রাজনীতির মাঠে তাঁর রয়েছে ক্লিন ইমেজ। বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা ও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান এবং একে স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়বেন। গত ২৪ জানুয়ারি রাজধানীর একে স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে তাঁকে আটক করে র‌্যাব-পুলিশের একটি যৌথ ইউনিট। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৫ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালামও বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আছেন। এছাড়াও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন দক্ষিণে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আবুল বাশারও দক্ষিণে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঢাকা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেনÑ সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মাওলা রনি, সারাহ বেগম কবরী, নগর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল আওয়াল, বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা এখলাছ উদ্দিন মোল্লাসহ অনেকেই। এছাড়াও ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের পক্ষ থেকে মেয়র প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ছেলে এবং আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিমের জামাতা ববি হাজ্জাজও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করার পরদিন বিশেষ উপদেষ্টার পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেন জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। জাতীয় পার্টি থেকে বাহাউদ্দিন বাবুল ও হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন মেয়র পদে লড়বেন। ১০ এপ্রিল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ॥ আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ১০ এপ্রিল থেকে ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার ইসি সচিবালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রার্থী যে কেউই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে বিধিমালায়। রবিবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত এক প্রার্থীকে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসায় ২০ হাজার জরিমানা করেছে। সুতরাং বিধি ভঙ্গ করে কেউ পার পাবেন না। তাই বিধিমালা অনুযায়ী প্রার্থীদের আচরণ করতে হবে। সচিব বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে আছেন। তাঁরা আচরণ বিধিমালা প্রতিপালনের বিষয়টি দেখছেন। আগামী ১০ এপ্রিল থেকে থেকে ছয়জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতি সিটিতে নিয়োগ করা হবে। তাঁরা ১৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন। তিনি প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অনেক দিন পর নির্বাচন হচ্ছে। বিশেষ করে ডিসিসি নির্বাচন দীর্ঘদিন পর হচ্ছে। এখানে যাতে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিতে পারেন, সেজন্য প্রার্থীরা আচরণবিধি মেনে চলবেন। আগামী ২৮ এপ্রিল ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে মোট ৬০ জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ও ১৭৭৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আনিসুল হককে সমর্থনের আহ্বান ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থী আনিসুল হককে ‘শিক্ষিত ব্যবসায়ী’ উল্লেখ করে তাঁর প্রশংসা করলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তাঁরা বলেছেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে মহানগরের উত্তর অংশ থেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রার্থী আনিসুল হককে মেয়র বানাতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়নি। সামগ্রিকভাবে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহানগরের দুই অংশের নির্বাচনে দুইজনকে সমর্থন করেছেন। এরমধ্যে উত্তরে শিল্পপতি আনিসুল হককে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও উনি (আনিসুল হক) সরাসরি আওয়ামী লীগ করেননি। তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোক। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোটি কোটি নয়, হাজার কোটি টাকার মালিক অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যাঁদের মধ্যে অশিক্ষিত ব্যবসায়ী রয়েছেন। কিন্তু আনিসুল হক শিক্ষিত ব্যবসায়ী। তিনি বিজিএমইএর নেতৃত্ব দিয়েছেন। এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গার্মেন্টস শিল্পকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এখন বহির্বিশ্বে তৈরি পোশাকের উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়। এক্ষেত্রে আনিসুল হকের অনেক অবদান রয়েছে। ড. আব্দুর রাজ্জাকের পর আলোচনা সভার সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তর কৃষক লীগের সভাপতি মাকসুদুল আলম, এর আগে ড. আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা সিটি দক্ষিণের প্রার্থী সাঈদ খোকনকেও জয়ী করতে আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, তরুণ নেতা সাঈদ খোকনকে আমরা সমর্থন করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু করার আহ্বান ২০ দলের ॥ আসন্ন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সোমবার বিএনপির যুগ্মমহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু স্বাক্ষরিত এক গায়েবি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০ দলীয় জোট ও দেশবাসী আশা করে, আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। আর তা না হলে জাতির নিকট আবারও প্রমাণ হয়ে যাবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন দন্তহীন বাঘ ছাড়া আর কিছুই নয়। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দস্যুবৃত্তি অবলম্বন করলে এবং এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সহযোগিতা করলে জাতি কখনই বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমা করবে না।’ এবারকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে ২৬ ও সাধারণ কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে ৭০৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ২১ ও সাধারণ কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে ৬২৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
×