ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুত লাইন উন্নয়নসহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুত লাইন উন্নয়নসহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি উন্নয়নসহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৪০ হাজার ৪৮১ কোটি ৭৫ লাখ, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১২ হাজার ১৭৮ কোটি ৬০ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সফিকুল আজম, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলমসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করা মানে নির্ভরশীলতা নয়। কেননা এটা ব্যবসা। এর মূল বিষয় হলো লাভজনক কিনা। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুত আনলে অনেক বেশি সাশ্রয়ী হবে। কেননা আমরা তৈরি করা ফ্রেস বিদ্যুত পাব। এক্ষেত্রে আমাদের জমি, কোম্পানি তৈরির ব্যয় এবং পরিবেশের ক্ষতি বিষয়ে ভাবতে হচ্ছে না। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ (ভেড়ামারা) ভারত (বহরমপুর) বিদ্যমান গ্রীড আন্ত:সংযোগের ক্ষমতা বর্ধিতকরণ (৫০০ মেগাওয়াট) প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৪০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ত্রিপুরা (ভারত) কুমিল্লা (দঃ উপকেন্দ্র) (বাংলাদেশ) গ্রীড আন্তঃসংযোগ প্রকল্প, এর ব্যয় ১৭৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বিসিক শিল্পনগরী, শ্রীমঙ্গল (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, এর ব্যয় ৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। রৌমারী-তুরা স্থলবন্দর সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ৩৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। হেলথ পপুলেশন এ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম (সংশোধিত) প্রকল্প, এর ব্যয় ৫১ হাজার ৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্প, এর ব্যয় ৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে, বাংলাদেশ ভেড়ামারা)-ভারত (বহরমপুর) বিদ্যমান গ্রীড আন্তঃসংযোগের ক্ষমতা বর্ধিকরণ (৫০০ মেগাওয়াট) প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ ভেড়ামারা) ভারত (বহরমপুর) গ্রীড আন্তঃসংযোগের বিদ্যমান ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ভারত হতে বাংলাদেশে আমদানি করা এবং উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা। এ প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রম গুলো হচ্ছে, ভেড়ামারা ঈশ্বরদী ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন (রিভার ক্রসিংসহ) নির্মাণ ১২ কিলোমিটার। ভেড়ামারা ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক উপকেন্দ্র নির্মাণ। বিদ্যমান ঈশ্বরদী ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্রে ২টি এবং ভেড়ামারা এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক উপকেন্দ্রে ২টি ২৩০ কেভি বে সম্প্রসারণ মোট ৪টি বে-সম্প্রসারণ। বিদ্যুত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে ভারত থেকে আরও বিদ্যুত আমদানি করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এজন্য ভারতের বহরামপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় বিদ্যমান ৫০০ মেগাওয়াট গ্রিড আন্তঃসংযোগ স্থলে আরেকটি ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিদ্যমান হাইভোল্টেজ ডিসি কারেন্ট (এইচভিডিসি)-২ স্থাপন করা হবে। এছাড়া ১২ কিলোমিটার ভেড়ামারা ঈশ্বরদী ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ হবে। চলতি মাসেই এ লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)। সূত্র জানায়, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সরকার বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। গত কয়েক বছর থেকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ গুরুত্ব। কিন্তু এরপরও বিদ্যুত ঘাটতি মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বিদ্যুত আমদানি জরুরী হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের বহরামপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় বিদ্যমান ৫০০ মেগাওয়াট গ্রিড আন্তঃসংযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ভেড়ামারা-ঈশ্বরদী ১২ কিলোমিটার ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন (রিভার ক্রসিংসহ) নির্মাণ, ভেড়ামারা ৫০০ মেগাওয়াট এইচ ভি ডিসি ব্যাক টু ব্যাক উপকেন্দ্র (সেকেন্ড মডেল) নির্মাণ, বিদ্যমান ঈশ্বরদী ২৩০/১৩২ কেভি উপকেন্দ্রে দুটি এবং ভেড়ামারা এইচ ভি ডিসি ব্যাক টু ব্যাক উপকেন্দ্র (সেকেন্ড মডেল) দুটি ২৩০ কেভি বে সম্প্রসারণ করা হবে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে সাড়ে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করবে সরকার। প্রথম ধাপে ১০০ মেগাওয়াট এবং পরবর্তীতে আরও ২৫০ মেগাওয়াট আমদানি করার হবে। ত্রিপুরার পালাইতানা বিদ্যুত কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুত আনা হবে বাংলাদেশে। এ লক্ষ্যে ৪৩ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুত লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ত্রিপুরা (ভারত)-কুমিল্লা (দঃ) উপকেন্দ্র (বাংলাদেশ) গ্রিড আন্তঃসংযোগ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে বরাদ্দ কমেছে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টিখাত উন্নয়ন কর্মসূচীর। মোট বরাদ্দ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ৯১১ কোটি টাকা কমিয়ে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদ দেয়া হয়। ২০১১ সালের জুলাইয়ে ৫৬ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করে হেলথ, পপুলেশন এ্যান্ড নিউট্রিশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এইচএনপিএসপি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নয়ন সহযোগীরা টাকা না দেয়ায় পাঁচ বছর পর কর্মসূচীর ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী খাত থেকে ৩৯ হাজার ৭৪৮ কোটি ৬৯ লাখ এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১১ হাজার ৩৩৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কর্মসূচীর অর্থ কাটছাঁট বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ ঋণ পাওয়ার কথা ছিল, তা পাওয়া যায়নি। সে জন্য কর্মসূচীর ব্যয় কমানো হয়েছে। কর্মসূচীর আওতায় যেসব কাযর্ক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
×