ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-ভারত মর্যাদার লড়াই অমীমাংসিত

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত মর্যাদার লড়াই অমীমাংসিত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হারের (তিন আম্পায়ারের বদৌলতে) বদলা নেয়ার সুযোগ ছিল ফুটবলের মাধ্যমে? কিন্তু বাংলাদেশ যুবদল পারেনি তা। নিজেদের ফেসবুকে হেমন্ত ও সোহেল রানা লিখেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে জয় কুড়িয়ে নেয়ার। কিন্তু সে জয় রয়ে গেল অধরাই। ‘এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’ থেকে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই বিদায় নেয়া দুই দল স্বাগতিক ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ খ্যাত বাংলাদেশ যুবদল বনাম ‘ওয়ারিয়র্স হিন্দু’ খ্যাত ভারত যুবদলের ম্যাচে কেউই জেতেনি। ম্যাচটি শেষ হয় গোলশূন্য ভাবে। তবে দু’দলের কেউই না জিততে পারত তৃতীয় এক প্রতিপক্ষ। তার নাম ‘লোডশেডিং! হ্যাঁ, আশ্চর্য হলেও এটাই বাস্তব সত্য। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের দ্বিতীয় এই ম্যাচটি শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টায়। প্রথমার্ধে কোন দলই গোল করতে পারেনি। সন্ধ্যা ৭টাও দ্বিতীয়ার্ধের খেলা তখনও শুরু হয়নি। দুই দলের রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলাররা তখন বল নিয়ে মাঠে নেমে অনুশীলন করছেন। মূল একাদশের ফুটবলাররা তখনও মাঠে নামেননি। খেলা শুরুর তখনও ছয় মিনিট বাকি। এমন সময় হঠাৎ করেই চারদিকে নেমে এলো প্রগাঢ় অমানিশা! নিভে গেল স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট। কোথাও কোন বিদ্যুত নেই। এমনকি প্রেসবক্সেও তখন কবরের নিকষ কালো আঁধার। এভাবে কেটে গেল ৩৩ মিনিট (তবে বাফুফের ভাষ্যমতে ২৭ মিনিট)। খোঁজ নিয়ে জানা গেল গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে শুধু বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ এলাকায় বিদ্যুত চলে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই বিদ্যুত চলে এলেও স্টেডিয়ামে আসেনি। কারণ বিদ্যুত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় কারিগরি সমস্যা। ফলে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ার আশঙ্কায় পড়ে। অনুসন্ধানে জানা যায় ম্যাচ কমিশনার চাইনিজ তাইপের চ্যাং চিন-পো দুই দফায় আধঘণ্টা করে মোট একঘণ্টা অপেক্ষা করবেন খেলা শুরু বা বিদ্যুত আসার জন্য। তারপরও যদি খেলা শুরু করা না যায় তাহলে তিনি যা সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ আর পরিত্যক্ত হয়নি। গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়ে আবার ফিরে এসেছে বিদ্যুত ‘মহাশয়’! শঙ্কা কাটিয়ে আবার শুরু হয় ম্যাচ। তবে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করেও কোনপক্ষই কাক্সিক্ষত গোলের দেখা পায়নি। ম্যাচে পরিপূর্ণ দর্শক সমর্থন নিয়ে, তুলনামূলক বেশি আক্রমণ শাণিয়ে এবং গোলের সুযোগ বেশি সৃষ্টি করেও দুর্ভাগ্যবশত গোল পায়নি স্বাগতিক বাংলাদেশ। ১৬ মিনিটে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড সজীব বল নিয়ে প্রতিপক্ষ বক্সে ঢুকে যে শট নেন, তা ভারতীয় গোলরক্ষক অমৃন্দর বল ধরে ফেললে গোলবঞ্চিত হয় লাল-সবুজরা। ৮২ মিনিটে ডি বক্সের খুব কাছে হেমন্তকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ভারতীয় ডিফেন্ডার সন্দেশ। কিন্তু ফ্রিকিক পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় ক্রুইফের শিষ্যরা। ম্যাচটি যতটা না ছিল নিয়ম রক্ষার, তারচেয়ে বেশি ছিল মর্যাদার। কেননা, প্রতিবেশী এই দেশ দুটোর শক্তি-সামর্থ্য, র‌্যাঙ্কিংÑ সবই কাছাকাছি। অনুর্ধ-২৩ লেভেলের ফুটবলে এই দুই দেশ এ পর্যন্ত খেলেছে ৫ বার। তাতে বাংলাদেশের এক জয়ের বিপরীতে ভারতের জয় দুটিতে। বাকি ২ ম্যাচ ড্র হয়। বাংলাদেশের দুই গোলের বিপরীতে ভারতের গোল ৫। অবশ্য সিনিয়র দলের ক্ষেত্রে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশই। তাদের র‌্যাঙ্কিং ১৬২, ভারতের ১৭৩। বাংলাদেশের এএফসি র‌্যাঙ্কিং ৩২, ভারতের ৩৬। এ আসরে দু’দলই ৩ ম্যাচের ২টিতেই হেরেছে। এক ড্রয়ের সুবাদে দু’দলেরই পয়েন্ট ১। কোন গোলও করতে পারেনি উভয় দল। তবে গোল কম খেয়েছে ভারত, ৬। বাংলাদেশ ৮। ফলে টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া চার দলের মধ্যে ভারত হয় তৃতীয়, আর বাংলাদেশ হয় চতুর্থ। এ আসরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ সিরিয়া ও উজবেকিস্তানের কাছে হারে ৪-০ গোলে। আর ভারত তাদের প্রথম দুই ম্যাচে হারে উজবেকিস্তানের কাছে ২-০ এবং সিরিয়ার কাছে ৪-০ গোলে। মঙ্গলবারের ম্যাচে বাংলাদেশ যুবদলের অধিনায়ক রায়হান লালকার্ড পাওয়ার কারণে খেলেননি। চোট সমস্যার কারণে খেলা নিয়ে সংশয় থাকলেও এ ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিটই খেলেন মিডফিল্ডার হেমন্ত।
×