ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বোমা ফাটালেন!

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২ এপ্রিল ২০১৫

বোমা ফাটালেন!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বোঝাই যাচ্ছিল, দেশে ফিরে একটা বোমা ফাটাবেন আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল। তা ফাটালেনও। আইসিসি সভাপতির পদ থেকে সরে গেলেন। বুধবার দুপুরে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সে ঘোষণা দিয়ে দিলেন। কেন এমনটি করলেন দেশের পরিকল্পনামন্ত্রী? তা সবারই জানা। বিশ্বকাপের ফাইনালে বিজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে আইসিসি সভাপতিরই শিরোপা তুলে দেয়ার নিয়ম। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা করেনি আইসিসি। সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। সে দিন স্বাভাবিকভাবেই অপমানিত বোধ করেছেন মুস্তফা কামাল। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে। শেষমেশ নিজের আবেগ ও সম্মানকেই মূল্যায়ন করে সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছেন। তবে মুস্তফা কামাল জানালেন, ‘যে মানুষটি (আইসিসির চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসন) বিভিন্নভাবে বিতর্কিত, বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত, আপনারা জানেন মামলাগুলো কী, এখন সেই মানুষটি যদি ক্রিকেটের দায়িত্বে থাকে তাহলে ক্রিকেট কিভাবে চলবে। আর সেখানে তার সঙ্গে সভা করার জন্যে আমি যাব কেমন করে! আমি পদত্যাগ দিতে চাই। ক্রিকেটে এ রকম ন্যক্কারজনক ঘটনা যারা প্রথম ঘটাল তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত। ক্রিকেটকে কলুষিত করা হয়েছে।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেই সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিমানবন্দরেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সভাপতি হিসেবে তার মেয়াদ ছিল আগামী জুন পর্যন্ত। ২২-২৪ জুন বার্বাডোজে আইসিসির যে সভা হওয়ার কথা, সেখানেই শেষবারের মতো সভাপতি পদে বসে সভা করার কথা ছিল মুস্তফা কামালের। কিন্তু ৯ মাস দায়িত্ব পালন করেই পদ থেকে সরে গেলেন। তিনি বলেন, ‘আইসিসির সংবিধানের ৩.৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে ফাইনালে বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি দেয়ার অধিকার কেবল সভাপতিরই। ২৯ তারিখ মেলবোর্নের ফাইনালে ট্রফি দেয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু আমি সেটা দিতে পারি নাই।’ বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে কিছু মন্তব্য করাতেই তাকে ফাইনালের বিজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দিতে দেয়া হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়ে কামাল বলেন, ‘এই মুহূর্ত থেকে আমি আইসিসির সাবেক সভাপতি হিসেবে কথা বলব।’ এরপর পদত্যাগের কারণ জানিয়ে কামাল বলেন, ‘যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, তাদের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর সবাইকে আমি তা জানাতে চাই।’ বাংলাদেশ-ভারত মেলবোর্নের কোয়ার্টার ফাইনালে ‘বিতর্কিত’ আম্পায়ারিংয়ের পর আইসিসি চেয়ারম্যানের কড়া সমালোচনা করেন কামাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এখন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেরই নামান্তর বলে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। তখন প্রয়োজনে পদত্যাগ করার কথাও জানান তিনি। আইসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড রিচার্ডসন পরে এক বিবৃতিতে মুস্তফা কামালের মন্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে আখ্যা দেন। ফাইনালের আগে আইসিসির এক অনানুষ্ঠানিক সভায় কামালকে তোপের মুখে পড়তে হয়। তখনই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ফাইনালে বিজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেবেন আইসিসির চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন। ক্রিকেট সংগঠক মুস্তফা কামাল দুই বছর আইসিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার পর নয় মাস সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত বছর জুলাইয়ে সভাপতির দায়িত্ব নেন। তিনি জানান, ‘বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের পর আইসিসি সভাপতি হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে প্রতিবাদ করেছি। সঙ্গত কারণেই প্রতিবাদ করতে হয়েছে। বাংলাদেশ না হয়ে অন্য কোন দল হলেও প্রতিবাদ করতাম।’ কামাল জানান, ‘ফাইনালের আগের দিন বিকেলে এক ঘণ্টার নোটিসে একটি সভা ডাকা হয়। সেখানে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের পর করা মন্তব্যের জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করি। এরপর বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলা হয়। তাতেও রাজি হইনি। তখন বলা হয়, বক্তব্য প্রত্যাহার করা না হলে ফাইনালে পুরস্কার দিতে পারব না।’ কামাল বক্তব্য প্রত্যাহার না করে তখনই জানান, আইসিসি সভাপতিকে বাদ দিয়ে কেউ পুরস্কার দিতে পারবে না। সংবিধান পরিপন্থী কাজ না করতেও নিষেধ করেন তিনি। কামাল জানান, ‘আপনারা কৈফিয়ত দাবি করতে পারেন, কেন আমি কথাগুলো বললাম, আমি এর জবাব দিতে বাধ্য। কিন্তু এর বাইরে কিছু হবে না।’ কামাল জানান, ‘সংবিধান বদলাতে হলে উপযুক্ত নোটিস দিয়ে সভা আহ্বান করতে হয়। দশজন পূর্ণ সদস্য দেশের মধ্যে আট জনের ভোট লাগবে তাতে। এরপর এটা যাবে বার্ষিক সভায়। সেটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সভাপতি পদ থেকে সরাতে।’ এসব যুক্তি তুলে ধরে কামাল দাবি করেন, তার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে জোর করে, অসাংবিধানিকভাবে। আর তাই ক্রিকেটকে যারা কলুষিত করছে তাদের মাঝে থাকতে চান না মুস্তফা কামাল। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। সভাপতি পদ ছেড়েও দিয়েছেন।
×