ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পালনে বিদ্যুত ও জ্বালানি বিভাগ পিছিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২ এপ্রিল ২০১৫

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পালনে বিদ্যুত ও জ্বালানি বিভাগ পিছিয়ে

রশিদ মামুন ॥ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে বিদ্যুত এবং জ্বালানি উভয় বিভাগ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ে অফিস করার সময় বিদ্যুত এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ২২ নির্দেশনার একটিও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগ। এরমধ্যে আগামী ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর আবারও বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অফিস করতে আসার কথা রয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের দ্বিতীয় বছরে প্রধানমন্ত্রী আবারও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অফিস করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম দিকেই তিনি নিজের এই মন্ত্রণালয়ে আসবেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এসে প্রায় সবগুলোই ঝিমিয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবার অফিস কারার সময় নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিয়ে কি উত্তর দেবেন তা নিয়ে তটস্থ রয়েছেন দুই বিভাগের কর্মকর্তারা। বিদ্যুত বিভাগ কোন কোন ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি দেখালেও জ্বালানি বিভাগে দৃশ্যমান কিছুই করতে পারেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, শতভাগ বাস্তবায়ন না হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে তাই প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে। জানা যায়, এ বিষয়ে বুধবারও দুটি পৃথক বৈঠক করে বিদ্যুত এবং জ্বালানি বিভাগ। ওই বৈঠকে বিদ্যুত জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুল জ্বালানি বিভাগকে সকল প্রশ্নের উত্তর তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ আবারও প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসবেন বলে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। জানা যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে বিদ্যুত মন্ত্রণালয় বারবার তাগিদ দিলেও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো নির্দেশনা প্রতিপালনে অনীহা প্রকাশ করছে। এছাড়া শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখেও পড়তে হয়েছে বিদ্যুত বিভাগকে। বিদ্যুতখাতের শ্রমিকরা পিডিবি ভেঙ্গে পেট্রোবাংলার ন্যায় করপোরেশন করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়াও পিডিবির নিজস্ব বিদ্যুত কেন্দ্র অন্য কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করার বিরোধী তাঁরা। বিতরণ ব্যবস্থায় উত্তর, দক্ষিণ এবং মধ্যভাগে নতুন তিন কোম্পানি করার বিষয়েও গড়িমিসি করছে পিডিবি। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুতের বিতরণে সরকার কোন ভর্তুকি দিতে চায় না। এজন্য বিতরণকে কোম্পানির মাধ্যমে বিদ্যুত বিতরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ঢাকায় দুটি কোম্পানি, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি কোম্পানি ছাড়াও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ৭৪টি সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুত বিতরণ করা হয়। কিন্তু উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল এলাকা এখনও পিডিবির হাতে রয়ে গেছে। নর্থ ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং সাউথ ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নামে তিনটি পৃথক কোম্পানি গঠন চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও পিডিবি তা হতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুত বিভাগে অফিস করেন। তিনি দেশের বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে সার্বিক উন্নয়নে উভয় বিভাগকে নির্দেশা দেন। যদিও এর কোনটিই বাস্তবায়ন করতে পারেনি উভয় বিভাগ। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ওই সময় বিদ্যুত বিভাগকে ১৪টি নির্দেশনা দেন। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে প্রচলিত পদ্ধতির বিদ্যুত উৎপাদনের পাশাপাশি অফগ্রিড এলাকায় বিদ্যুত পৌঁছে দিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ঘটানো। কিন্তু অফগ্রিড এলাকায় মিনি গ্রিডের মাধ্যমে এখনও কোন সোলার বিদ্যুত দিতে পারেনি বিদ্যুত বিভাগ। একান্ত প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে এসব এলাকায় সোলার হোম সিস্টেম দিয়ে নিজস্ব প্রয়োজন মেটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে দ্রুত আঞ্চলিক গ্রিড হতে বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদ্যুত ও জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের। পটুয়াখালীতে নির্মাণাধীন পায়রা সমুদ্র বন্দরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য নির্ধারিত জায়গা বন্দর কর্তৃপক্ষ নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। বিদ্যুত খাতকে শ্রম আইনের আওতার বাইরে রাখার ব্যবস্থা করা। ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রকল্পের ন্যায় বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র বা কোম্পানি বা দেশী বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে দেশের বিদ্যুত ব্যবস্থার বৃহত্তর প্রসারের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চলমান সরকারী-বেসরকারী বিদ্যুত-কেন্দ্রের জন্য আলাদাভাবে অপারেশন এ্যান্ড মেইনটেনেন্স (ওএ্যান্ডএম) কোম্পানি গঠন। বিদ্যুতের অপচয়, দুর্নীতি, সিস্টেম লস এবং পিডিবিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে রক্ষা করতে পেট্রোবাংলার মতো কর্পোরেশনে রূপান্তর করতে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। সাউথ জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং নর্থ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডকে দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশ দেন। সেন্ট্রালজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে সিলেট ও ময়মনসিংহের বিদ্যুত ব্যবস্থা উন্নয়নের নির্দেশ দেন। ঘোড়াশাল বিদ্যুত উৎপাদনকেন্দ্রকে কর্পোরেটাইজ করার নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুত বিভাগকে আরও কার্যকর করতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ তদারকির জন্য একটি বিশেষায়িত উইং গঠন, প্রকৌশল এবং পরিদর্শন উইং স্থাপন, সুশাসন এবং আইনী কার্যক্রমের জন্য গভর্নেন্স এ্যান্ড লিগ্যাল উইং স্থাপন, বিদ্যুত খাতের কার্যক্রম প্রচারের জন্য পাবলিসিটি উইং স্থাপনের কথা বলেন। অন্যদিকে জ্বালানি বিভাগে কয়লানীতি প্রণয়ন, কয়লা তোলার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নির্ধারণ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা করা, গ্যাস বিতরণে প্রিপেইড মিটার স্থাপন, বাপেক্স-এর মাধ্যমে দেশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে জরিপ, ভারতের নোমানীগঞ্জ পরিশোধনাগার থেকে পাইপ লাইনে তেল আমদানি, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলকে জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে রূপান্তর করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের নীতি পরিবর্তন ছাড়া আর কোন কাজ করতে পারেনি জ্বালানি বিভাগ। গত এক বছরে অন্য কাজগুলো করার চেষ্টাও করেনি জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা।
×