ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শাস্তি দাবিতে ঢাবিতে সহপাঠীদের মানববন্ধন

যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর সেনা কর্মকর্তার নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২ এপ্রিল ২০১৫

যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর সেনা কর্মকর্তার নির্যাতনের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যৌতুকের দাবিতে এক সেনা কর্মকর্তা তার স্ত্রীকে নির্মম নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি মীমাংসা করতে গেলে ওই সেনা কর্মকর্তা শ্বশুর-শাশুড়ি ও শ্যালককেও মারধর করেন। গুরুতর আহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উর্ধতন সেনা কর্মকর্তারা আহত সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকে দেখেছেন। নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীরা বিক্ষোভ করে নির্যাতনকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। গত ৩০ মার্চ টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলা সদরে ঘটনাটি ঘটে। আহত নুসরাত জাহান তুষ্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী। তুষ্টির একমাত্র ছোটভাই মগবাজার সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র মুঈদ হাসান ত্বরিত জনকণ্ঠকে বলেন, পিতা নুরুল ইসলাম কৃষি ব্যাংক থেকে প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে অবসর নিয়েছেন। মা শাহনাজ আক্তার গৃহিণী। তারা রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন ১১ নম্বর সেগুনবাগিচায় ভাড়া ফ্ল্যাটে বসবাসরত। দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে বোনের বিয়ে হয় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা সদরের বাসিন্দা মেজর নাজির উদ্দিনের সঙ্গে। বোনজামাই চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত। বিয়ের পর থেকেই বোনজামাই নানাভাবে তাদের কাছে টাকা পয়সার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। বোনকে ২০ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, ঢাকায় প্লট কেনার সময় নগদ টাকাসহ সবমিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তাতেও বোনজামাইয়ের টাকার চাহিদা মিটেনি। নানাভাবে টাকা দাবি করে আসছিল। বোনের ১৩ মাস বয়সী নাজমুস সাদাত নামে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সন্তানটি সাড়ে ৬ মাসে জন্ম নেয়। টাকা পয়সা নিয়ে প্রায়ই বোনকে মারধর করত। বিষয়টি এতদিন গোপনই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বোন বিষয়টি আমাদের কাছে প্রকাশ করে দেয়। কয়েকদিন আগে বোনকে কালিহাতির বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে টাকা পয়সা নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে বোনকে বেধড়ক মারধর করেন। খবর পেয়ে ওইদিনই আমরা কালিহাতিতে যাই। সেখানে বোনজামাই আমাকে ও আমার পিতামাতাকে পর্যন্ত মারধর করেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে বোনসহ আমরা ওই বাড়ি থেকে চলে আসি। বোনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাত বারোটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তুষ্টিকে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, তুষ্টির ওপর নির্যাতনকারী স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তির দাবি করে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে এমন দাবি জানানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন এমআইএস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আতাউর রহমান, অধ্যাপক আলী আক্কাস, অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন, নির্যাতনের শিকার তুষ্টির ছোট ভাই মুঈদ হাসান ত্বরিতসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, তুষ্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। তার ওপর কিভাবে এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন হতে পারে? তাও আবার যৌতুকের দাবিতে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। আমরা সেনা প্রধানের উদ্দেশে বলতে চাই, সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হয়ে মেজর নাজির কিভাবে যৌতুকের দাবিতে তার স্ত্রীর ওপর এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন করতে পারে? প্রশ্ন রাখেন তারা। তারা বলেন, মেজর নাজির উদ্দিন সেনাবাহিনীকে কলঙ্কিত করছে। অবিলম্বে তাকে সেনাবাহিনী থেকে অপসারণ করা হোক।
×