ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোহাম্মাদু বুহারি : সামরিক শাসক থেকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২ এপ্রিল ২০১৫

মোহাম্মাদু বুহারি : সামরিক শাসক থেকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

নাইজিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ সপ্তাহে নির্বাচিত হয়েছেন ৭২ বছর বয়স্ক সাবেক জেনারেল মোহাম্মাদু বুহারি। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রচার অভিযানে নতুন নন তিনি। তিনি গত দশকের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন পর úর তিনটি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রচার অভিযানে এবং প্রতিবার ব্যর্থ হন। কিন্তু এবার তাঁর নিন্দুকেরা জোর দিয়ে বলেছে এবং অনেক সমর্থক স্বীকার করেছে, এ সাবেক জেনারেল মোহাম্মাদু বুহারি দীর্ঘসময়ে প্রমাণ করেছেন যে, সামরিক ব্যারাকের সঙ্গে তাঁর আর কোন সংযোগ নেই। খবর নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। মোহাম্মাদু বুহারি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসেন ৩০ বছরেও বেশি সময় আগে এবং দেশের অন্যতম সবচেয়ে কঠোর সামরিক শাসক হিসেবে প্রশাসন চালান। তিনি অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অলস বেসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। তিনি তরুণ মাদক ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদ- কার্যকর করেন। সাংবাদিকদের কারাদ- দেন এবং দেশ থেকে তাড়িয়ে দেন হাজার হাজার অভিবাসীকে। দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছেন তিনি ৪শ’ ৭৫ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীকে। তাঁর ওই শাসনকাল স্থায়ী হয় ২০ মাস এবং এর অবসান হয় আরেকটি অভ্যুত্থানে। এই হচ্ছে বুহারির অতীত। তাঁর সমর্থকরা প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেছে, তাঁর অতীত বর্তমানকে প্রতিফলিত করে না এবং এ জেনারেলের মধ্যে এখন পরিবর্তন এসেছে। তিনি এখন প্রতিশ্রুতিশীল গণতন্ত্রমুখী। ভোটাররা বিভিন্ন সময় বলে থাকে, বুহারি এমন একজন মানুষ যিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন ইসলামপন্থী বিদ্রোহী ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তাঁর রয়েছে এক আত্মসংযমশীল ভাবমূর্তি। প্রেসিডেন্ট জোনাথন গুডলাকের শাসনকালে মন্ত্রীদের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারিকে উপেক্ষা করা হয়েছে সম্পূর্ণভাবে। পার্লামেন্টারি রিপোর্টে এসব দুর্নীতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলেও তা চাপা পড়ে যায়। বুহারির কঠোর সমালোচক হচ্ছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নাইজিরীয় লেখক ওল সোইংকা। বুহারির শাসনে দেশের জনগণের মধ্যে যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল সোইংকা তাঁর লেখায় তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, জেনারেল ডিক্রী জারির মাধ্যমে দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং গণতান্ত্রিকা শাসনে ফিরে যাওয়ার আলোচনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তার ভোটদুর্গ উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোয় এবং তাঁর মতো মুসলমানাদের কাছে তিনি সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। নির্বাচনী সমাবেশে তিনি সোজা ও দৃঢ়ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছেন জনগণের সামনে। তিনি হাত নেড়ে সম্ভাষণ জানিয়েছেন জনগণকে এবং কথা বলেছেন খুব কম। বুহারি ১৯৪২ সালের ১৭ ডিসেম্বর দেশের প্রত্যন্ত উত্তরাঞ্চলের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন গ্রামপ্রধান। তিনি ১৯৬০-এর দশকের গোড়ায় ইংল্যান্ডে অফিসার ক্যাডেট স্কুলে যোগ দেন। তিনি ১৯৫৬ ও ১৯৭৫-এ সামরিক অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন এবং ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে সামরিক সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
×