ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩ এপ্রিল ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

শেষ হয়ে এসেছে চৈত্র। আর মাত্র কয়েকদিন পর চৈত্রসংক্রান্তি। নানা আনুষ্ঠানিকতায় পুরনো ১৪২১ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানাবে বাঙালী। সেইসঙ্গে বরণ করে নেবে ১৪২২ বঙ্গাব্দকে। না, কোন মামুলি বরণ করে নেয়া নয়। বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে। বাঙালীর সর্ববৃহত অসাম্প্রদায়িক উৎসবে মাতে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা। বছরের প্রথম দিন ছেলে-বুড়ো, নারী-শিশু সকলে বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেন। আনন্দে মাতেন। গান নাচের আয়োজন থাকে। বসে লোকজ সংস্কৃতির মেলা। এভাবে যারপর নাই বর্ণাঢ্য হয়ে ওঠে উৎসবটি। প্রস্তুতিও নিতে হয় অনেক আগে থেকে। আর তাই দারুণ ব্যস্ত এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। বর্ষবরণ উৎসবের প্রধানতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয় এখান থেকে। পুরো কাজটি করেন চারুকলার বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এবারও কোন ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ২৫ মার্চ থেকেই শুরু হয়ে গেছে কাজ। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চির চেনা দৃশ্য। হাসি-রাশি আনন্দ আড্ডা চলছে। সেইসঙ্গে এগিয়ে চলেছে কাজ। জয়নুল গ্যালারির সামনের খোলা জায়গায় টেবিল সাজিয়ে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকেই ব্যস্ত ছবি আঁকায়। শিক্ষকরাও তেল রং, জল রঙে বাংলাকে আঁকছেন। আর সরার কথা তো বলাই বাহুল্য! মাটির সরার তুলির টান। লোকায়ত জীবনের ছবি। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। পাশেই চলছে মুখোশ বানানোর কাজ। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যাচ্ছেনও তাঁরা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ সব শিল্পকর্ম বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়েই আয়োজন করা হবে মঙ্গলশোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার অগ্রভাগে বিশালাকৃতির যে সব শিল্পকর্ম থাকে, সেগুলোও গড়া শুরু হয়ে গেছে। চারুকলার লিচুতলায় বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কাঠামো। ক্রমশ শিল্পকর্মগুলো আপন চেহারা পাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বুধবার রাজধানীতে নামা হঠাৎ বৃষ্টিটাও বেশ উপভোগ্য ছিল। অবেলার বৃষ্টি দারুণ উপভোগ করেছে রাজধানীবাসী। এদিন ভোর বেলা থেকেই মুখ ভার করে রেখেছিল আকাশ। সকাল ৯টার দিকে নামে বৃষ্টি। শুধু কী বৃষ্টি? তুমুল বর্ষণ। লম্বা সময় ধরে চলে। তারপর দেখা মেলে সূয্যি মামার। বিকেল ৪টার পর আবারও রাজধানীর আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘ। সন্ধ্যা নামে। নামে বৃষ্টিও। এবার ঝড়ো হাওয়া সমেত। কয়েকবার ছোট্ট বিরতি দিয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। এভাবে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। দিনের শুরু ও কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় তাই ভুগতে হয় রাজধানীবাসীকে। তবে তারও বেশি ছিল আনন্দ। এদিন মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজেছে অনেকেই। বিভিন্ন বাড়ির ছাদে, খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মাখতে দেখা গেছে তরুণীদের। এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গ। চলতি মাসের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে বহুল আলোচিত এ নির্বাচন। দীর্ঘ ৮ বছর পর নগরপিতা নির্বাচন করবেন ভোটাররা। অবশ্য ততদিনে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এবার নগরের পিতা হবেন দুজন। কারণ ২০১১ সালের ২৯ নবেম্বর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ভেঙে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামে স্বতন্ত্র দুটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। গত কয়েকদিন সিটি কর্পোরেশনের দুই অংশ ঘুরে দেখা যায়, ধীরে ধীরে প্রচারের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। এবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে হেভিওয়েট প্রার্থী আনিসুল হক। সফল এই ব্যবসায়ী মেয়র হিসেবেও সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাঁর বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন আরেক ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আওয়াল মিন্টু। তাঁর মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়টিও বেশ আলোচিত হচ্ছে উত্তর অংশের ৩৬টি ওয়ার্ডে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৬টি। এ অংশে হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী হানিফ পুত্র সাঈদ খোকন ও সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস। আরও কয়েকজনের নাম আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচন প্রসঙ্গে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভোটার আরিফুল হক বললেন, মেয়র ও কাউন্সিলর পদে কাকে ভোট দেব এখনও ঠিক করিনি। নাম পরিচয়গুলো আগে সামনে আসুক। তারপর ঠিক করবো। উত্তর অংশের ভোটার মোদি দোকানী নুরুল ইসলামের বক্তব্যটি গতানুগতিক। তবে অর্থপূর্ণ। তিনি বললেন, যে আমাগো ভাল করবে তারেই ভোট দিমু।
×