ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্থাপিত হবে ৪৫ হাজার মেট্রিক টনের কাগজ কল;###;নির্মাণ করা হবে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র

খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল নতুন আঙ্গিকে সাজানোর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৪ এপ্রিল ২০১৫

খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল নতুন আঙ্গিকে সাজানোর উদ্যোগ

অমল সাহা খুলনা অফিস ॥ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। মিল এলাকায় বার্ষিক ৪৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সাদা কাগজ তৈরির জন্য পেপার মিল স্থাপনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। মিলের অব্যবহৃত জমিতে ৭৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলকে ঘিরে দু’টি প্রকল্প গ্রহণ করায় খুলনাবাসীর মধ্যে নতুন করে আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠান দু’টি গড়ে উঠলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বন্ধ থাকা খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার জন্য দু’টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এবং অপর প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)। গৃহীত প্রকল্প অনুযায়ী বিসিআইসি মিল এলাকায় খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলকে (কেএনএম) নতুন আঙ্গিকে গড়ে তুলবে। এখানে বার্ষিক ৪৫ হাজার মেট্রিকটন উন্নতমানের বিভিন্ন প্রকার সাদা কাগজ তৈরি হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন কাল তিন বছর। অপর দিকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের অব্যবহৃত প্রায় ৬০ একর জমিতে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ৭৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ভারত থেকে আমদানি করা এলএনজি গ্যাস (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) নির্ভর এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউ.পি.জি.সি.এল)। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে ৩০ মাস বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের ৬০ এক জমি বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের কাছে নির্ধারিত মূল্যে হস্তান্তরের জন্য সম্মত হয়েছে। মিলের জমির পরিমাণ, সীমানা চিহ্নিতকরণ ও মূল্য নির্ধারণে সম্প্রতি খুলনায় এসেছিলেন বিসিআইসির ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সূত্রমতে, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের জমিতে বিদ্যুত কেন্দ্র ও নতুন আঙ্গিকে নিউজপ্রিন্ট মিল হবে। যদি পিডিবি নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকায় নির্মিত বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত মূল্যে বিদ্যুত, গ্যাস, পানি, এক্সজট হট এয়ার কেএনএম-কে সরবরাহ করতে সম্মত হয় তাহলে নিউজপ্রিন্ট মিলে বার্ষিক ৪৫ হাজার মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদনে সহায়ক হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বলে বিসিআইসি সূত্র মনে করে। পিডিবি সূত্রে জানা যায়, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা পূরণ ও বিদ্যুত ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বিদ্যুত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে দেশে প্রথমবারের মত ভারত থেকে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দিয়ে খুলনায় বিদ্যুত উপাদনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে এ ব্যাপারে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের অব্যবহৃত জায়গা বেছে নেয়া হয়। এলএনজি নির্ভর এ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। বিষয়টি এত দিন আলোচনার পর্যায়েই ছিল। বর্তমানে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। সূত্র জানায়, ভারতের এইচ এনার্জি ইস্ট কোস্ট প্রাইভেট লিমিটেড (এইচ.ই.ই.সি.পি.এল) অতি সম্প্রতি সে দেশের পশ্চিম বাংলার মেদিনীপুর জেলা সংলগ্ন দীঘাতে এলএনজি মজুদ এবং রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য একটি ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন (এফ.এস.আর.ইউ) ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা ২০১৮ সালের মার্চ মাস নাগাদ বাস্তবায়িত হবে। গেইল ইন্ডিয়া নামক একটি গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি ওই এফ.এস.আর.ইউ থেকে কলকাতা ‘টপ’ হয়ে পেট্রাপোল বর্ডার পর্যন্ত গ্যাস লাইন স্থাপন করবে। সেখান থেকে যশোর জিটিসিএল স্টেশন হয়ে খুলনার আড়ংঘাটা ‘বাল্ভ’ স্টেশন ও সেখান থেকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের বিদ্যুত কেন্দ্রে পৌঁছাবে। নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সিনিয়র প্রকৌশলী ও খুলনা এলএনজি গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শহিদুল মোরছালিন জোয়াদ্দার জানান, ভারতর থেকে গ্যাস আনা এবং বিসিআইসির কাছ থেকে জমি হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্মাণ কাজ শুরুর ৩০ মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সহিদুল ইসলাম বলেন, বিসিআইসি’র নির্দেশনা মোতাবেক জমি পরিমাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মিলের অব্যবহৃত আবাসিক এলাকা সংলগ্ন প্রায় ৬০ একর জায়গা নির্ধারিত মূল্যে পিডিবি-কে হস্তান্তরের এবং বাকি স্থানে নতুন একটি নিউজপ্রিন্ট মিল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন আঙ্গিকে নিউজপ্রিন্ট মিল তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে এখানে বছরে ৪৫ হাজার মেট্রিক টন উন্নতমানের অফসেট, কার্টিজ পেপার, মেনিকোল্ড বন্ড, হোয়াইটপ্রিন্ট, লেজার ইত্যাদি উৎপাদন হবে। এদিকে নিউজপ্রিন্ট মিল রক্ষা কমিটির নেতারা জানান, নিউজপ্রিন্ট মিলের জায়গায় বিদ্যুত কেন্দ্র করতে হলে অবশ্যই সেখানে খুলনার শ্রমিকদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে। এছাড়া বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তির সঙ্গে খুলনার নতুন নিউজপ্রিন্ট মিলের জন্য বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত মূল্যে গ্যাস, বিদ্যুত ও এক্সজাস্ট হট এয়ার প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ থাকতে হবে। প্রসঙ্গত, ১৯৫৭ সালে ভৈরব নদের তীরে প্রায় ৯৭ একর জায়গার ওপর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল নির্মাণ করা হয়। লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নবেম্বর মিলটি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন জোট সরকার। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সময়ে মিলটি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
×