ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশী টাকায় ডাক্তারের ফি ১২ থেকে ১৫ টাকা

উত্তরাঞ্চলের ৫০ হাজার রোগী প্রতি বছর ভারতে চিকিৎসা নেন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৪ এপ্রিল ২০১৫

উত্তরাঞ্চলের ৫০ হাজার রোগী প্রতি বছর ভারতে চিকিৎসা নেন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলা থেকে প্রতিবছর ভারতে চিকিৎসার জন্য যায় অর্ধলক্ষাধিক রোগী। এজন্য কমপক্ষে দেড় শ’ কোটি টাকা খরচ হয়। রোগী ও তার আত্মীয়দের অভিযোগÑ নানা সমস্যা ও ডাক্তারদের কর্তব্যে বিমুখতার কারণে জনসাধারণ দেশের চিকিৎসার প্রতি আস্থা হারিয়েছে। এ ব্যাপারে রোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। জানা গেছে, বাংলাদেশী রোগীদের বিশ্বাস ভারতের কলকাতা, দিল্লী, মাদ্রাজ, চেন্নাই, ভেলোর, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোরে ভাল চিকিৎসা হয়। জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীরা মনে করেন ভারতে চিকিৎসা করালে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। সেখানকার ডাক্তাররা রোগীদের প্রতি দারুণ যতœবান। খরচ হয় তুলনামূলক কম। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে অথবা ঢাকাতে জটিল রোগের চিকিৎসা নিতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে, সমপরিমাণ ব্যয় করলে ভারতের কলকাতায় চিকিৎসা করানো সম্ভব। এ কারণে এ অঞ্চলের রোগীরা কলকাতার চিকিৎসার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। অভিযোগে জানা গেছে, এ দেশের ডাক্তাররা রোগীদের কথা মনোযোগ সহকারে না শুনেই পাঠিয়ে দেন নিজেদের পছন্দ মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। পরামর্শ দেন একাধিক পরীক্ষা করার জন্য। যার অনেকাংশে তেমন প্রয়োজন হয় না। এ ছাড়া তাদের নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা না করলে ভুল রিপোর্ট বলে পুনরায় করতে পাঠায়। এতে অর্থনৈতিকভাবে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এরপরও অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ক্লিনিক অথবা নার্সিং হোমে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে এসব হয়রানি এড়ানো ও সুষ্ঠু চিকিৎসা পাওয়ার প্রত্যাশায় রোগীরা পাড়ি জমান ভারতে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী এলাকার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৭৫ হাজার ভ্রমণার্থী ভারতে যায়। এর মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ যায় চিকিৎসার জন্য। আর প্রতিদিন যে পরিমাণ লোক চোরাইপথে ভারতে যায় তার মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ চিকিৎসা করাতে যায়। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন গড়ে ১শ’ ২৫ জন চিকিৎসা করান। যে পরিমাণ রোগী ভারতে যায় তার মধ্যে শতকরা ৬৫ জন চিকিৎসা করায় কলকাতায়। আর বাকি ৩৫ ভাগের মধ্যে দিল্লীতে যান শতকরা ৯, চেন্নাইয়ে ১০, মুম্বাইয়ে ৪, ব্যাঙ্গালোরে ৫, মাদ্রাজে ৫ এবং অন্যান্য রাজ্যে ২ ভাগ। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভিড় থাকে বেশি কলকাতায়। এর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে কলকাতার অবস্থান কাছে। দিনাজপুরের হিলি, রাজশাহী অথবা নবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে খুব সহজে কলকাতায় পৌঁছানো সম্ভব। এ ছাড়া ভাষাগত দিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোও এ অঞ্চলের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত আছে। ফলে চলাফেরা বা কোন ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। শুধু তাই নয়, যেসব রোগী প্রতিদিন কলকাতায় যায় তার ৭০ ভাগ রোগী ডাক্তারদের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নেয়। বাকিরা হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং বিভিন্ন নার্সিং হোমে। সম্প্রতি কলকাতায় চিকিৎসা নিয়ে ফিরে আসা একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগীদের অসুখ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত কোন ধরনের চিকিৎসাপত্র দেয় না। অহেতুক টেস্টের জন্য কোন পরীক্ষা কেন্দ্রেও পাঠায় না। ডাক্তারদের ফিও কম। চিকিৎসক ভেদে বাংলাদেশী টাকায় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া প্রতিটি রোগীর সঙ্গে ডাক্তারদের আচার-আচরণ সন্তোষজনক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ডাক্তার জানান, আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু মনমানসিকতার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ফলে রোগীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিতে ভারতে পাড়ি জমায়। বর্তমানে কলকাতা চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। যার কারণে নিজ দেশ, এলাকা ছেড়ে রোগীরা পাড়ি জমাচ্ছে ভারতের কলকাতাসহ বিভিন্ন রাজ্যে।
×