ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমানতের সঙ্গে ঋণের সুদ হার কমছে না

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৫ এপ্রিল ২০১৫

আমানতের সঙ্গে ঋণের সুদ হার কমছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ লাগামহীনভাবে বেড়েই যাচ্ছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংক ও বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান (স্প্রেড)। ফেব্রুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে গড় স্প্রেডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। আর ব্র্যাক ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এ ব্যবধান দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক শূন্য ৬১ শতাংশ ও ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। ব্যাংক দুটির স্প্রেডের এ হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্প্রেড সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন দেখা যায়, ব্যাংকগুলো অব্যাহতভাবে আমানতের সুদহার কমালেও সে অনুপাতে ঋণে সুদহার কমায়নি। দেশে কার্যরত ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২৩টি ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতে সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ বাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংক খাতে মোট স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৪ শতাংশীয় পয়েন্ট, যা জানুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ০৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকগুলো গড়ে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে; জানুয়ারিতে যা ছিল ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় আমানতে দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট সুদ কমানো হয়েছে। একইসময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ সুদে; জানুয়ারিতে যা ছিল ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ হিসেবে ঋণে সুদ কমেছে দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশীয় পয়েন্ট; আগের মাসে যা ছিল ৪ দশমিক ১২ শতাংশীয় পয়েন্ট। রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ সুদে আমানত গ্রহণ করেছে। একই সময়ে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ সুদে। তবে এ সময়ে বিশেষায়িত ৩ ব্যাংকের স্প্রেড আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও বিডিবিএল ব্যাংকের জানুয়ারিতে গড় স্প্রেড ছিল ১ দশমিক ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট; ফেব্রুয়ারিতে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২৬ শতাংশে। আলোচ্য সময়ে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো আমানতে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ঋণে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ সুদ দিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারী ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশীয় পয়েন্ট; আগের মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ৩০। এ সময়ে বেসরকারী ৩৯ ব্যাংক আমানতে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও ঋণে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ সুদ নিয়েছে। আর বিদেশী ব্যাংকগুলোর স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ সময় বিদেশী মালিকানার ৯ ব্যাংক আমানতে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ ও ঋণে ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ সুদ নিয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান ৯ দশমিক ৬১ শতাংশীয় পয়েন্ট। এর পরে ডাচ-বাংলার ব্যাংকে ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ, ও ওয়ান ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান ৭ দশমিক ১২ শতাংশীয় পয়েন্ট। এছাড়া বেসরকারী খাতের এবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংকে ৬ দশমিক ০৯, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৮৬, পূবালীর ৫ দশমিক ২১, উত্তরা ব্যাংকের ৬ দশমিক ০৮, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ১২, এনসিসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৭, প্রাইম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৪৯, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ১৪, এক্সিম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫২, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৫ দশমিক ৯৮, ব্যাংক এশিয়ায় ৫ দশমিক ৪৪, ট্রাস্ট ব্যাংকে ৫ দশমিক ৩৬, যমুনা ব্যাংকে ৫ দশমিক ১১ ও ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশীয় পয়েন্ট। এদিকে বরাবরের মতোই বিদেশী মালিকানার ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। এসব ব্যাংকের গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্টে। এ ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার কমে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এনএর ৭ দশমিক ৯, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ৬ দশমিক ৫৮, ওরি ব্যাংকের ৭ দশমিক ৮১, এইচএসবিসি ব্যাংকের স্প্রেড ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপর রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, স্প্রেডের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুবই সতর্ক রয়েছে। যেসব ব্যাংকের স্প্রেড বেশি আছে সেগুলোকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হয়েছে। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এখনও কিছু ব্যাংকের বিশেষ করে বিদেশী ব্যাংকের স্প্রেড বেশি রয়েছে। তবে তারা আগামীতে স্প্রেড আরও কমাতে বাধ্য হবে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদের হারের মধ্যে ব্যবধান কোন অবস্থাতেই ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি হতে পারবে না বলে নির্দেশ দিয়েছিল।
×