ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন খাতে ব্যবহার করা হবে ৪১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা

দরিদ্রদের রোগব্যাধিজনিত আর্থিক ক্ষতি কমাতে অনুদান

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৫ এপ্রিল ২০১৫

দরিদ্রদের রোগব্যাধিজনিত আর্থিক ক্ষতি কমাতে অনুদান

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দারিদ্র্য এলাকায় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়তা দিচ্ছে ইউনিসেফ। এজন্য প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে সংস্থাটি। ওয়াটার স্যানিটেশন এ্যান্ড হাইজিন (ডব্লিউএএসএইচ) প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। অনুদানের এ অর্থে দেশের ২৮ জেলার ৪০ উপজেলা এবং ১৫ সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৪১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ইউনিসেফের অর্থ সহায়তার বাইরে বাকি ৮৪ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগরে সদস্য আরাস্তু খান জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্যগ্রহণের পূর্বে এবং মলত্যাগের পরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে উঠবে। উন্নতমানের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সঠিক ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগের হার হ্রাস পাবে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সারাবছর নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। স্কুল, স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র, শিশুবান্ধব এলাকাসসূহে পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপক প্রচলন ঘটানো হবে। এছাড়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পটি যেসব জেলায় বাস্তবায়িত হবে সেগুলো হলো- বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, খুলনা, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটি জেলা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মানুষের স্বাস্থ্য ও মানবিক মর্যাদা রক্ষায় নিরাপদ সুপেয় পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধা তার মৌলিক অধিকার। নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধার ব্যবহার একই সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচনেও ভূমিকা রাখে। তাছাড়া মহিলা ও শিশুস্বাস্থ্য রক্ষাসহ মৃত্যুহার কমিয়ে দেয়। সমন্বিত স্যানিটেশন এবং রোগ ব্যবস্থাপনা রোগব্যাধিজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬১ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এসব দিক বিবেচনা করে নির্দিষ্টভাবে গ্রামীণ দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী, শিশু সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং যেসকল এলাকায় আর্সেনিক, লবণাক্ততা, পানির দুষ্প্রাপ্যতা, পানির ভূগর্ভস্থ স্তরের নিম্নগামিতা প্রভৃতি সমস্যাসঙ্কুল সেসব জায়গাসহ শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকাকে এ কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য নিধারণ করা হয়েছে। অতীতে বাস্তবায়িত এবং চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অভিজ্ঞতা থেকে ওয়াটার স্যানিটেশন এ্যান্ড হাইজিন প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খানের সভাপতিত্বে প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল ৪২২ কোটি ৮৪ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে ওই বছরের ১৫ অক্টোবর ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধানের সভাপতিত্বে প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় যৌক্তিকতা এবং ব্যয় সমন্বয় নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ব্যয় কমিয়ে ৪১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা করার পরামর্শ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের সুপারিশ করেছে বলে জানা গেছে।
×