ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিন্টু পিন্টুর আবেদন খারিজ আপীলে, উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৫ এপ্রিল ২০১৫

মিন্টু পিন্টুর আবেদন খারিজ আপীলে, উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে নাসির উদ্দিন পিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেয়া রায় বহাল রেখে আপীল খারিজ করে দিয়েছে বিভাগীয় আপীল আদালত। ফলে আগামী ২৮ এপ্রিল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না বিএনপির সমর্থিত এই দুই প্রার্থী। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দু’পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত রায় বহাল রেখে আবেদন খারিজ করে দেন এবং রাত নয়টার দিকে পিন্টুর আপীলও খারিজ করে দেন বিভাগীয় কমিশনার। গত বুধবার ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম আব্দুল আউয়াল মিন্টুর সমর্থক আব্দুর রাজ্জাক উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভোটার না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। মিন্টুর পক্ষে তার আইনজীবী গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের আদালতে আপীল করেন এবং নাসিরউদ্দিন পিন্টুর মনোনয়নপত্রে মামলা সংক্রান্ত সঠিত তথ্যের উল্লেখ না থাকায় মনোনয়নটিও বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে দুজনই বৃহস্পতিবার আপীল দায়ের করেন। এদিকে দুজনের আইনজীবীরাই জানিয়েছেন এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন। মিন্টুর আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, মিন্টু যদি সরকারী দলের কোন লোক হতেন তাহলে কোন সমস্যায় হতো না। যাচাই-বাছাইকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এ ধরনের ভুলত্রুটির জন্য কারও প্রার্থিতা বাতিল করেননি। তিনি বলেন, আইন না বুঝে না পড়ে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। এতে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। যে আব্দুর রাজ্জাকের কারণে মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একজন বাসিন্দা। উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে তার বাড়ি আছে। তিনি নিয়মিত সিটি কর্পোরেশনে ট্যাক্স পরিশোধ করেন। কিন্তু ভোটার তৈরির সময় অনেকের মতো তার নাম বাদ পড়ে গেছে। এটা বড় কোন সমস্যা নয়। তিনি বলেন, নির্বাচনের আসল বিষয় হলো প্রার্থীর যোগ্যতা অযোগ্যতা। যেখানে প্রার্থীর অযোগ্যতা সম্পর্কে কোন কিছু বলা হয়নি সেখানে তার সমর্থকের ভোটার না থাকার কারণে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে না। শনিবার বিকেল ৪টায় আব্দুল আউয়াল মিন্টুর আপীলের ওপর শুনানি করেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোঃ জিল্লার রহমান। এ সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পীকার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল আউয়াল মিন্টুর দুই ছেলে তাফসির এম আউয়াল ও তার স্ত্রী আব্দুল আউয়ালের ছোট ছেলে। এছাড়া মিন্টুর পক্ষে বেশকিছু সমর্থক শুনানিতে অংশ নেন। শুনানিকালে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রার্থীর যোগ্যতা অযোগ্যতা। এখানে কোন সমর্থক বা প্রস্তাবক কোন বিষয় নয়। নির্বাচনে বিধির ৯ ধারায় প্রার্থীর যোগ্যতা সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। বাছাইকালে মিন্টু যোগ্যতা নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা কোন কথা বলেননি। কিন্তু মিন্টুর সমর্থক আব্দুর রাজ্জাকের ভোটার না হওয়া সংক্রান্ত যে ভুল দেখা দিয়েছে এটি মাইনর টেকনিক্যাল মিসটেক। তিনি বলেন, আব্দুর রাজ্জাক সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ঢাকার উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা। সেখানে তাঁর বাড়ি রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করেন। কিন্তু ভোটার লিস্টের কারণে ওই এলাকার অনেক ভোটার বাদ পড়ে গেছে। এক্ষেত্রে তার নামটাও বাদ পড়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থীর নির্বাচনে সুযোগ দিতে হবে। কোন প্রার্থীর প্রতি নেগেটিভ এটিচ্যুড দেখাতে পারবে না। কোন প্রার্থীকে সামান্য ভুলের কারণে বাদ দেয়া হলে এতে কমিশনের মান মর্যাদা নষ্ট হয়। কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে আসবে। নির্বাচন কমিশনকে আইনে এ বিষয়ে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তাকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ দিলে নির্বাচন আরও কার্যকর হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাকে নির্বাচনে সুযোগ দেয়া উচিত। শুনানির এক পর্যায়ে সোনালী ব্যাংক কর্পোরেশন শাখা থেকে কয়েকজন কর্মকর্তাও মিন্টু ঋণ খেলাপী হিসেবে প্রমাণের জন্য কমিশনারের কাছে কাগজপত্র দাখিল করেন। এ সময় তারা বলেন, কে এ কিউ নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী ব্যাংকের প্রায় আড়াই কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এ ঋণের ব্যক্তিগত গ্যারান্টার আব্দুল আউয়াল মিন্টু। কিন্তু মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে শেষ দিনে ২ এপ্রিল ওই কোম্পানির পক্ষ থেকে এক কোটি ৯৭ লাখ টাকা নগদ অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি ৫১ লাখ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী আইনে মনোনয়নপত্র জমাদানের আগেই ঋণ পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। এ সময় মিন্টুর পক্ষে তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, গত ২২ মার্চ বাংলাদেশ থেকে যে সিআইবি রিপোর্ট দেয়া হয়েছে সেখানে ঋণ খেলাপীর তালিকায় মিন্টুর নাম নেই। তাছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাইকালে সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন আপত্তি তোলা হয়নি। এখন এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। এছাড়া শুনানিকালে রিটার্নিং অফিসে থেকে সহকারী দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা মিন্টু প্রার্থিতা বাতিলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, সিটি কর্পোরেশন আইন বিধিমালায় ১২ এক ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে মেয়র পদে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের অন্য কোন ভোটার মেয়র নির্বাচিত যোগ্যতা সম্পন্ন যে কোন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করিতে বা অনুরূপ কোন প্রস্তাব সমর্থন করিতে পারিবেন। আইনের এ বিধানবলে প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীকে অবশ্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হওয়ার কথা বলা হয়েছে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার রায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। এছাড়াও শনিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীদের আপীলের শুনানি হয় শনিবার সকাল থেকে। শুনানির প্রথম দিনে ২২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর আপীল নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
×