ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফিল্ম সিটি হচ্ছে, মাস্টারপ্ল্যান তৈরি ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৫ এপ্রিল ২০১৫

ফিল্ম সিটি হচ্ছে, মাস্টারপ্ল্যান তৈরি ॥ প্রধানমন্ত্রী

বাংলানিউজ ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও বেশি বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে তরুণ নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্রের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ফিল্ম নীতিমালা-২০১০ প্রবর্তন এবং ফিল্ম সিটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য ৫৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ীদের মাঝে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে চলচ্চিত্রশিল্পকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। চলচ্চিত্রে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও অনৈতিকতা তুলে ধরে প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একদল তরুণ সে অবস্থায় এগিয়ে এসেছে, চলচ্চিত্রশিল্পকে ধ্বংসের কিনারা থেকে তুলে এনেছে। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র আরও বেশি বেশি করে নির্মাণ করতে হবে। চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা লাভের পর রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি চলচ্চিত্রশিল্পও বিকশিত হতে থাকে। কিন্তু পঁচাত্তরের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পর পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। চলচ্চিত্রে নেতিবাচক পরিবর্তন চলে আসে। চলচ্চিত্রশিল্পের নান্দনিকতা নষ্ট করে এতে রুচিহীনতা, অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, অপরাধ, জঙ্গীবাদসহ বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হতো। আর এর প্রভাব পড়তে থাকে আমাদের শিশুদের ওপর। তিনি বলেন, এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল যে, মানুষ সপরিবারে বা বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে সিনেমা দেখতে হলে যাওয়ার ইচ্ছাও হারিয়ে ফেলেছিল। এ বৈরী অবস্থায় একদল তরুণ এগিয়ে আসে। তারা চলচ্চিত্রকে ওই অবস্থা থেকে বের করে আনে। এখন আবার নান্দনিকতা ফিরে আসতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে, এখন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে চলচ্চিত্র নগরী প্রতিষ্ঠার। দেশে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ যোগাতে বেড়েছে সরকারী অনুদান। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ, বিতরণ ও প্রদর্শন সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডকে শিল্প হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করতে প্রতি বছর ৬-৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারী অনুদান দেয়া হচ্ছে। বিগত ছয় বছরে এজন্য আট কোটি টাকার বেশি অনুদান দিয়েছে সরকার। সরকার শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান দেয়া হয়েছে। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণেও সরকার অনুদান দিচ্ছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ নিয়মিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। চলচ্চিত্রপ্রেমী ও দর্শকদের হলমুখী করার জন্য সিনেমা হলগুলোকে ডিজিটালাইজ করা ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০০টি সিনেমা হল এবং পর্যায়ক্রমে ৩০০টি হলকে ডিজিটাল করার বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন সিনেপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কর অব্যাহতির সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ সম্পূরক কর প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশীয় চলচ্চিত্রশিল্পে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মোট ২৫টি শাখায় ২৯ জন শিল্পী ও কলাকুশলী ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার বিজয়ীরা হলেনÑ আজীবন সম্মাননা : কবরী; সেরা অভিনেত্রী : মৌসুমী (দেবদাস); সেরা অভিনেতা : তিতাস জিয়া ( মৃত্তিকা মায়া); সেরা অভিনেত্রী : শর্মীমালা (মৃত্তিকা মায়া); সেরা পার্শ্ব অভিনেতা : রাইসুল ইসলাম আসাদ (মৃত্তিকা মায়া); সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী : অর্পণা (মৃত্তিকা মায়া); সেরা খল চরিত্র : মামুনুর রশীদ (মৃত্তিকা মায়া); সেরা কাহিনীকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক : গাজী রাকায়েত (মৃত্তিকা মায়া); সেরা সম্পাদক : মোঃ শরিফুল ইসলাম রাসেল (মৃত্তিকা মায়া); সেরা শিল্প নির্দেশক : উত্তম গুহ (মৃত্তিকা মায়া); সেরা চিত্রগ্রাহক : সাইফুল ইসলাম বাদল (মৃত্তিকা মায়া); সেরা শব্দগ্রাহক : কাজী সেলিম (মৃত্তিকা মায়া); সেরা পোশাক ও সাজসজ্জা : ওয়াহিদা মল্লিক জলি (মৃত্তিকা মায়া); সেরা মেকআপম্যান : আলী বাবুল (মৃত্তিকা মায়া); সেরা সঙ্গীত পরিচালক (যৌথ) : এ কে আজাদ (মৃত্তিকা মায়া) ও শওকত আলী ইমন (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী); সেরা গায়ক : চন্দন সিনহা (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী); সেরা গীতিকার : কবির বকুল (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী); সেরা সুরকার : কৌশিক হোসেন তাপস (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী); সেরা গায়িকা (যৌথ) : রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিন (দেবদাস); সেরা প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : শুনতে কি পাও; সেরা শিশুশিল্পী : স্বচ্ছ (একই বৃত্তে); শিশুশিল্পী বিশেষ শাখায় : সৈয়দা অহিদা সাবরিনা (অন্তর্ধান); সেরা চলচ্চিত্র : ফরিদুর রেজা সাগর ও গাজী রাকায়েত (মৃত্তিকা মায়া)।
×