ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৫ এপ্রিল ২০১৫

২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দুই কোটি মানুষ গণহ্যতার শিকার হয়েছিল তিনটি মহাদেশে। ওই হত্যাকা-ে সময়ের ব্যাপ্তি ছিল ৫ বছর। আর ১৯৭১ সালে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই ছোট্ট ভূখ-ে পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসররা ৯ মাসেই ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় হলেও তীব্রতার দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা সারাবিশ্বে প্রথম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যুদ্ধকালীন গণহত্যার ওপর। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বীরত্বগাঁথার ওপর। গণহত্যা, নির্যাতন ও বধ্যভূমির বিষয়টি আড়ালে পড়ে গেছে। যে কারণে স্বাধীনতা বিরোধীরা গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস দেখায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা সমুন্নত করতে গণহত্যার বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হওয়া প্রয়োজন। একাত্তরে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়েছিল। তাই ২৫ মার্চকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করতে হবে। পাশাপাশি গণহত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করাও সরকারের দায়িত্ব। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে ‘১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন নির্ঘণ্ট গ্রন্থমালার প্রকাশনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্ট এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিল্পী হাশেম খান এবং লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জাতিসংঘে আবেদন করা হবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি আদায়ে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালানো হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, বলতে সঙ্কোচ নেই, মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার সার্বিক চিত্র জানা থাকলেও সারাদেশের খ- খ- চিত্র আমারও জানা নেই। ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা এ বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন, এটি আশার কথা। সরকারও এ বিষয়ে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে। মানবতাবিরোধীদের বিচার কার্যক্রম একটি ট্রাইব্যুনালের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে শিল্পী হাশেম খান বলেন, মাত্র কয়েকজনের বিচারের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বিশাল গোষ্ঠীর বিচার কার্যক্রম শেষ হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা পরিচালনাকারীদের তালিকা তৈরি তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে, কত অল্প সময়ে এদেশের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শাহরিয়ার কবির বলেন, জাতিসংঘের এক হিসাবে ১৯৭১ সালে মে মাসের পর থেকে এ ভূখ-ে প্রতিদিন গড়ে ৯ থেকে ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ এ জঘন্য হত্যাকা-কে ধামাচাপা দিতে স্বাধীনতাবিরোধী মুক্তিযদ্ধকে ‘গ-গোল’ বলার ধৃষ্টতা দেখায়। এসব গণহত্যাকারীরা দেশে এখনও বহাল তবিয়তে আছে। তাদের বিচার না করলে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান জানানো হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেশের ১০টি স্থানে সংগঠিত গণহত্যার প্রামাণ্য তথ্য-উপাত্ত নিয়ে রচিত ১০টি বই মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের হাতে তুলে দেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক ট্রাস্টির সম্পাদক ডাঃ শেখ বাহারুল আলম। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দুটি কবিতা পড়ে শোনান কবি তারিক সুজাত।
×