ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘এ যেন নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি’

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৫ এপ্রিল ২০১৫

‘এ যেন নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্রিকেট যাঁদের রক্তের সঙ্গে মেশে, খেলাটিকে যাঁরা সত্যিকার অর্থে হৃদয়ে ধারণ করেন তাঁদের জন্য এ থেকে দূরে থাকার মতো কষ্টের আর কিছু নেই। মুক্তির আনন্দে বেদনার সেই সময়ের কথাই স্মরণ করলেন সাঈদ আজমল। বললেন, ‘একে কেবল নরক যন্ত্রণার সঙ্গেই তুলনা করা যায়।’ সাত মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার অনুমতি পেয়েছেন ফেব্রুয়ারি প্রথম সপ্তাহেই। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পর বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে নামার ঝুঁকি নেননি। প্রায় আট মাস পর বাংলাদেশ সফর দিয়ে প্রিয় ক্রিকেট মাঠে ফিরতে যাচ্ছেন সমসাময়িক ক্রিকেটের ভয়ঙ্কর স্পিনার। ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশে পা রাখা পাকিরা ১৭ তারিখ থেকে ৩ ওয়ানডে, ১ টি২০ ও ২ টেস্টের দিপক্ষীয় সিরিজে অংশ নেবে। ‘ক্রিকেট ছেড়ে থাকা আমার কাছে নরকে বসবাসের মতোই। গত আট মাস অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে এসেছি। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা তা বলে বোঝানো যাবে না। এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়।’ করাচীতে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন অবৈধ এ্যাকশন শুধরে ফের মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা ৩৭ বছর বয়সি ‘সেনসেশনাল’ স্পিনার সাঈদ আজমল। বিশ্বকাপ সামনে রেখে বিশ্বের আলোচিত বোলারদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। অথচ খেলতে পারেননি। সতীর্থরা যখন গ্রুপ পর্বে বাজে শুরুর পরও ঘুরে দাঁড়ায়, একের পর এক জয়ে জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে, আজমল তখন নিজ ঘরের ড্রয়িং রুমে টিভি সেটের সামনে। সময়টা স্মরণ করে তিনি আরও যোগ করেন, ‘৪৫টি দিন আমি টিভি থেকে চোখ সরাইনি। বিশ্বাস করুন মাঝে মধ্যেই মনে হয়েছে টিভি সেটের ভেতর ঢুকে পড়ি ও সতীর্থদের সঙ্গে অংশ নেই! আমি বুঝতাম অধিনায়ক আমাকে খুব মিস করছেন, বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে যখন প্রতিপক্ষ ব্যাটসমান আমাদের বোলারদের বেধড়ক পেটাতেন। আমি দলকে খুব মিস করেছি। প্রত্যেক ক্রিকেটারের জীবনের বড় স্বপ্নের বিশ্বকাপে খেলা। এটি চার বছর পর আসে। জানি না ভবিষ্যতে কি হবে। তবে আমি এখন দলের হয়ে আবার অবদান রাখতে চাই। চাই নিজের সেরা ফর্মে ফিরতে।’ আবার আন্তর্জার্তিক ক্রিকেটে ফিরে আসতে পেরে পরিবার ও বন্ধুদের ধন্যবাদ দিয়েছেন আজমল। ‘কঠিন সময়ে মানসিক সমর্থন দেয়ার জন্য প্রথমেই আমি আমার পরিবারকে ধন্যবাদ দিতে চাই। এরপর বন্ধু-বান্ধব ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি)। এঁদের সমন্বিত সমর্থন ছাড়া ফিরতে পারতাম না। কারণ নিষিদ্ধ হওয়ার পর এক সময় আমি ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার কথাও ভেবেছিলাম, তখন এঁরাই আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আরও একজনের কথা বিশেষভাবে বলতে হবে। তিনি সাকলাইন মুস্তাক। এ্যাকশন সংশোধনে সাকি ভাই আমাকে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।’ মাঠে ছন্দ ফিরে পেতে সমস্যা হবে না বলেও আত্মবিশ্বাসী তিনি। গত বছর আগস্টে শ্রীলঙ্কা সফরে কলম্বো টেস্ট ও ডাম্বুলায় ওয়ানডেতে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন সমসাময়িক ক্রিকেটের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্পিনার আজমল। ওই সিরিজেই গল টেস্টে তাঁর বোলিং এ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে রিপোর্ট করেন ফিল্ড আম্পায়র ইয়ান গোল্ড ও ব্রুস অক্সেনফোর্ড। ২৫ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এ্যাকশন পরীক্ষায় অংশ নেন এবং তাতে উৎরে যেতে ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ (বোলিং করা থেকে) হন ৩৭ বছর বয়সী ডানহাতি অফস্পিনার। দলের সেরা বোলারের নিষেধাজ্ঞায় হতভম্ব পিসিবি তার এ্যাকশন সংশোধনের জন্য সাবেক গ্রেট সাকলাইন নিয়োগ দেয়। কমিটি গঠন করে চলে নিবিড় অনুশীলন। ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক সাত দিন আগে আইসিসি কতৃক নিষেধাজ্ঞা মুক্ত হন আজমল। প্রায় আট মাস পর বাংলাদেশ সফরেই পুনরায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেতে যাচ্ছেন সাড়ে পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে ৩৫ টেস্টে ১৭৮ ও ১১১ ওয়ানডেতে ১৮৩ উইকেট শিকারি ঘূর্ণি তারকা। ৩৩ ম্যাচে ৬২ উইকেট নিয়ে ২০১৩ সালে সবার ওপরে ছিলেন আজমল। ওই বছর মাত্র ৮ টেস্টে শিকার ৩৯ উইকেট। সে ধারা অব্যাহত ছিল নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত। গত বছর প্রথম ছয় মাসে ৫ টেস্টে নেন ১৭ উইকেট। টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ তিন ভার্সনেই আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষদের কাতারে উঠে আসেন তিনি। বাংলাদেশ সফর দিয়ে দুরন্ত সেই আজমলকেই পেতে চাইবে পাকিস্তান।
×