ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের পাশেই আছেন ডালমিয়া

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৬ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশের পাশেই আছেন ডালমিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সব মুখে বলার প্রয়োজন পড়ে না, কিছু বুঝে নিতে হয়। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে দুই আম্পায়ারের ‘মোড়ল’ ভারতের হয়ে নির্লজ্জ পক্ষপাত, নিয়ম-ঐতিহ্য ভেঙ্গে আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালকে অনেকটা ‘ল্যাং’ মেরে চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার হাতে প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসনের ট্রফি তুলে দেয়াÑ ‘টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট’। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ভারতের আসন্ন বাংলাদেশ সফরের আকাশ ঘিরে এখন কালো মেঘ, এমন কি দু’দেশের জাতীয় রাজনীতির টানাপোড়েন পর্যন্ত আলোচনায়, তখনই কলকাতা সফররত বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৭ ক্রিকেট দলকে এক প্রতিভোজে আমন্ত্রণ জানালেন খোদ ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট জাগমোহন ডালমিয়া। ঘটনা বড় নয়, কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বকাপে ‘কলঙ্কিত’ সেই আম্পায়ারিং ও শ্রীনির ট্রফি বিতরণের সূত্র ধরে আইসিসি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন মুস্তফা কামাল। ইতোমধ্যে ম্যাচের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আনুষ্ঠানিক আবেদনও জানানো হয়েছে। কামাল পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তার অভিযোগ ভারত সরকার বা বিসিসিআইর বিপক্ষে নয়, শ্রীনি ও আইসিসিতে তার দোসরদের বিপক্ষে, যারা ক্রিকেটের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দিতে চাইছেন। ওদিকে এক সময়ের বন্ধু শ্রীনির সঙ্গে ডালমিয়ার চলছে চরম অন্তর্দ্বন্দ্ব। বিসিসিআইয়ে ক্ষমতার বাইরে থেকেও ভারতের বাংলাদেশ সফর বাতিল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রীনি! স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ঠিক এই অবস্থায় ডালমিয়ার বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৭ দলকে প্রীতিভোজে আমন্ত্রণ বাংলাদেশের প্রতি তার বন্ধুবৎসল মানসিক সমর্থনেরই বহির্প্রকাশ। ডালমিয়ার ঘনিষ্টজনরা অবশ্য বিতর্ক প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্কের দিকটাই তুলে ধরেছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ডালমিয়ার সম্পর্কটা অনেক পুরনো এবং সেটি এখনও দারুণভাবে বলবৎ আছে। ‘শ্রীনি-কামাল’ দ্বন্দ্ব তাতে এতটুকু প্রভাব ফেলেনি। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৭ দল গত ১৭ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ সফর করে আসছে। ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েসন অব বেঙ্গলের (সিএবি) অনুর্ধ-১৭ দলও বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে নিয়মিতই বাংলাদেশ সফর করে থাকে। কিন্তু এবার এই সফর উপলক্ষে আয়োজিত নৈশ্যভোজে বিসিসিআই সভাপতির উপস্থিতি যে সাধারণ ঘটনা নয়, স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই সেই দিকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। প্রীতিভোজে বাংলাদেশের আগামীর মুশফিক-তামিমদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আইপিইলে কলকাতা নাইটরাইনডার্সের হয়ে খেলতে বর্তমানে কলকাতায় অবস্থানরত ‘সুপার হিরো’ সাকিব আল হাসানও। দুই বাংলার কিশোর ও ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব ডালমিয়ার সঙ্গে দারুণ এক আনন্দঘন সময় কাটিয়েছেন বিশ্বের অন্যতমসেরা এই অলরাউন্ডার। মাঠের বাইরে যখন জুলুম-অত্যাচার করে যাচ্ছেন আইসিসির ‘ডাইনোসর’ শ্রীনিবাসন, তখন সিবিএ অনুর্ধ-১৭ দলকে তিনটি তিন দিনের ম্যাচে ২-১ এ হারিয়েই প্রীতিভোজে হাজির হয় বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৭’র সদ্যসরা! ‘শ্রীনি-কামাল’ সম্পর্ক যতটাই খারাপ হোক, চমৎকার এই আয়োজনে ডালমিয়া ঠিকই বুঝিয়ে দিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্কটা আছে আগের মতেই। বিতর্কিত বিষয়ে অবশ্য নিজ মুখে কিছুই বলেননি, তবে উপমহাদেশের তুখোড় এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ভোজের আয়োজন করেই অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন! সব কিছু কি মুখ খুলে বলতে হয়, অনেক কিছু বুঝে নিতে হয়! বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তিতে ডালমিয়ার অবদান দেশের মানুষ এখনও কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণ করেন। ক্রিকেট বিশ্বও তা ভাল করে জানে। ২০০০ সালের কথা। মাঠের পারফর্মেন্সে এক-আধটু ঝলক দেখালেও টেস্টের অভিজাত ক্লাবে নাম লেখানোর মতো অবকাঠামো, অর্থনৈতিক সামর্থ্য তখনও বাংলাদেশের হয়ে ওঠেনি। বড় শক্তি ছিল উন্মাদনায়ম গ্যালারি, অগণিত ক্রিকেটপাগল মানুষ আর ডালমিয়াদের মতো ‘নিখাদ’ বন্ধু। কলকতায় জন্ম নেয়া ৭৪ বছর বয়সী ডালমিয়া বর্তমানে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট বোর্ড ও ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি)’র প্রেসিডেন্ট। যিনি ১৯৯৭-২০০০ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির প্রেসিডেন্টেরও দায়িত্ব পালন করেন, ঠিক যে সময়টায় টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। মজার বিষয়, সেটাও ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমল। এলিট ক্লাবের সদস্যপদ পেতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন তৎকালীন বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। ডালমিয়ার আন্তরিক সমর্থন ছাড়া বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়া যে প্রায় অসম্ভব ছিল, তখনকার বোর্ড কর্তাদের অনেকে এখনও তা নির্দ্ধিদায় স্বীকার করেন। ‘শ্রীনি-কামাল’ দ্বন্দ্বের মাঝে সেই ডালমিয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী ক্রিকেট দলকে প্রীতিভাজে আমন্ত্রণ জানিয়ে আরও একবার ভালবাসার নিদর্শনই স্থাপন করলেন।
×