ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা কমায় বান কি মুনের স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৬ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা কমায় বান কি মুনের স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা কমে আসায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার বিরোধীপক্ষের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এছাড়া মহাসচিব বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও জানিয়েছেন। শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের দেয়া এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে দেয়া এই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রাজনৈতিক সহিংসতা কমে আসায় মহাসচিব বান কি মুন স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারবিরোধী দলের (বিএনপির) অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। দেশের অন্যতম দুই প্রধান নগরীতে আগামী ২৮ এপ্রিল মেয়র এবং কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য করতে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে নিজেদের মতপার্থক্য দূরীকরণে উভয় রাজনৈতিক পক্ষই একটি সুন্দর পথ খুঁজে বের করবে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ বরাবরের মতো বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও জানান বান কি মুন। এর আগেও একাধিকবার বাংলাদেশে চলমান হরতাল-অবরোধে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। মহাসচিবের মুখপাত্র ডুজারিক জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে সহিংসতা এবং প্রাণহানিতে জাতিসংঘ মহাসচিব খুবই উদ্বিগ্ন। এছাড়া বাংলাদেশ জাতিসংঘের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার উল্লেখ করে ওই মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের স্থিতি ও ইতিবাচক উন্নয়নের জন্য মহাসচিব ব্যক্তিগতভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি সারা দেশে লাগাতার অবরোধের ডাক দেয়ার পর প্রতিদিনই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। নাশকতার এসব ঘটনায় এরইমধ্যে আগুনে পুড়ে অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় একাধিকবার জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা আয়োজনে জাতিসংঘের যে কোন উদ্যোগকে স্বাগত জানাবেন তারা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে সহিংসতা নিরসনের লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট পাঠানো চিঠিতে বান কি মুন সাম্প্রতিক বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থে চলমান অস্থিরতার অবসান ঘটানো জরুরী বলে মত দেন। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ২০১৩ সালেও শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন। একই আহ্বান জানাতে তিনি দুই নেত্রীকে টেলিফোনও করেন। বান কি মুনের দূতিয়ালিতে সে সময় দুই দফা ঢাকা সফর করেন অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো। ঢাকায় এসে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা বসে এই সহকারী মহাসচিব সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার তাগাদা দিয়ে যান। বান কি মুনের দূতিয়ালির পরও সে সময় সংলাপ ব্যর্থ হয় এবং বিএনপির বর্জনে সহিংসতার মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর প্রায় এক বছর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নতুন আন্দোলনে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন, ফিরে আসে আগুন-বোমার নাশকতা। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই অবরোধের সঙ্গে হরতাল করছে ২০ দলীয় জোট। হরতাল-অবরোধের এই সময়ে পেট্রোলবোমা ও ককটেল হামলায় সারাদেশে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫০ জন, আহত হয়েছেন প্রায় ৬ শতাধিক লোক।
×